এগিয়ে থেকেও পারল না বাংলাদেশ। শনিবার বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত প্রীতি ফুটবল ম্যাচে বাংলাদেশ ১-২ গোলে হেরে যায় সিঙ্গাপুরের কাছে। লিগে বড় দলগুলোর গোল মিসের মহড়া চললেও প্রীতিম্যাচে গোল করে এগিয়ে নিয়েছিল। শুরুতে গোল পাওয়া মানে দলের স্পিরিট বেড়ে যাওয়া। অথচ মামুনুলদের দেখা গেল শুরুতে গোল দেওয়া ছাড়া ম্যাচে আর কোনো নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে পারেননি। জিতলে কোনো কথা উঠত না। কিন্তু শুরুতে গোল করেও পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে মাঠ ছেড়েছে। ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে সহকারী কোচ সাইফুল বারী টিটু ও অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম বলেছিলেন, দলে ফিটনেসের কোনো ঘাটতি নেই। সবাই সুস্থ। কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্স তা বলে না। পুরো দলকেই ক্লান্ত মনে হয়েছে। কারো কারো অবস্থা এতটাই করুণ ছিল যে তাদেরকে কোচ তুলে নিলে বেঁচে যায়। কোচ ক্রুইফ এমনিতেই অসুস্থ। ম্যাচ শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে খুব একটা কথা বলেননি। কিন্তু তিনি যে শিষ্যদের পারফরম্যান্সে ভীষণ বিরক্ত তা তার চেহারায় ফুটে উঠছিল।
লক্ষ্য করলে দেখা যাবে ম্যাচের গতি আনতে একাধিক তারকা ফুটবলারদের পরিবর্তন করেছেন। যা সচারচর দেখা যায় না। কিন্তু ম্যাচ আর নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। এটা ঠিক বাংলাদেশ অসংখ্য আক্রমণ চালিয়েছে কিন্তু তা ছিল পরিকল্পনাহীন। এমন কি বাংলাদেশ যে দুটো গোল হজম করেছে ডিফেন্ডাররা একটু সতর্ক থাকলেই তা রুখে দেওয়া যেত। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে সিঙ্গাপুরের অবস্থান ১৬২ আর বাংলাদেশের ১৬৯। খুবই কাছাকাছি বলা যায়। শক্তির দিক দিয়ে সমান হলেও সিঙ্গাপুর এতটা গুছিয়ে ফুটবল খেলল কিভাবে? তাদের আক্রমণে সৌন্দর্য থাকলেও বাংলাদেশ পোস্টের সামনে গেলে সব শেষ। পাসিংও ঠিকমতো হচ্ছে না। আগামীকাল আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রীতিম্যাচে লড়বে। আফগানরা সাবেক সাফ চ্যাম্পিয়ন। তবে গত এশিয়ান গেমসে আফগানিস্তানকে হারাতে সক্ষম হয়েছিল বাংলাদেশ। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে তাদের অবস্থান ১৩৫। সেই হিসেবে সিঙ্গাপুরের তুলনায় আফগানিস্তানকে শক্তিশালী বলা যায়। তাহলে কি মামুনুলরা আরেকটা হারের জন্য অপেক্ষা করছেন।
দুটো প্রীতিম্যাচের মূল উদ্দেশ্য বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে নামার আগে ফুটবলারদের পারফরম্যান্স যাচাই করা। দলীয় ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবু বলেন, প্রীতিম্যাচে জয় পেলে ভালো। হারলেও দুশ্চিন্তার কারণ নেই। কেননা এখানে লক্ষ্য থাকে খেলোয়াড়দের ভুল ত্রুটি চিহ্নিত করে আসল লড়াইয়ে নামানো। ভুল কোথায় কোথায় হচ্ছে এ ব্যাপারে বাবু কিছু বলতে পারেননি। তিনি বলেন, এটা কোচের কাজ। আসলে ভুল শব্দটা বাংলাদেশের অভিধানে আছে কি না তা বলা মুশকিল। থাকলে ফুটবলে এই করুণ চেহারা বার বার ধরা পড়বে কেন? দুই ম্যাচ দেখে কোচ শিষ্যদের কিভাবে তৈরি করবেন তা তিনিই ভালো জানেন। বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব একেবারে দ্বারপ্রান্তে। ১১ জুন কিরঘিস্থান ও ১৬ জুন ঢাকায় তাজাকিস্তানের বিপক্ষে লড়তে হবে। গ্রুপে আবার জর্ডান ও এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াও আছে। হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে পদ্ধতি। অর্থাৎ এক দলের বিপক্ষে দুটো করে ম্যাচ খেলতে হবে। সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ কিছুদিন আগে বলেছিলেন, ফলাফল যাই হোক অনেক আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা বাড়বে। যা থেকে ফুটবলাররা উপকৃত হবেন। কিন্তু এ কথাতো সেই ১৯৭৩ সাল থেকে শোনানো হচ্ছে। ৪২ বছরের অভিজ্ঞতা কি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। ফুটবলে বিশ্বকাপতো দূরের কথা এশিয়ান পর্বের চূড়ান্ত পর্ব খেলাটা স্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবার অনেক দিন পর বাংলাদেশ সরাসরি বাছাই পর্ব খেলছে। চূড়ান্ত পর্বে যাবে এ প্রত্যাশা কেউ করছেন না। কোচ ক্রুইফ তাই বাস্তবতার কথা চিন্তা করে বলেছেন তার টার্গেট গ্রুপে তৃতীয় স্থানে থাকা। আসলে এটাওতো কঠিন মনে হচ্ছে। লিগ ও সিঙ্গাপুরের বিপক্ষে তারকাদের পারফরম্যান্স খুবই হতাশাময়। ফিটনেসহীন মামুনুলরা বাছাই পর্বে কীভাবে কতদূর যাবেন সেটাই এখন দেখার বিষয়। অবশ্য ফল যতই খারাপ হোক না কেন কর্মকর্তাদের কোনো যায় আসে না। ঘুরে ফিরে তারা একটাই কথা বলবেন, এমন অভিজ্ঞতা ফুটবল উন্নয়নে কাজে আসবে। আসলে এই কাজটা যে কি তা অদৃশ্যই থেকে যাচ্ছে।