বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ( বিসিবি) সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি পদে কে জেড ইসলাম দায়িত্ব পালন করেছেন ৭ বছর। তার দায়িত্বকালেই প্রবর্তিত হয় স্কুল ক্রিকেট প্রতিযোগিতা। নিজের প্রতিষ্ঠান 'নির্মাণ' এর পৃষ্ঠপোষকতায় স্কুল ক্রিকেট ছড়িয়ে দিয়েছিলেন সারা দেশে। এজন্য জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারও পান। বিসিবি'র সভাপতি পদে দায়িত্ব পালনকালে ঘরোয়া ক্রিকেটের সব আসরকে স্পন্সরশিপের আওতায় এনে নুতন ধারা সংযোজন করেছেন।
তার ব্যক্তিগত চেষ্টায় ইমরান খানের নেতৃত্বে ওমর কোরেশি একাদশের ব্যানারে পাকিস্তানের টেস্ট দল বাংলাদেশ সফর করেছে। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল রাষ্ট্রীয় অতিথির মর্যাদায় পাকিস্তান সফর করেছে তার আমলে। আইসিসি স্বীকৃত ওয়ানডে মর্যাদার আসরে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অভিষেক হয়েছে ১৯৮৬ সালে, এশিয়া কাপ ক্রিকেটে অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে, সেখানেও অবদান কে জেড ইসলামের। পেশায় চার্টার্ড একাউন্টেন্ট হয়েও ক্রিকেটের প্রতি গভীর ভালোবাসার নজির সৃষ্টি করেছেন তিনি। বিসিবি'তে না থেকেও নির্মাণ স্কুল ক্রিকেটের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত। ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি পদ থেকে সরে যাওয়ার পর নিজের পকেটের টাকায় ১৯৮৯ সালে নির্মাণ স্কুল ক্রিকেটে নির্বাচিত সেরাদের ইংল্যান্ডে পাঠিয়ে ওই দলটিকে এশীয় যুব ক্রিকেটের জন্য প্রস্তুত করতে সহায়তা করেছেন । নির্মাণ স্কুল ক্রিকেট থেকে নির্বাচিত ক্রিকেটারদের নিয়ে নির্মাণ স্কুল একাদশ তৈরি করে সেই দলটিকে নিবিড় পরিচর্যা করেছেন। দ্বিতীয় বিভাগ থেকে পর্যায়ক্রমে প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে উন্নীত করেছেন তিনি দলটিকে। আমিনুল ইসলাম বুলবুল, হাবিবুল বাশার সুমন, খালেদ মেহমুদ সুজন, নাইমুর রহমান দুর্জয়-বাংলাদেশ জাতীয় দলের এই চার সাবেক অধিনায়ক নির্মাণ স্কুলের আবিষ্কার। জাভেদ ওমর বেলিম, আনিসুর রহমান, সেলিম শাহেদ, এনামুল হক মনি, মোহাম্মদ আলীদের বাংলাদেশ পেয়েছে নির্মাণ স্কুল ক্রিকেটের বদৌলতে। প্রথম বিদেশি কোচ হিসেবে পাকিস্তানের এক সময়ের ফাস্ট বোলার মোহাম্মদ ফারুক এবং তার সহকারী মোহাম্মদ সাবি্বরকে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল পেয়েছে, সেখানেও তাদের সব ব্যয়ভার বহন করেছেন কে জেড ইসলাম। আইসিসি ট্রফিতে বাংলাদেশ দলের অংশগ্রহণের পেছনে যাবতীয় ব্যয় করেছেন তিনি।
জীবন সায়াহ্নে দাঁড়িয়ে ৮০ উর্ধ্ব এই সংগঠক লিখেছেন আত্দজীবনীমূলক বই 'ক্রিকেটের নির্মাণ'। এই বইটিতে অনেক দুর্লভ ছবি, রেফারেন্স এবং পেপার ক্লিপিংস সংযুক্ত হয়েছে। বইটি সম্পাদনা করেছেন ক্রীড়া সাংবাদিক শামীম চৌধুরী। গতকাল বাংলাদেশ অলিম্পিক ভবনের অডিটোরিয়ামে এই বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান হয়েছে। এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এসিসি'র বিদায়ী সিইও সৈয়দ আশরাফুল হক কে.জেড ইসলামের বইয়ের উপর আলোচনা করতে যেয়ে আবেগে কেঁদে ফেলেছেন। তথ্যনির্ভর বইটির ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। বইটির উপর আলোচনায় বিশেষ অতিথি প্রবীণ ক্রীড়া সাংবাদিক কামরুজ্জামান কে জেড ইসলামকে দুঃসময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটের দেবদূত হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বইটির উপর আলোচনা করেছেন সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হীরা, সাবেক জাতীয় ক্রিকেটার এ এস এম ফারুক, ইউসুফ বাবু এবং তানজীব আহসান সাদ।