বৃহস্পতির ছোঁয়ায় বাংলাদেশের ক্রিকেট এখন গগনচুম্বী। মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহিমরা যেখানেই হাত দিচ্ছেন, সোনা ফলছে তাতে। বিপরীত চিত্রও রয়েছে। ইনজুরির থাবায় আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরাতে হয়তো পারেনি, কিন্তু টালমাটাল করে ছেড়েছে দলকে। বিশ্বকাপ থেকে শুরু করে ভারত সিরিজ পর্যন্ত টাইগারদের পেছন পেছন সাফল্যের সঙ্গে দৌড়াচ্ছে ইনজুরিও। ইনজুরির তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন টাইগার ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি ও মাহামুদুল্লাহ রিয়াদ। তালিকায় রয়েছেন টাইগার টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবালও। ইনজুরির এই ধাক্কা সামাল দিয়েই ভারতের বিপক্ষে লড়তে হবে টাইগারদের।
বিশ্বকাপ ক্রিকেট চলাকালীন নেলসনে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ফিল্ডিং করার সময় কাঁধে আঘাত পেয়েছিলেন ওপেনার এনামুল হক বিজয়। আহত হয়ে ছিটকে পড়েছিলেন বিশ্বকাপ থেকে। এনামুলের অভাব বোঝা যায়নি পরে। এনামুলকে ছাড়াই কোয়ার্টার ফাইনাল খেলে টাইগাররা। অবশ্য বিশ্বকাপের আগে জরুরি ভিত্তিতে হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করেন তামিম। অস্ত্রোপচার না করলে বিশ্বকাপ খেলা সম্ভব হতো না বাঁ-হাতি ওপেনারের। সফল বিশ্বকাপ শেষে দেশে ফিরেন মাশরাফিবাহিনী। প্রস্তুতি নেন পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার। কোনো রকম ইনজুরি ছাড়াই শেষ করে ওয়ানডে সিরিজ। কিন্তু টেস্ট সিরিজ শুরু হতেই আঘাত হানে ইনজুরি। খুলনা টেস্টে মোহাম্মদ শহীদের বল ধরার সময় আঙ্গুলে ব্যথা পান মুশফিক। এরপর আর কিপিং করেননি টেস্টে। ইমার্জেন্সি কিপার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ইমরুল কায়েশ। অবশ্য খুলনায় ইনজুরিতে পড়েন পেসার রুবেল হোসেনও। ফলে মিরপুরে তাকে দেখা যায়নি। মিরপুর টেস্টে পুরোপুরি সুস্থ না হয়ে কিপিং করেছেন মুশফিক। কিন্তু এ টেস্টে সবচেয়ে বড় ইনজুরিতে পড়েন পেসার শাহাদাত হোসেন রাজীব। ম্যাচের প্রথম দিনের প্রথম ওভারেই ইনজুরিতে পড়েন রাজীব। দুই বল করার পর উপর হয়ে পড়ে যান। এরপর লাঞ্চ বিরতিতে ফের আঘাত পান। ফলে টেস্টে আর খেলা হয়নি। এখন ৬ মাস মাঠের বাইরে। তার অভাবে পরিকল্পনা একেবারে পাল্টে যায় বাংলাদেশের।
এসব ইনজুরি নিয়েই সামনে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেট। ভারতের বিপক্ষে ক্রিকেটীয় লড়াইয়ে নামার জন্য পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছে টাইগাররা। ঠিক তখনই ইনজুরির ভয়াল থাবা দেয় টাইগারদের ওপর। বাসের ধাক্কায় রিকশা থেকে পড়ে আহত হন মাশরাফি। যদিও আঘাতটি গুরুতর নয়। তারপরও অধিনায়কের এমন আহত ১৮, ২১ ও ২৪ জুনের তিনটি ওয়ানডে ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরাতেও পারে! তবে আশার কথা হচ্ছে, আহত হলেও ওয়ানডে সিরিজ খেলায় কোনো সমস্যা হবে না মাশরাফির। কিন্তু স্লিপ ফিল্ডিং করার সময় বাঁ-হাতের তর্জণীতে চিড় ধরায় সিরিজই শেষ হয়ে গেছে মাহামুদুল্লাহ রিয়াদের। সুস্থ হতে তাকে চার সপ্তাহ মাঠের বাইরে থাকতে হবে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে দেখা যাবে মাহামুদুল্লাহকে।
বিশ্বকাপের আগে হাঁটুতে অস্ত্রোপচার করেছিলেন তামিম। তখনই তাকে জানানো হয়েছিল আরও একটি অস্ত্রোপচার দরকার হবে তার হাঁটুতে। সেই সমস্যা নিয়ে বিশ্বকাপ খেলেছেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেছেন এবং ডাবল সেঞ্চুরি, সেঞ্চুরি করে রান-বন্যায় ভেসেছেন। খুলনায় দ্বিতীয় ইনিংসে খেলেন ২০৬ রানের ইনিংস এবং ওয়ানডে সিরিজে টানা দুই সেঞ্চুরি করে বিস্ময়ের জন্ম দেন তামিম। ইনফর্ম তামিমের হাঁটু এখনো পুরোপুরি ঠিক হয়নি। তাতে টিউমার রয়েছে বলে শোনা যায়। মালয়েশিয়ায় এমআরআই করার পর ডাক্তার তেমনই জানান। তামিমকে পুরোপুরি সুস্থ হতে অস্ত্রোপচার করতে হবে হাঁটুতে। হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের পর অস্ত্রোপচার করতে পারে হাঁটুর।
এসব ইনজুরিকে সঙ্গী করে ১০ জুন ময়দানী লড়াইয়ে নামছে টাইগাররা। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে উজ্জীবিত মাশরাফিদের টার্গেট সিরিজ জয়। এখন শুধু তারই অপেক্ষা। তাতে হয়তো পারফরম্যান্স নয়, বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে ইনজুরি।