যাকে বলে রুদ্ধদ্বার বৈঠক! মাশরাফি বিন মর্তুজা, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবালরা কাল একসঙ্গে বসে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন বিসিবির বোর্ড রুমে। কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহে, বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক, সহকারী কোচ রুয়ান কালপাগে ছাড়া অন্য কারও ঢোকার অনুমতি ছিল না বৈঠকে। দরজা-জানালা বন্ধ করা এয়ার কন্ডিশনের বোর্ড রুমে ক্রিকেটাররা আসন্ন ভারত সিরিজ নিয়ে নিজেদের মধ্যে শুধু আলোচনাই করেননি, ভারতের ব্যাটিং ও বোলিং নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার বিশ্লেষণও করেন। সে সঙ্গে ভারত বধের রণকৌশলও ঠিক করে নেয় টাইগাররা।
বিসিএলের ফাইনাল রাউন্ডের পর ৩০ মে ফের অনুশীলনে নামেন মুশফিকুর রহিমরা। প্রচণ্ড গরমে টানা অনুশীলনের পর গত পরশু ছিল বিরতি। বিশ্রামের পুরোটা সময় শুয়ে বসে কাটিয়েছেন ক্রিকেটাররা। কাল ফতুল্লায় অনুশীলনের কথা ছিল। কিন্তু রুদ্ধদ্বার বৈঠকের জন্য আজ থেকে ফতুল্লায় অনুশীলনের সিদ্ধান্ত নেন কোচ। কাল অনুশীলন করেননি ক্রিকেটাররা। সকালে ঘণ্টা খানেক সময় জিম করেন। ফিটনেস অনুশীলনের পর বিসিবির বোর্ড রুমে বৈঠকে বসেন ক্রিকেটার, কোচরা। সেখানে হাতুরাসিংহে তার শিষ্যদের নিয়ে ২ ঘণ্টা সময় কাটান। সেখানে ভারতীয় ক্রিকেটারদের ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়। বিরাট কোহলির ব্যাটিং দেখানো হয় পেস বোলার রুবেল হোসেন, মোহাম্মদ শহীদ, আবুল হাসান রাজুদের। ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে বলা হয়, কোন কোন জায়গায় শক্তিশালী কোহলি। সঙ্গে সঙ্গে কোহলির দুর্বল দিকও দেখানো হয়। ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে জানানো হয়, কোহলি অফ সাইডে ইনসুইংয়ে দুর্বল। তবে বলে যদি একটু বেশি বাউন্স থাকে, তাহলে সেটা বোলারের জন্য পোয়াবারো। শুধু কোহলিই নন, রাহানে, চেতেশ্বর পুজারা, রোহিত শর্মাদের ব্যাটিংও দেখানো হয়। বোলারদের দেখানো হয়, ব্যাটসম্যানদের শক্তিশালী ও দুর্বল দিকগুলো। সাফল্য পেতে সেসব মেনেই বোলিং করতে বলা হয়েছে রুবেল, শহীদ, রাজুদের। সব ভারতীয় ব্যাটসম্যানই শরীর বরাবর ধেয়ে আসা বোলিংয়ের বিপক্ষে একটু নড়বড়ে। তাই প্রতি ওভারেই একটি করে বাউন্সার মারার পরিকল্পনা করেছেন টিম ম্যানেজমেন্ট। বোলারদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে প্রতি ওভারে বাউন্সার মারতে। উইকেট যদি ব্যাটিং সহায়ক হয়, তাহলে পেসারদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তাই বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিক ও কোচ হাতুরাসিংহে ঠিক করে দিয়েছেন, অফ স্ট্যাম্পের বাইরে টানা বোলিং করতে। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে মোহাম্মদ শহীদ টানা অফ স্ট্যাম্পের বাইরে বোলিং করেছেন। তাতে সাফল্যও পেয়েছেন এই ডান হাতি পেসার। শুধু পেসার নয়, স্পিনারদেরও ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়েছে। ফুটেজ দেখিয়ে বলা হয়েছে, ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা কোন শটস খেলেন সাবলীলভাবে। রায়না, কোহলি, শর্মা, রাহানেরা কোন কোন শটস খেলতে যেয়ে বিপাকে পড়েন। কোন জায়গায় বল ফেললে তাদের খেলতে অস্বস্তি বোধ করেন, সেসব পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। কোহলি স্পিনের বিপক্ষে অফ সাইডে শক্তিশালী। সুইপ শট কম খেলেন এবং মিড উইকেটে দুর্বল জানানো হয় সাকিব, তাইজুল ইসলাম, জুবায়ের রহমান লিখন, শুভাগত হোমদের।
প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের শক্তিশালী দিক, দুর্বল দিক দেখিয়ে কোথায় কোথায় বোলিং করতে হবে, সেসব যেমন জানানো হয়েছে ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে। ঠিক একইভাবে রবীচন্দন অশ্বিন, উমেশ যাদব, বরুন অ্যারন, হারভজন সিং, ভুবনেশ্বর কুমারদের বোলিংয়ের কোন দিকটা শক্তিশালী এবং কোন দিকটা দুর্বল-এসবও টাইগার বাটসম্যানদের জানানো হয় কালকের বৈঠকে। রবীনচন্দন অশ্বিনের বোলিংয়ের মূল দিক ফ্ল্যাট এবং উভয় দিকে টার্ন। তাকে সোজা খেলতে বলা হয়েছে তামিম, মুশফিক, সাকিবদের। হারভজনের বলে টার্ন ছাড়াও বাউন্স বেশি। দুসরাও মারেন। এসব বুঝার জন্য হারভজনের কব্জির দিকে নজর রাখতে বলেছেন কোচরা।
সব মিলিয়ে কাল ভারত বধের রণকৌশল সাজিয়েই নিলেন হাতুরাসিংহে। সেই কৌশল বাতলেও দিয়েছেন শিষ্যদের। এখন শুধু বাস্তবায়ন। এজন্য অপেক্ষায় থাকতে হবে ১০ জুন পর্যন্ত।