ম্যাচের আগের দিন সাধারণত অধিনায়ক আসেন মিডিয়াতে। এসে দলের পরিকল্পনার কথা বলেন। ভারতের বিপক্ষে আজ ইতিহাস গড়ার ম্যাচ। বাংলাওয়াশ করার ম্যাচ। ভারতীয় দলের সংবাদ সম্মেলনে যখন রবীচন্দন অশ্বিন আসলে বুঝা গেছে, মিডিয়ার মুখোমুখি হতে রাজি নন বলেই আসেননি ধোনি। নাসির হোসেনকে দেখে একটু অবাকই হতে হলো! দলের এমন সুসময়ে অধিনায়ক মাশরাফির আসার কথা। অথচ আসলেন নাসির। নাসিরের আসাই বলছে, সিরিজ জিতে কতটা নির্ভার বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করা নাসির কাল স্পষ্ট করে বলেছেন, তারা বাংলাওয়াশের টার্গেটে নামবে না। নামবেন জয়ের টার্গেটে। তাই বলে বাংলাওয়াশ চাচ্ছেন না, তা কিন্তু নয়।
প্রথম ম্যাচে জয় ৭৯ রানে। সেই জয়ের নায়ক তরুণ মুস্তাফিজুর রহমান। অভিষেক ম্যাচে ৫ উইকেট নিয়ে মুস্তাফিজ একাই বিধ্বস্ত করেছেন ভারতকে। দ্বিতীয় ম্যাচেও একই ফল। ভারত হারে ৬ উইকেটে। এবারও ভারতকে গুঁড়িয়ে দেন মুস্তাফিজ। টানা দুই ম্যাচে পাঁচ বা ততোধিক উইকেট(১১টি) নিয়ে বিশ্বরেকর্ড। আজও কি রহস্যময় 'কাটার' বোলিংয়ে দুর্বোধ্য হয়ে উঠবেন মুস্তাফিজ। আজও কি ভারতকে সহজেই হারাবে বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে দুর্দান্ত অফ স্পিন করা নাসির কাল মিডিয়ার মুখোমুখিতে জানান দলের টার্গেট কিন্তু বাংলাওয়াশ নয়, মাঠে নামবেন জিততে, 'আমাদের চিন্তাভাবনা আসলে বাংলাওয়াশ নয়। আমাদের চেষ্টা থাকবে ম্যাচটি জিততে। জেতার জন্যই খেলব, এটাই আমাদের মূল কথা।' জয়ের জন্য খেলবেন বলে বাংলাওয়াশ নেই মনের গহিনে? আছে। আছে বলেই ভারতীয় মিডিয়া কর্মীর প্রশ্নের উত্তরে ছোট্ট করে বলেন, 'অবশ্যই বাংলাওয়াশ চাই।'
এর আগে বাংলাওয়াশ করেছে কেনিয়া, জিম্বাবুয়ে, স্কটল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানকে। আজ জিতলেই সেই তালিকায় চলে আসবে ভারত। কাজটি সহজ নয় ভালো করেই জানেন নাসির। বেশ ভালো করেই জানেন নাসির 'ভারত মরণকামড় দিবে'। কার কি পরিকল্পনা, এটা আমাদের জানার বিষয় নয়। আমরা কি করব, সেটাই বড় বিষয়। প্রত্যেক ক্রিকেটারেরই দলে আলাদা আলাদা রোল আছে। আমরা শুধু নিজেদের রোলটুকু পালন করতে চাই।' রোলটুকু পালন করলে ম্যাচ জেতা সম্ভব এবং গত কয়েকটি সিরিজে যে ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছে, সেটা ধরে রাখতে চান নাসির। এটা ধরে রাখার জন্য যে একটি দল হয়ে খেলতে হয়, মাশরাফির নেতৃত্বে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল এখন তাই। 'টিম বাংলাদেশ' হয়ে খেলছে বলেই দলের জয়ের অভ্যাস তৈরি হয়েছে জানান নাসির, 'আমরা এই দলটা অনেকদিন ধরে খেলছি। আমি মনে করি আমরা এখন খুব একটা ভালো দল হয়ে উঠছি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, জয়ের একটি অভ্যাস তৈরি হয়েছে দলের। শেষ কয়েকটি সিরিজে আমরা ভালো খেলছি। এখন এই অভ্যাসটা ধারাবাহিকভাবে রাখতে চাইছি।'
জয়ের অভ্যাস তৈরি হওয়ায় এখন টানা জিতছে দল। ডিসেম্বর থেকে ঘরের মাঠে টানা ১০ ওয়ানডে জিতেছে মাশরাফি বাহিনী। বিশ্বকাপের পর দুই সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নের বিপক্ষে টানা পাঁচ জয়। জানুয়ারি থেকে ১১ ম্যাচে ৮ জয়ে টাইগারদের অবস্থান অস্ট্রেলিয়ার ঠিক পেছনে। এমন পরিসংখ্যান যেখানে দলের, তখন বাংলাদেশ কি বড় দল? নাসির কিন্তু মানতে রাজি নন বাংলাদেশ বড় দল, 'আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি। তাই বলে নিজেদের এখনই বড় দল বলে দাবি করছি না। আমরা হয়তো বড় বড় দলগুলোকে হারাচ্ছি। বড় দল হয়ে খেলতে আগামী দুই-তিন বছর ভালো ক্রিকেট খেলে বড় দলগুলোকে হারাতে হবে। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে আমরা এখন ঘরের মাঠে ক্রিকেট খেলছি।' ভারত ছাড়াও সবগুলো টেস্ট খেলুড়ে দেশকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। সিরিজ জিতেছে জিম্বাবুয়ে, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তানের বিপক্ষে। তারপরও প্রশ্ন উঠেছে, ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জেতাটাই কি সেরা? এটাই কি বড় দলে পরিণত হওয়ার টার্নিং পয়েন্ট? মানতে নারাজ অধিনায়কের প্রিয় অফ স্পিনার নাসির।
প্রথম ওয়ানডেতে বোলিং করেননি। প্রয়োজন হয়নি। দ্বিতীয়টিতে চার পেসার নিয়ে খেলেছে বাংলাদেশ। তারপরও অধিনায়ক মাশরাফি বোলিং করান নাসিরকে দিয়ে। টানা ১০ ওভার বোলিং করে উইকেট নেন ২টি। যার একটি আবার এই মুহূর্তের বিশ্বসেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলির। অপরটি শিখর ধাওয়ানের। তার বোলিং স্পেল ১০-০-৩৩-২। এমন বোলিংয়ের পর অধিনায়ক মাশরাফি চোখ বন্ধ করে পাস মার্কস দেন নাসিরকে। বলেন, দলের এক নম্বর অফ স্পিনার নাসির। অধিনায়কের এমন কমপ্লিমেন্টস শুনে হেসেই খুন (!) নাসির, 'বাঘ নেই বলে বিড়ালই রাজা! আমাদের দলে আর কোনো অফ স্পিনার নেই বলেই আমি সেরা।' নিজেকে সেরা না বললেও আগের চেয়ে বেশি অনুশীলন করছেন বলতে দ্বিধা করেননি, 'এটা সত্যি, আগের চেয়ে বেশি বোলিং করছি। আমিও কাজ করছি বোলিং কোচ রুয়ান কালপাগের সঙ্গে। সত্যি বলতে এখন আমি স্পিনটা বেশ উপভোগ করছি।'
তিন দশক ধরে খেলছে ওয়ানডে ক্রিকেট। কিন্তু এমন সু সময় এর আগে কখনো পার করেনি বাংলাদেশ। এখন যে মসৃণ পথে হাঁটছে বাংলাদেশের ক্রিকেট, তার অন্যতম কারিগর মাশরাফি। তার হাত ধরেই ধারাবাহিকভাবে জয় পাচ্ছে। সে দলের সারথী হয়ে বেশ ভলোই আছেন নাসির।