দেশ জুড়েই শুধু ক্রিকেটের উল্লাস ধ্বনি। হবেই না কেন, পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্তিশালী দলের বিরুদ্ধে ওয়ানডে ম্যাচে সিরিজ জয়। এতেই বিশ্বক্রিকেটে অন্যতম শক্তিশালী দলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। দেশতো উৎসবে মাতোয়ারা হবেই। কিন্তু দেশের ফুটবলকে ঘিরে শুধুই হতাশা। আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে কোনো সুখবর নেই। ব্যর্থতা যেন সঙ্গী হয়ে গিয়েছিল। এমন দুর্দশায় ফুটবলকে ঘিরে ক্রীড়ামোদীদের মধ্যে কোনো উত্তেজনা বা আগ্রহ ছিল না। অনেকে আক্ষেপ করে বলেন, ফুটবল বেঁচে আছে লাইফ সার্পোটে। যে কোনো সময় এর মৃত্যু ঘটতে পারে। না, ফুটবলেও শেষ পর্যন্ত আশার আলো জেগে উঠেছে। আর তা জ্বালিয়েছেন কিশোর ফুটবলাররা। জাতীয় দলের এত করুণ অবস্থা যে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ফাইনাল খেলাটা স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। চ্যালেঞ্জ কাপেও একই অবস্থা।
ফুটবল যখন অন্ধকারে বন্দি। তখনই বিজয়ের নিশানা উড়াল অচেনা-অজানা কিশোর ফুটবলাররা। নিজেদের মাটিতে এবার সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ চ্যাম্পিয়নশিপ হলেও কেউ কিন্তু তেমনভাবে আশাবাদী ছিলেন না। কারণ আগের দুই আসরে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছিল বাংলাদেশ। না, এ কিশোররাই বুঝিয়ে দিল ফুটবলেও ট্রফি জিতে উল্লাস করা যায়। ২০০৩ সালে ঢাকায় সাফ ও ২০১০ সালে এসএ গেমসে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ফুটবলে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াতে পারছিল না। সিলেটে শাওন, নিপুরা দুর্দান্ত পারফরম্যান্স প্রদর্শন করে বাংলাদেশকে প্রথমবারের মতো শিরোপা এনে দেন। তাও আবার অপরাজিতভাবে। গ্রুপ পর্বে শ্রীলঙ্কা ৪-০ ও ভারতের বিপক্ষে ২-১ গোলে জয়ী হয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই সেমিতে জায়গা করে নেয়। সেমিতে আফগানদের হারিয়ে স্বপ্নের ফাইনালে। প্রতিপক্ষ ছিল ভারত। তাই কিছুটা হলেও ভয় ছিল প্রতিশোধ নিতে ভারত মরণ-কামড় দেয় কিনা। না, ফাইনালে বাংলাদেশ ছিল আরও অপ্রতিরোধ্য ও দুরন্ত। শুরু থেকেই বাংলাদেশ ভারতকে দিশেহারা করে রাখে। যদিও নির্ধারিত সময় খেলা ১-১ গোলে ড্র ছিল। তবে টাইব্রেকারে শিরোপা জিতে পুরো দেশকে উৎসবে নাচিয়েছেন শাওনরা। কোচ জিলানী আবেগভরা কণ্ঠে বলেছেন তার ক্যারিয়ারে এটাই সেরা প্রাপ্তি।
এত গেল শাওনদের বিজয়ে কাহিনী। পেশাদার লিগ চ্যাম্পিয়ন শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবও দেশের বাইরে থেকে সাফল্য এনে দিয়েছে। কিরগিজস্তানে এএফসি কাপ বাছাই পর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরবর্তী রাউন্ডে উঠেছেন মামুনুলরা। যে কিরগিজদের কাছে ঢাকার মাঠে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশ বিধ্বস্ত হয়েছিল। সেখানে কিরগিজস্তানের মাটিতে কিরগিজ চ্যাম্পিয়নদের টপকিয়ে পরবর্তী রাউন্ডে যাওয়া শেখ জামাল নয় বাংলাদেশও গৌরবের। দুই সাফল্য অন্ধকারে থাকা ফুটবল আলোর মুখ দেখেছে। কিন্তু এই সাফল্য যেন ক্ষণিকের জন্য না হয়। কিশোরদের দিকে ভালোভাবে নজর দিতে হবে। এদের যে গতি তা ধরে রাখতে পারলে সামনে জাতীয় দল ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করবে তা নিয়ে সংশয় নেই। পুরো দায়িত্ব ফুটবল ফেডারেশনের। তারা মনোযোগী হলে ফুটবলে আরও বিজয় উৎসব হবে। ক্রিকেটের পাশাপাশি ফুটবলেও যদি সাফল্য অব্যাহত থাকে তা হলে দেশের ক্রীড়াঙ্গনের চেহারাও পাল্টে যাবে।