ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশীপে ফ্রান্স বনাম পর্তুগালের মধ্যকার ফাইনালে লড়াইটা ছিল মূলত দু'দলের সেরা দুই তারকা রোনালদো বনাম গ্রিজম্যানের মধ্যে। এমনকি স্টেডিয়ামে আসা দর্শকরাও দুই তারকার ব্যক্তিগত নৈপূণ্য দেখার জন্যও অধীর অপেক্ষায় ছিলেন। কিন্তু স্বাগতিক ফ্রান্স একি করলো! চোরাগোপ্তা আক্রমণে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার পন্থাই যেন বেছে নিল তারা। যার শিকার হয়ে চোখের পানিতে মাঠ ছাড়লেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা।
প্রতিপক্ষ পর্তুগালের সেরা তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে বাইরে পাঠিয়ে দিতে পারলেই যেন ম্যাচ অর্ধেক জেতা হয়ে যাবে তাদের। সেটাই করলো স্বাগতিক ফ্রান্স। কারণ সেমিফাইনালে এক রোনালদোর কাছেই যে পরাজিত হয় গ্যারেথ বেলের ওয়েলস। সেকথা মাথায় রেখেই কি না রোনালদোকে আঘাত করে বসলো ফ্রান্স। তখন সপ্তম মিনিটের খেলা চলছিল। মিডফিল্ড বরারবর বাম উইংয়ে রোনালদো বল পেলেন। সেটি নিয়ন্ত্রণে নেয়ার সময়ই পেছনে থেকে এসে সোজা তার হাঁটুতে আঘাত করে বসেন ফ্রান্সের পায়েত।
সঙ্গে সঙ্গেই হাঁটু ধরে শুয়ে পড়েন রোনালদো। তবে রেফারির চোখ এড়িয়ে যাওয়ায় খেলা চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। তখনও বোঝা যায়নি পরিস্থিতি এতটা গুরুতর। পরে বোঝা গেলো, রোনাদোর উঠে না দাঁড়ানোয়। এ সময় খেলা বন্ধ করে হালকা চিকিৎসা দিয়ে আবার মাঠে নামানো হয় রোনালদোকে। কারণ পর্তুগালও ভাবছিল, রোনালদো ছাড়া স্বপ্ন ছোঁয়া সম্ভব কি! কিন্ত রোনালদো যে পারছিলেন না। খুঁড়িয়েই যাচ্ছিলেন তিনি। বলের টাচ নিতে পারছিলেন না। কারও কাছ থেকে বল কেড়ে নেবেন, সেটাও সম্ভব হচ্ছিল না।
এর ৬ মিনিট পরই মাঠের মধ্যখানে বসে পড়েন রোনালদো। তার চোখে পানি। বোঝাই যাচ্ছিল তিনি আর পারবেন না। মাঠের বাইরে নিয়ে আবার চিকিৎসা করা হলো। আবারও মাঠে নামলেন তিনি। ১৭ মিনিটে দেখা গেলো আবারও খোঁড়াচ্ছেন রোনালদো।
২১তম মিনিটে গিয়ে আর পারলেন না। দৌঁড়াতে গিয়েই বসে পড়লেন। হাতে বাধা নেতৃত্বের আর্মব্যান্ড খুলে ছুঁড়ে মারলেন। বসে পড়েই শিশুর মত ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠলেন। দেশকে অন্তত ম্যচের শেষ পর্যন্ত টেনে নিতে না পারার দুঃখ তখন তার চোখে জল হয়ে ঝরছিল। শেষে ন্যানির হাতে আর্মব্যান্ড বেধে দিয়ে স্ট্রেচারে করে বের হয়ে গেলেন মাঠ থেকে। পরিবর্তে মাঠে নামলেন রিকার্ডো কোরেশমা। তবে ম্যাচের শেষে সেই কান্না আর থাকেনি রোনালদোর। কারণ এডারের একমাত্র গোলে ফ্রান্সকে কাঁদিয়ে প্রথমবারের মতো ইউরো শিরোপা জিতেছে যে পর্তুগিজরা। রোনালদোর জন্য এর চেয়ে বড় উপহার আর কি সতীর্থরা?
বিডি-প্রতিদিন/১১ জুলাই, ২০১৬/মাহবুব