শেষ ওভারে প্রয়োজন ১৫ রান। ক্রিজে মইন আলি থাকায় সম্ভাবনায় এগিয়ে ছিল ইংল্যান্ডই। কিন্তু অভিষিক্ত আমের জামাল দুর্দান্ত এক ওভারে পাল্টে দিলেন সব হিসাব। রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার ম্যাচে জিতে সিরিজে এগিয়ে গেল পাকিস্তান।
লাহোরে বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) পঞ্চম টি-টোয়েন্টিতে ৫ রানে জিতেছে বাবর আজমের দল। ১৪৫ রান তাড়ায় ১৩৯ রানে থমকে গেছে ইংল্যান্ডের ইনিংস। নাসিম শাহর অসুস্থতায় অভিষেক হয় ২৬ বছর বয়সী অলরাউন্ডার আমেরের। ২০তম ওভারে তার হাতেই বল তুলে দেন বাবর। দারুণ পরিণত বোলিংয়ে অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দেন আমের।
শেষ ওভারের প্রথম ২ বলে কোনো রান নিতে পারেননি মইন। পরের বল বেশ বাইরে করায় হয়ে যায় ওয়াইড। তৃতীয় বল জোনে পেয়ে ছক্কা মেরে পঞ্চাশে পৌঁছান বাঁহাতি অলরাউন্ডার। সমীকরণ নেমে আসে ৩ বলে ৮ রানে।
এই সময়েই যেন বের হয়ে আসে আমেরের সেরাটা। পরের দুইটি বল করেন ইয়র্কার, মইন নিতে পারেন একটি সিঙ্গেল। শেষ বলে ডেভিড উইলির সামনে সুযোগ ছিল ছক্কা মেরে টাই করার। কিন্তু আরেকটি ফুল লেংথ ডেলিভারিতে কিছুই করতে পারেননি তিনি। উল্লাসে মাতে গাদ্দাফি স্টেডিয়াম।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকে উইকেট হারায় পাকিস্তান। মোহাম্মদ রিজওয়ান ছাড়া আর কেউ দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে নিতে পারেননি দলকে। তেমন কোনো জুটি গড়তে পারেনি স্বাগতিকরা। সবচেয়ে বড় জুটি কেবল ৩০ রানের, গড়ে ওঠে রিজওয়ান ও ইফতিখার আহমেদের মধ্যে। এর বাইরে কেবল শান মাসুদের সঙ্গে রিজওয়ানের জুটি যেতে পারে বিশের ঘরে।
রিজওয়ান এক সময়ে দলকে দাঁড় করিয়েছিলেন ৩ উইকেটে ৮১ রানের ভালো অবস্থানে। এরপর দ্রুত উইকেট হারিয়ে সেই ভিত আর কাজে লাগাতে পারেনি পাকিস্তান। ইফতিখারের বিদায়ের পর বাজে শটে দ্রুত ফেরেন আসিফ আলি। এরপর মোহাম্মদ নাওয়াজ ও শাদাব খানের অহেতুক রান আউটে বিপদ আরও বাড়ে।
সেখান থেকে রিজওয়ান দলকে নিয়ে যান দেড়শ রানের কাছে। স্যাম কারানের ফুলটসে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেওয়া এই কিপার-ব্যাটসম্যান তিন ছক্কা ও দুটি চারে ৪৬ বলে করেন ৬৩ রান। তিনি ছাড়া দুই অঙ্কে যান কেবল ইফতিখার ও অভিষিক্ত আমের জামাল।
২০ রানে ৩ উইকেট নিয়ে ইংল্যান্ডের সেরা বোলার মার্ক উড। দুটি করে উইকেট নেন কারান ও ডেভিড উইলি।
রান তাড়ায় দ্রুতই দুই ওপেনারকে হারায় ইংল্যান্ড। এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন দাভিদ মালান। তাকে খুব একটা সঙ্গ দিতে পারেননি বেন ডাকেট ও হ্যারি ব্রুক। দারুণ বোলিংয়ে সফরকারীদের পাল্টা আক্রমণের সুযোগ দেননি পাকিস্তানের বোলাররা। নিয়মিত উইকেট নেওয়ার সঙ্গে বেধে রাখেন রানের গতি।
দলের বিপদ বাড়িয়ে দ্বাদশ ওভারে ৬২ রানে পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন মালান (৩৫ বলে ৩৬)। ইফতিখারের বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার পর রিভিউ নিয়েও কাজ হয়নি। পরের ওভারেই বিদায় নিতে পারতেন মইন আলি। শাদাবের অবিশ্বাস্য ব্যর্থতায় রান আউট থেকে বেঁচে যান বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। শুরুটা দারুণ করলেও নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি কারান। তাকে ফিরিয়ে অভিষেকে নিজের দ্বিতীয় বলেই উইকেটের দেখা পান আমের জামাল।
৬ রানে জীবন পাওয়া মইন টানেন দলকে। আশা জাগান জয়ের। তবে শেষটায় তাকে ছাপিয়ে ব্যবধান গড়ে দেন আমের। ৩৭ বলে চার ছক্কা ও দুই চারে ৫১ রানে অপরাজিত থাকেন ইংল্যান্ডের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক। শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) একই মাঠে হবে ষষ্ঠ টি-টোয়েন্টি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান: ১৯ ওভারে ১৪৫ (রিজওয়ান ৬৩, বাবর ৯, মাসুদ ৭, হায়দার ৪, ইফতিখার ১৫, আসিফ ৫, নাওয়াজ ০, শাদাব ৭, জামাল ১০, ওয়াসিম ৬*, রউফ ৮; ওকস ৪-০-৩০-১, উইলি ৩-০-২৩-২, উড ৪-০-২০-৩, কারান ৪-০-২৩-২, রশিদ ৪-০-৪১-০)
ইংল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৩৯/৭ (সল্ট ৩, হেলস ১, মালান ৩৬, ডাকেট ১০, ব্রুকস ৪, মইন ৫১*, কারান ১৭, ওকস ১০, উইলি ০*; নাওয়াজ ২-০-৯-১, ওয়াসিম ৪-০-৩২-১, রউফ ৪-০-৪১-২, শাদাব ৪-০-২৫-১, ইফতিখার ৪-০-১৬-১, জামাল ২-০-১৩-১)
ফল: পাকিস্তান ৫ রানে জয়ী
সিরিজ: ৭ ম্যাচের সিরিজে পাকিস্তান ৩-২ ব্যবধানে এগিয়ে
ম্যান অব দা ম্যাচ: মোহাম্মদ রিজওয়ান
বিডি-প্রতিদিন/আব্দুল্লাহ