ইংল্যান্ডের কোচ হিসেবে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ও অধিনায়ক হিসেবে স্টোকস দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই বদলে গেছে তাদের টেস্ট ক্রিকেটের ধরন। টেস্টের সংজ্ঞাটাই বদলে দিতে চাইছেন তারা। যেখানে খেলার একটাই মন্ত্র, আক্রমণ। ব্যাট করতে নামুক বা বল, শুরু থেকে আক্রমণের পথে যাচ্ছে ইংল্যান্ড। তার ফলও মিলেছে।
নতুন ধারার এই খেলায় ১৪টি টেস্টের মধ্যে ১১টি জিতেছেন স্টোকসরা। ১৪টি টেস্টের ২৮টি ইনিংসে মাত্র এক বারই প্রতিপক্ষকে অলআউট করতে পারেনি ইংল্যান্ডের বোলাররা। সেটি বার্মিংহ্যামে মঙ্গলবারের ইনিংস। দ্বিতীয় ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া দুই উইকেট থাকতে ম্যাচ জিতে গেছে।
টেস্ট বিশ্বকাপ জেতা অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ব্যাট করতে নেমে ম্যাচের প্রথম বলে চার মেরে নিজেদের মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন জ্যাক ক্রলি। টেস্ট যত গড়িয়েছে সেটা তত বেড়েছে। প্রথম দিন ৮ উইকেটে ৩৯৩ রানের মাথায় ইনিংস ঘোষণা করেছিল ইংল্যান্ড।
স্টোকস চেয়েছিলেন, সারা দিনের ফিল্ডিংয়ের ধকলের পরে শেষ বেলায় কয়েকটা ওভারে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটারদের চাপে ফেলতে। তবে ডিক্লেয়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়েছে। কিন্তু স্টোকস মনে করছেন তিনি ঠিক।
ইংল্যান্ড অধিনায়ক বলেছেন, আমরা আক্রমণাত্মক ক্রিকেট খেলতে চেয়েছিলাম। সেই কারণেই ডিক্লেয়ার করেছিলাম। অধিনায়কের পাশে দাঁড়িয়েছেন দলের সাবেক অধিনায়ক জো রুট। তার কথায়, একদম সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্টোকস। তার উপর আমাদের ভরসা আছে। ফলাফল যা-ই হোক, খেলার ধরন বদলাব না। আমরা এভাবেই খেলব।
রুট স্পষ্ট করে বলেছেন, আগামী দিনেও বাজবলই হবে তাদের খেলার ধরন। একটা ম্যাচে হেরেছি বলে নিজেদের পরিকল্পনা বদলে ফেলব না। আমরা একটা প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। টেস্ট খেলার একটা নতুন ধরন তৈরি করছি। তাতে হারতে হতেই পারে। দুঃখ হবে। কিন্তু সেখান থেকেও ভাল দিকটা নিয়ে পরের ম্যাচে খেলতে নামব। আবার এভাবেই খেলব।
ইংল্যান্ডের বাজবল দেখে মজা পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটার ডেভিড ওয়ার্নারও। তিনি বলেছেন, খুব দ্রুত খেলা হচ্ছিল। তারা দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা করছিল। কিন্তু দিনের শেষে এটা খেলা। সেখানে ফলাফলটাই আসল। তাই ওদের খেলায় ভয় না পেয়ে আমরা নিজেদের খেলাটা খেলেছি। আক্রমণ সামলে প্রতি আক্রমণ করেছি। তাই জিতেছি।
ইংল্যান্ডের ব্যাটাররা উইকেট ছুড়ে এসেছেন বলে মনে করেন ওয়ার্নার। তিনি বলেছেন, আমি তাদের অনেককে দেখলাম উইকেট ছুড়ে দিয়ে আসতে। তারা যে ধারার ক্রিকেট খেলতে চাইছে, সেখানে এটা হতেই পারে। তাতে অবশ্য আমাদেরই লাভ হয়েছে।
ইংল্যান্ডের নতুন ধারার এই খেলা মেনে নিতে পারছেন না ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক নাসের হুসেন। তার কাছে ফলাফলই আসল। হুসেন বলেছেন, হেরে বিনোদনের অজুহাত দেওয়ার কোনো মানে নেই। ইংল্যান্ড তো এর আগে নিউজিল্যান্ডেও হেরেছিল। দুটো ম্যাচই আমাদের জেতা উচিত ছিল। কিন্তু আমরা হেরেছি। এর কোনো অজুহাত নেই।
হুসেনের মতে, এর আগেও তো অস্ট্রেলিয়াকে ইংল্যান্ড হারিয়েছে। তখন তো বাজবল খেলার দরকার পড়েনি। তিনি বলেছেন, ২০০১ সাল থেকে তো আমরা ধ্রুপদী টেস্ট খেলেই অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছি। সেখানে তো বাজবল খেলতে হয়নি। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নদের সামনে আমরা এমনভাবে খেলছি, যেন ক্রমতালিকায় ১০ নম্বরে থাকা কোনো দলের বিরুদ্ধে খেলছি। তারেদকে জেতার সুযোগ করে দিয়েছি আমরা। তারা শুধু সেই সুযোগটা নিয়েছে।
বিডি প্রতিদিন/এমআই