গত এক দশকে মহাকাশ গবেষণায় বেসরকারি ও বাণিজ্যিক সংস্থার মধ্যে প্রতিযোগিতা তীব্র হয়েছে। মার্কিন উদ্যোক্তা ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স এই প্রতিযোগিতায় শীর্ষে রয়েছে। গত দুই বছরে স্পেসএক্স শতাধিক মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করেছে এবং একটি সুবিশাল ইন্টারনেট স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক গড়ে তুলেছে।
অন্যদিকে, অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোসের মালিকানাধীন ব্লু অরিজিন ও অ্যামাজন মহাকাশ জয়ের দৌড়ে নিজেদের উপস্থিতি বাড়াচ্ছে। শক্তিশালী নতুন রকেট ও স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে স্পেসএক্সের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করছেন বেজোস। মহাকাশে মানুষের উপস্থিতি নিয়ে দুজনেই বেশ আশাবাদী।
ইলন মাস্ক ২০০২ সালে স্পেসএক্স প্রতিষ্ঠা করেন। পুনর্ব্যবহারযোগ্য ফ্যালকন ৯ রকেট প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎক্ষেপণ খরচ কমিয়ে আনার জন্য স্পেসএক্স পরিচিতি পেয়েছে। ২০২৩ সালে স্পেসএক্স ১৩০টির বেশি মহাকাশযান উৎক্ষেপণ করেছে। স্পেসএক্সের স্টারলিংক স্যাটেলাইট নেটওয়ার্ক ২০১৮ সালে চালু হয়, যা প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে।
অন্যদিকে, জেফ বেজোসের ব্লু অরিজিন প্রতিষ্ঠার পর থেকে ধীরগতিতে কাজ করলেও, প্রতিষ্ঠানটি মহাকাশ পর্যটনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। স্পেসএক্সের ফ্যালকন ৯ রকেটের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে ব্লু অরিজিন তাদের নিউ গ্লেন রকেট তৈরিতে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করেছে। ৩২ তলা ভবনের সমান উঁচু এই রকেটটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য বুস্টারসহ নিয়মিত মহাকাশ অভিযানে ব্যবহার করা যাবে। নিউ গ্লেন রকেটটি শিগগিরই মহাকাশ অভিযানে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অ্যামাজনের প্রজেক্ট কুইপার মূলত স্টারলিংকের প্রতিযোগী হিসেবে কাজ করছে। ২০২৫ সাল নাগাদ ৩,২৩২টি উপগ্রহের স্যাটেলাইট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রজেক্ট কুইপার বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সেবা দিতে সক্ষম হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অ্যামাজন এই প্রকল্পে এখন পর্যন্ত ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে।
মহাকাশ অভিযানকে ইলন মাস্ক ও জেফ বেজোস ব্যবসার চেয়ে আরও বেশি কিছু বলে মনে করেন। মাস্ক এমন একটি ভবিষ্যৎ কল্পনা করেছেন, যেখানে মানুষ মঙ্গল গ্রহে উপনিবেশ স্থাপন করবে, পৃথিবীর বিপর্যয় থেকে মানুষকে রক্ষা করতে। স্পেসএক্সের পরবর্তী প্রজন্মের রকেট স্টারশিপ তৈরি করা হচ্ছে নতুন অভিযানের জন্য, চাঁদে মানুষের ঘাঁটি ও মঙ্গল গ্রহে উপনিবেশ স্থাপনের লক্ষ্যে।
অন্যদিকে, জেফ বেজোসও সৌরজগতের বিভিন্ন স্থানে বিশাল স্পেস স্টেশনে মানুষের বসবাসের স্বপ্ন দেখেন। তিনি মহাকাশে মানুষের উপস্থিতি বাড়াতে এবং মহাকাশ ভ্রমণকে সহজলভ্য করতে কাজ করে যাচ্ছেন।
মহাকাশ জয়ের এই প্রতিযোগিতা প্রযুক্তি উন্নয়ন ও মানবজাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল