মঙ্গলবার, ৫ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাবে কে?

জয়শ্রী ভাদুড়ী

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাবে কে?

রাজধানীর বিশৃঙ্খল সড়কে যানজট, দুর্ঘটনা নিত্যদিনের ঘটনা। চালক, যাত্রী-পথচারী কেউ আইন মানতে চান না। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কারও আগ্রহ নেই। নগরীর বিভিন্ন স্পট থেকে তোলা ছবি : রোহেত রাজীব ও জয়ীতা রায়

রাজধানীর নতুনবাজারে ফুটওভার ব্রিজের নিচে দাঁড়িয়ে রাস্তা পারের অপেক্ষায় হাশেম আলী। কেতাদুরস্ত পোশাক, রোদ চশমায় ঢাকা চোখে চেষ্টা করছেন দৌড়ে রাস্তা পার হওয়ার। কিছুক্ষণের মধ্যে বাস, প্রাইভেট কার, সিএনজি, মোটরসাইকেল ডিঙিয়ে গুলশান রোডে চলে আসেন তিনি। ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার না করে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বিরক্ত হয়ে বলেন, ফুটওভার ব্রিজে উঠব আবার নামব, সময় নষ্ট। রাস্তায় গাড়ি বেশি থাকায় গতি কম ছিল। পেশায় প্রকৌশলী হাশেম আলী দৈনিক এভাবেই রাস্তা পার হয়ে গুলশান-২ তে অফিস করেন বলে জানান।

রাজধানীর সড়কজুড়ে বিশৃঙ্খলা। বাস, ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল চালক এবং যাত্রীরা মানছেন না নিয়মকানুন। একই কোম্পানির বাসের যাত্রী তোলার দ্বন্দ্ব রাজধানীর সড়কে নিত্যদিনের চিত্র। আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় রাস্তায় ধাক্কাধাক্কিতে রং চটে লক্কড়ঝক্কড় চেহারা হয়ে যায় বাসগুলোর। যেখানে সেখানে থামিয়ে যাত্রী তুলতে গিয়ে যানজট তৈরি করে রাস্তায়। দৌড়ে বাসে উঠতে এবং নামতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় রাস্তায় চলছে বিশৃঙ্খলা। গত বুধবার কাকরাইল থেকে উত্তরা যেতে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন খাদিজা বেগম। ভিক্টর ক্লাসিক নামের একটি বাস সিগন্যাল থেকে ছেড়ে আসতেই থামার ইশারা দেন তিনি। কিন্তু বাস থামিয়ে কিছুটা গতি কমান চালক। খাদিজা বেগম এক পা রাখতেই স্পিড বাড়িয়ে দেন চালক। তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যান তিনি। অল্পের জন্য চাকায় পিষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা পান তিনি। কিন্তু পায়ে ব্যথা পেয়ে চিৎকার করে কাঁদতে থাকেন তিনি। প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান পথচারীরা। রাজধানীতে এ রকম ঘটনা ঘটছে হরহামেশা।

দুর্ঘটনা ঘটলে রাজধানীর গণপরিবহন নিয়ে আলোচনা হয়। কিছুদিন পর আবার আগের চিত্রে ফিরে আসে। দুর্ঘটনা ঘটলে ওই বাস বন্ধ ছাড়া কার্যত আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কুর্মিটোলায় জাবালে নূর পরিবহনের বাস ফুটপাথে উঠে দুই শিক্ষার্থীকে চাপা দিলে ওই বাস দুটির রুট পারমিট বাতিল করা হয়। পরে নাম পাল্টিয়ে ফেলেছে কোম্পানিটি। কিন্তু রাস্তার পরিস্থিতি বদলায়নি। এর পরে বিআরটিসি এবং স্বজন পরিবহনের বাসের রেষারেষির মধ্যে পড়ে হাত হারান তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাজিব হোসেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। রাস্তা পার হতে গিয়ে নর্দা এলাকায় সুপ্রভাত পরিবহনের একটি বাসের চাকায় পিষ্ট হন শিক্ষার্থী আবরার আহমেদ চৌধুরী। সুপ্রভাত পরিবহন এখন নাম পরিবর্তন করে রাস্তায় যাত্রী পরিবহন করছে।

ডিজিটাল দেশের অ্যানালগ সিগন্যাল মানেন না অধিকাংশ মোটরসাইকেল চালক। ট্রাফিক পুলিশ হাত দেখিয়ে থামার নির্দেশ দিলেও থামার প্রয়োজন মনে করেন না তারা। নিয়ম ভেঙে চলাচল করতে গিয়ে সিগন্যালগুলোয় দুর্ঘটনা ঘটে। গত মাসে বিজয় সরণি সিগন্যালে মহাখালী থেকে আসা গাড়িগুলোকে থামার সিগন্যাল দেন ট্রাফিক পুলিশ। উল্টোপাশের সিগন্যালে সবুজ ইঙ্গিত দিলে চলতে শুরু করে গাড়ি। ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বরত সদস্য দিদারুল আলম বলেন, মোটরসাইকেল চালকদের সিগন্যাল দিয়ে থামানো খুব মুশকিল। একটু ফাঁকা পেলেই গতি বাড়িয়ে যেতে শুরু করেন। গত মাসের মাঝামাঝিতে সন্ধ্যার দিকে ডিউটিতে ছিলাম। একদিকের গাড়ি চলাচল থামিয়ে আরেক পাশে চলার নির্দেশ দেই। গাড়ির চাপ একটু কমতেই হঠাৎ এ পাশ থেকে মোটরসাইকেলের চালক দ্রুত রাস্তা পার হয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় উল্টো পাশ থেকে গাড়ি চলে এলে সাইডে ধাক্কা লেগে পড়ে যান মোটরসাইকেল চালক। গুরুতর জখম না হলেও হাত-পা ছিলে বেশ আঘাত পেয়েছিলেন। দু-চার মিনিট সময়ের জন্য জীবনের ঝুঁকি নেন চালকরা।

নগরীর গণপরিবহন চালকরাও সড়কের শৃঙ্খলা মানতে চান না। সন্ধ্যার পর অধিকাংশ বাসের স্টিয়ারিং ধরেন কিশোর হেলপাররা। রাজধানীতে পুলিশের পাশাপাশি বিআরটিএর অভিযান চলছে প্রায় নিয়মিত। কিন্তু সড়কে শৃঙ্খলা ফিরছে না। এ ক্ষেত্রে যাত্রী, চালক, পথচারী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের আন্তরিক হতে হবে। সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন করতে হবে কঠোরভাবে। পাশাপাশি পরিবহনকর্মীদেরও রাস্তার শৃঙ্খলা মানার ক্ষেত্রে আন্তরিকতার পরিচয় দিতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর