মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ডাম্পিংয়ে নষ্ট হওয়া গাড়ির দায় কার!

মাহবুব মমতাজী

ডাম্পিংয়ে নষ্ট হওয়া গাড়ির দায় কার!

রাজধানীর বিভিন্ন থানায় মামলার আলামত হিসেবে ডাম্পিংয়ে রাখা গাড়ি নষ্ট হচ্ছে। দীর্ঘদিন পড়ে থাকছে অযত্নে অবহেলায়। মিরপুর থেকে তোলা ছবি : জয়ীতা রায়

দিনের পর দিন থানায় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে শত শত গাড়ি। এসব গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশও চুরি হয়ে যাচ্ছে। গাড়ির মালিক যখন গাড়ি ফেরত পান তখন তা আর ব্যবহারের উপযোগী থাকে না। এসব নষ্ট হওয়া গাড়ির দায় নেয় না পুলিশ। পুলিশ বিভিন্ন মামলায় গাড়ি জব্দ করতে পারলেও তা ছেড়ে দেওয়া কিংবা নিলামে বিক্রির ক্ষমতা শুধু আদালতের। যেসব গাড়ির বৈধ কোনো মালিকানা থাকে না কিংবা মামলার আলামত হিসেবে জব্দ হওয়া গাড়িগুলো থাকে আদালতের মালখানার দায়িত্বে থাকা বিচারকের নিয়ন্ত্রণে। তিনি নির্দিষ্ট সময়ে গাড়ি নিলামের বিজ্ঞপ্তি দেন। এরপর নিলামে অংশ নেওয়া সর্বোচ্চ দরদাতাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয় সেসব গাড়ি। তবে একটি গাড়ি জব্দের পর নানা প্রক্রিয়া পেরিয়ে পাঁচ-ছয় মাস সময় লাগে নিলাম হতে। যদি গাড়ির মালিক থাকেন তাহলেও ছয় মাস থেকে এক বছর পর্যন্ত সময় লাগে সেসব গাড়ির। কোনো কোনো গাড়ি বছরের পর বছর পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে।

রাজধানীর শাহবাগে খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে সারি সারি গাড়ি। রিকশা, মোটরসাইকেল থেকে শুরু করে বিলাসবহুল গাড়ি মার্সিডিজ, কী নেই সেখানে। সব গাড়ির ওপরেই জমেছে ধুলার আস্তরণ। রোদ-বৃষ্টির কারণে ধরেছে মরিচা। চাকাগুলো মিশে গেছে মাটির সঙ্গে। বছরের পর বছর ধরে পড়ে থাকা এসব গাড়ির আশপাশে শ্যাঁওলা ও পলি জমে জন্মেছে লতাগুল্ম। যা বেয়ে বেয়ে ছেয়ে দিয়েছে পুরো গাড়ি।

এভাবে বিভিন্নজনের শখের কিংবা প্রয়োজনের গাড়িগুলো রাখার জায়গা যেন জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। একটা পর্যায়ে গিয়ে মালিকও যেন চিনতে পারছেন না নিজের গাড়ি। এমন অবস্থা রাজধানীতে বিভিন্ন অপরাধ ও অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে জব্দ হওয়া গাড়িগুলোর। যেগুলো পড়ে আছে থানা কম্পাউন্ড কিংবা বাইরের সড়কে। 

গাড়ির মালিকরা বলছেন, পুলিশ আর আদালতের দরজায় দৌড়ে তারা নিজ গাড়ি পাওয়ার আশা ছেড়ে দিচ্ছেন। অযত্ন-অবহেলায় বছরের পর বছর খোলা আকাশের নিচে পড়ে থাকায় গাড়িগুলোর এমন অবস্থা হচ্ছে যে, সেগুলো আর ব্যবহার উপযোগী থাকছে না। অনেক সময় গাড়িগুলো থেকে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনাও ঘটছে।

রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে একটি মামলা হয়। ওই মামলার আলামত হিসেবে জব্দ করা হয় একটি প্রাইভেটকার, যার নম্বর- ঢাকা মেট্রো গ-১১-৫৯০৫ এবং একটি পিকআপভ্যান, যার নম্বর ঢাকা মেট্রো ন-১৭-১৭৬৬। চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর গাড়ি দুটি নিলাম ডাকা হয়। তত দিনে সেসব গাড়ি ব্যবহারের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে।

এদিকে ব্যক্তিগত উদ্যোগে ডাম্পিংয়ের জায়গায় গিয়ে নিজ গাড়িটি সংরক্ষণের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছেন মালিকরা। অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়িয়েছে, যে কোনো কারণে একবার গাড়ি জব্দ হলেই সর্বনাশ। যদিও আদালতের নির্দেশে কিছু গাড়ি মালিকরা ফিরে পান। তবে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত গাড়ি বুঝে না পাওয়ার ঘটনাই বেশি। এ সময়ে নষ্ট হয়ে যায় গাড়ির যন্ত্রাংশ। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা না থাকায় এসব গাড়ি নিয়ে বিপাকে পড়ার কথাও জানিয়েছে পুলিশ। তাদের দাবি, নিরুপায় হয়েই গাড়িগুলো তারা এভাবে রাখেন। এ অবস্থায় জব্দ হওয়া হাজার কোটি টাকার গাড়ি সংরক্ষণে পুরনো আমলের পরিবর্তে আধুনিক ব্যবস্থাপনার প্রতি জোর দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক শামছুল হক বলেন, পুলিশ যা করে তা আইনকে অনুসরণ করে। আমাদের সমস্যার সমাধানকে আইনগতভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। কারণ, আমাদের বিজ্ঞানভিত্তিক পেশাদারি নলেজ নেই। এটার জন্য আমাদের পলিসি পরিবর্তন করতে হবে এবং উন্নত বিশ্বকে অনুসরণ করতে হবে। উন্নত বিশ্বে গাড়ির জন্য ক্র্যাপিং পলিসির সঙ্গে রেজিস্ট্রেশন পলিসি করা হয়, এরপর তা ইন্স্যুরেন্স পলিসির সঙ্গে ট্যাগ করা থাকে। ফলে একটি গাড়ি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কী হবে, কীভাবে ব্যবস্থাপনা হবে তার সবই ওই পলিসিতে থাকবে। আমাদের পরিকল্পনায় বিরাট ত্রুটি আছে। সে কারণে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মধ্যে ডাম্পিং হয়, বিভিন্ন মাঠে, রাস্তায়, ফুটপাতে ডাম্পিং হয়।

সর্বশেষ খবর