মঙ্গলবার, ৩ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

শীতে সুস্থতায় চাই টোটাল ফিটনেস

জয়শ্রী ভাদুড়ী

শীতে সুস্থতায় চাই টোটাল ফিটনেস

শীতে শারীরিক স্থবিরতা কাটিয়ে সুস্থ, প্রাণবন্ত, ফিট থাকতে চাই টোটাল ফিটনেস। গতকাল শীতের ভোরে রমনা পার্কে শারীরিক কসরতকারীরা ছবি- জয়ীতা রায়

ভোর সাড়ে ৫টায় ঘড়িতে বেজে ওঠে অ্যালার্ম। সকাল ৬টায় হাঁটতে বের হন ফয়জুল ইসলাম। বয়স ৬৫-এর কোঠায় পৌঁছালেও রমনা পার্কে পুরো এক ঘণ্টা হেঁটে কিছুক্ষণ ব্যায়াম করে বাসায় ফেরেন তিনি। সচেতনতার কারণে ডায়াবেটিস রয়েছে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। ফয়জুল ইসলাম বলেন, ৪৫ বছর বয়সে আমি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হই। তখন থেকে হাঁটার অভ্যাস শুরু। হাঁটলে রাতে ঘুম ভালো হয়। হাঁটতে এসে সকালের নির্মল বাতাসে মন ভালো হয়ে যায়। অনেকের সঙ্গে পরিচিত হওয়ায় আড্ডাও ভালোই জমে।

গতকাল রমনা পার্কে দেখা যায়, সকালে   হাঁটছেন এমন মানুষের মধ্যে বয়স্কদের সংখ্যা বেশি। অনেকেই ইয়োগাসহ বিভিন্ন রকমের ব্যায়াম করছেন। হাড় কাঁপানো শীতেও আলসেমি নেই তাদের। গত শনিবার সকালে ধানমন্ডি লেকেও দেখা যায় একই চিত্র। শারীরিক এবং মানসিকভাবে সুস্থ থাকতে নিয়ম করে হাঁটছেন তারা। হাঁটতে আসা ব্যক্তিদের মধ্যে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। অবসরে যাওয়া   মানুষের অনেকেই কাজ না থাকায় মানসিক অবসাদে ভোগেন।

শারীরিক-মানসিক সুস্থতায় জোর দিয়ে জানুয়ারি মাসের প্রথম শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) পালিত হচ্ছে ‘টোটাল ফিটনেস ডে’। মানুষকে সার্বিক ভালো থাকার সন্ধান দিতেই এ উদ্যোগ। সবার মাঝে টোটাল ফিটনেস বিষয়ে সচেতনতা তৈরি হলে মানুষ ভোগমুখী মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে বলে প্রত্যাশা উদ্যোক্তাদের। ‘সুস্থ দেহ প্রশান্ত মন কর্মব্যস্ত সুখী জীবন’- এ প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রথমবারের মতো ৬ জানুয়ারি পালিত হবে টোটাল ফিটনেস ডে। দিবসটি উপলক্ষে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সকাল ৭টায় বিশেষ সচেতনতামূলক সেশন আয়োজন করেছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। সেখানে মেডিটেশন, যোগব্যায়াম, সচেতনতামূলক বুলেটিন বিতরণ করা হবে। রয়েছে আলোচনা অনুষ্ঠান। এ ছাড়া দেশজুড়ে বিভিন্ন উন্মুক্ত স্থানে এ ধরনের  সেশনের আয়োজন করা হয়েছে। উদ্যোক্তাদের মতে, ফিটনেস বলতে দৈহিক সুস্থতাকে বোঝালেও ধারণাটি আরও ব্যাপক। আসলে শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আত্মিক- সবদিকে ফিট থাকা মানেই পরিপূর্ণ ফিটনেসের অধিকারী হওয়া। স্বাস্থ্য সচেতনতা তৈরি করছে এমন বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনও দিবসটি পালন করবে। মানসিক অবসাদ, হতাশায় বাড়ছে মানসিক রোগ। চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ার পর কর্মহীন জীবনে তৈরি হচ্ছে অবসাদ।    বিভিন্ন অঙ্গে ব্যথাসহ নানা রোগ বাসা বাঁধছে শরীরে। তাই শরীর এবং মন সুস্থ রাখতে    বয়স্ক ব্যক্তিরা সকাল-বিকাল হাঁটা এবং ব্যায়ামের প্রতি মনোযোগ বাড়াচ্ছেন।

ধানমন্ডি লেকে প্রতিদিন সকালে এবং বিকালে হাঁটতে আসেন লোকমান আলী। সরকারি   চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি। বিকালে এক ঘণ্টা হাঁটা শেষে সমবয়সীদের সঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছিলেন তিনি। প্রতিদিন হাঁটেন কি-না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিদিন দুই বেলা হাঁটি এবং বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করি। আগে ডায়াবেটিস সমস্যায় খুব ভুগতে হয়েছে। এখন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। হাঁটাহাঁটি শেষে সবার সঙ্গে আড্ডা, হাসি, গল্পে মনও ভালো হয়ে যায়। পাশে বসে থাকা সিরাজউদ্দিন বলেন, আগে রাতে ভালো ঘুম হতো না। পরিশ্রম না থাকায় ঘুমের বদলে তৈরি হতো দুশ্চিন্তা। নিয়মিত ব্যায়াম করায় রাত ১১টা বাজলেই ঘুমিয়ে পড়ি। পরিমিত খাবার, পরিশ্রম এবং ঘুমের কারণে বয়স ৬৮ হলেও সুস্থ আছি।

এ ব্যাপারে ইমেরিটাস অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, বয়স হলে মানুষকে বিভিন্ন রকমের অসুখের মুখোমুখি হতে হয়। বয়স্ক মানুষের মধ্যে ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। তাই নিয়মিত হাঁটা, পরিমিত খাবার এবং চিনি কম খেলে সুস্থ থাকা সম্ভব। আগের তুলনায় মানুষ অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। রোগ সম্পর্কে জানলে, সচেতন হলে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়। গত বছরের ১০ জানুয়ারি নিউইয়র্ক পোস্টে ইমিউনোলজিস্ট প্রফেসর ক্যারোলা ভিনেস ও জেমস লি’র এক গবেষণা ফল প্রকাশিত হয়। সেখানে দীর্ঘদিনের গবেষণায় তারা দেখিয়েছেন, সম্প্রতি এমন কিছু রোগের উৎপত্তি হচ্ছে, আগে কোনো সময়ে যার দেখা মেলেনি। তারা এ জন্য দায়ী করেছেন খাদ্যাভ্যাসকে। বিশেষ করে ফাস্টফুড ও প্যাকেটজাত খাবারের প্রতি বিশ্বজুড়ে সবার ব্যাপক আগ্রহ ডেকে আনছে প্রাণঘাতী রোগ। চিকিৎসকরা বলছেন, টিনজাত, প্যাকেটজাত, প্রক্রিয়াজাত খাবারের বদলে বেশি বেশি প্রাকৃতিক খাবারে অভ্যস্ত হলে শারীরিক ফিটনেস অর্জিত হয় সহজে। রাতে বেশি না খেয়ে সকালে কিছুটা বেশি খেলে তা সুস্থতাকে নিশ্চিত করে। নিয়মিত হাঁটা, দৌড়ানো, যোগব্যায়াম, দম ইত্যাদির চর্চা দেহকে রাখে প্রাণবন্ত। রাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম এবং অবশ্যই ভালো ঘুম দেহের ক্লান্তি দূর করে দেহকে পরের দিনের জন্য সুস্থ করে তোলে।

সর্বশেষ খবর