এ বিষয়ে বিআরটিএ মুখপাত্র ও পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) শীতাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, লক্কড়ঝক্কড় ও ফিটনেসবিহীন বাসের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে
কোনোভাবেই শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না রাজধানীর গণপরিবহনে। সরকারের পক্ষ থেকে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি করা হলেও সাত বছরেও তেমন কোনো অগ্রগতি নেই। কমিটির দেওয়া ঢাকা নগর পরিবহন নামমাত্র একটি রুটে চললেও এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম।
একই সঙ্গে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি গত ফেব্রুয়ারি মাসে গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে গোলাপি রংয়ের বাস চালু করে। কিছুদিন পর তাও বন্ধ হয়ে যায়। ফলে গণপরিবহনে যাত্রীদের ভোগান্তি থেকে রেহাই মিলছে না। রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে ও যানজট নিরসনে ২০১৮ সালের ৯ সেপ্টেম্বর গঠন করা হয় বাস রুট রেশনালাইজেশন (পুনর্বিন্যাস) কমিটি। সেই হিসাবে এই কমিটির সাত বছরের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এই সময়ে তারা কিছু কাজ করলেও তা গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে উল্লেখযোগ্য নয়। কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে আছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক আর সদস্যসচিব ছিলেন ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক। কমিটিতে রয়েছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক, ডিএমপি পুলিশ কমিশনার, গণপরিবহন বিশেষজ্ঞ, পরিবহন মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধি, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের প্রতিনিধিরা।
বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটি গত সাত বছরে যা করেছে, তা হলো মাত্র তিনটি রুটে পরীক্ষামূলক ১৫০টির মতো বাস চালু করেছে। যদিও কিছুদিন পর তা আবার বন্ধ হয়ে যায়। তবে নতুন করে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি একটি রুটে ৩৫টি এসি বাস দিয়ে ঢাকা নগর পরিবহন সেবা চালু করা হয়। কিন্তু বাসের সংখ্যা কম হওয়ায় বেশির ভাগ সময় ৩০ থেকে ৪০ মিনিটের বেশি অপেক্ষায় থাকতে হয়। অন্য রুটগুলো চালু না করায় কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। তবে এই রুটে চলা এসি সার্ভিসও এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার ভিতরের টার্মিনালগুলোকে রাজধানীর বাইরে নিয়ে যাওয়ার জন্য চারটি জায়গা নির্বাচন ও নকশা প্রণয়ন করা। এর মধ্যে কাঁচপুরে টার্মিনাল নির্মাণের কাজ করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। কিছু জায়গায় বাস বে ও যাত্রী ছাউনি নির্মাণ করা হয়েছে বাস রুট কমিটি।
অন্যদিকে রাজধানীতে গত ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মাধ্যমে চালু করা হয় ই-টিকেটিং পদ্ধতি ও কাউন্টারভিত্তিক বাস সার্ভিস। নতুন পদ্ধতিতে গাজীপুর থেকে ঢাকা সড়কের বিভিন্ন রুটে প্রথম অবস্থায় ২১টি কোম্পানির ২ হাজার ৬১০টি বাস চালু করা হয়। সব গাড়ির রং নির্ধারণ করা হয় গোলাপি। নতুন এ ব্যবস্থার পাঁচ দিন যেতে না যেতেই এসব গাড়ির শ্রমিকদের ভিতর অসন্তোষ শুরু হয়। কিছুদিন পর তা বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সমিতির নতুন উদ্যোগ কাজে আসেনি।
জানা যায়, রাজধানীতে আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি (আরটিসি) অনুমোদিত বাস রুটের সংখ্যা ৩৮৮টি। এর মধ্যে এখন অকার্যকর ২৭৮টি। সক্রিয় ১১০টি রুটে অনুমোদিত গাড়ির সংখ্যা সাত হাজার ৪৩টি। সক্রিয় রুটগুলোয় এখন গাড়ি চলছে চার হাজার ৫৪৬টি। এর মধ্যে ফিটনেসবিহীন বাসের সংখ্যা এক হাজার ৫৩টি। ঢাকার সড়কে বাস নামাতে বিভিন্ন বাস কোম্পানির মালিকরা আরটিসি কমিটিতে আবেদন জানিয়েছেন। সে তালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ৫০টি বাস কোম্পানির ২ হাজার ৮৮৫টি বাস চলাচলের অনুমতি রয়েছে। এতে ২০ বছরের অর্থনৈতিক মেয়াদকাল ফুরানো বাসের সংখ্যা ৭০৪টি। রুট পারমিট রয়েছে এক হাজার ৬৫৫টি বাসের। এই হিসাব অনুযায়ী, ৫০ জন বাস মালিকের এক হাজার ২২০টি রুট পারমিটবিহীন বাস ঢাকার বিভিন্ন রুটে চলাচল করছে। এসব মালিকই আবার নতুন করে দুই হাজার ৯১০টি বাস ঢাকার বিভিন্ন সড়কে নামানোর তোড়জোড় শুরু করেছেন। এই ২ হাজার ৯১০টি বাসের মধ্যে প্রায় সবই ফিটনেসবিহীন। যদিও এই বাসগুলো ঢাকায় রুট পারমিট হারিয়ে ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন জেলায় চলাচল করছে। তবে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) লক্কড়ঝক্কড় ও মেয়াদোত্তীর্ণ বাস অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছে।
এ বিষয়ে বিআরটিএ মুখপাত্র ও পরিচালক (ইঞ্জিনিয়ার) শীতাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, লক্কড়ঝক্কড় ও ফিটনেসবিহীন বাসের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া আগামী মাস থেকে ২০ বছরের বেশি পুরনো বাসের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হবে। এ বিষয়ে বিআরটিএ কঠোরভাবে মনিটরিং করবে। পরিবহনে শৃঙ্খলা আনতেও কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন তিনি।