চট্টগ্রাম নগরের উন্মুক্ত খাল-নালায় পড়ে মৃত্যু বা নিখোঁজ হলে কর্তৃপক্ষের টনক নড়ে। দুর্ঘটনার পর কয়েক দিন নানা তৎপরতা দেখানো হয়। সভা-মিটিং করা হয়। কিন্তু এরপর আবারও সব থেমে যায়। বন্ধ হয় সব উদ্যোগ-তৎপরতা।
গত চার বছরে নগরে খাল-নালায় পড়ে ১৪ জন নারী-শিশু-পুরুষ মারা যান। সর্বশেষ গত ১৮ এপ্রিল নগরের কাপাসগোলা এলাকায় ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে হিজড়া খালে পড়ে যায় ছয় মাস বয়সি এক শিশু, শিশুর মা ও দাদি। পরদিন সকালে শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়। চট্টগ্রাম ডেভেলপমেন্ট ফোরামের যুগ্ম আহ্বায়ক খোরশেদুল আলম বলেন, নগরের উন্মুক্ত ঝুঁকিপূর্ণ খাল-নালা নিয়ে আমরা আর কথার ফুলঝুরি চাই না, আমরা কার্যকর উদ্যোগ চাই। চুয়েটের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. শাহজালাল মিশুক বলেন, চসিকের উচিত বর্ষার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ স্থানগুলো চিহ্নিত করে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া। খালে পড়ে এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হলো। এ দায় চসিক কোনো মতেই এড়াতে পারে না। তাই অগ্রাধিকারভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ খাল-নালা চিহ্নিত করে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, নিরাপত্তাবেষ্টনী নেই এমন খাল-নালার তালিকা তৈরির কাজ চলছে। এ তালিকা তৈরি হলেই আমরা কার্যকর উদ্যোগ নেব। অতীতে যে সমন্বয়হীনভাবে কাজ চলত, এখন তা হচ্ছে না। আমরা সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করছি। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৪ সালের জুনে গোসাইলডাঙ্গা এলাকায় সাত বছরের শিশু সাইদুল ইসলাম নালায় পড়ে নিখোঁজ হয়। পরদিন নাছির খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। একই বছরের ১১ জুন চাক্তাই খালে গোসল করতে নেমে নিখোঁজ হয় দুই শিশু।
পরদিন চাক্তাই খালে একটি লাশ ভাসতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসকে খবর দিলে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই বছরের ৯ এপ্রিল সদরঘাট নালাপাড়া এলাকায় অরক্ষিত ড্রেনে পড়ে তিন বছরের শিশু ওজাইফা মারা যায়। তা ছাড়া, ২৭ মে আছাদগঞ্জ শুঁটকিপল্লি এলাকায় কলাবাগিচা খালে পড়ে মারা যান আজিজুল হাকিম (৩০) নামের এক যুবক।
২০২৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর নগরের সিডিএ আবাসিক এলাকার খালে নেমে নিখোঁজ হয় আবদুল্লাহ (৫)। এক দিন পর তার লাশ পাওয়া যায়। ওই বছরের ৭ আগস্ট ১ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের ফতেহপুর ইসলামিয়া হাটসংলগ্ন বাদামতলা এলাকায় বৃষ্টির মধ্যে নালায় পড়ে মৃত্যু হয় কলেজছাত্রী নিপা পালিতের (২০)।
একই বছরের ২৭ আগস্ট আগ্রাবাদের রঙ্গিপাড়ায় ইয়াছিন আরাফাত নামের দেড় বছর বয়সি এক শিশু নিখোঁজ হয়। পরে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল কালুরঘাটের এলাকার ওসমানিয়া খাল থেকে এক নারীকে উদ্ধার করে। ২০২১ সালের ৩০ জুন ষোলশহর চশমা পাহাড় এলাকায় একটি অটোরিকশা খালে পড়ে নিখোঁজ হয় তিনজন। ২০১৮ সালের ৯ জুন নগরীর আমিন জুটমিল এলাকায় এক শিশু ড্রেনে পড়ে যায়। ২০১৭ সালের ৩ জুলাই হাটহাজারীর মির্জাপুর এলাকার বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা শীলব্রত বড়ুয়া নগরের এম এম আলী সড়কের পাশের বড় নালায় পড়ে নিখোঁজ হন।