বুধবার, ২৫ মার্চ, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনায় বিপর্যস্ত বিশ্ব এয়ারলাইনস

করোনায় বিপর্যস্ত বিশ্ব এয়ারলাইনস

চীনে শুরু হওয়া করোনাভাইরাস সংকটের কারণে শুধু যে মানুষেরই প্রাণহানি ঘটছে তাই নয়, একই সঙ্গে এর প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও। এরই মধ্যে অনেক দেশের আমদানি-রপ্তানি, বিমান যোগাযোগ ও পর্যটন শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। লিখেছেন- সাইফ ইমন

 

বিশ্বজুড়ে গত দুই মাসে আড়াই লাখেরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান পরিবহন সংস্থা (আইসিএও) জানিয়েছে, করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯-এর প্রভাবে বিশ্বের বিমান সংস্থাগুলোকে ৫ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত  লোকসানের মাশুল গুনতে হতে পারে। মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকে বিমান চলাচল ৩৫ শতাংশ কমে এসেছে। আন্তর্জাতিক বিমান পরিবহন সংস্থা (আইএটিএ) এটিকে গত এক দশকে ভয়াবহ বিপর্যয় হিসেবে উল্লেখ করে বলেছে, মূলত করোনাভাইরাসের কারণে যাত্রীদের ভ্রমণ অনীহা এবং ভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে বিমান চলাচল বন্ধ করেছে বিভিন্ন দেশ। ফ্লাইটগুলোর ধারণক্ষমতার চেয়ে কম যাত্রী হওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে। করোনাভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিকে বড় ধরনের মন্দার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে ইতিমধ্যেই। তবে এই প্রাদুর্ভাবের শুরুর অঞ্চল হলো এশিয়া। বিশেষজ্ঞদের মতে, করোনার প্রভাবে সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়তে যাচ্ছে এশিয়ার অর্থনীতি। আর সেই তালিকায় প্রথমেই চলে এসেছে এভিয়েশন খাত। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ আকাশপথে সম্প্রতি ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ যাত্রী কমে গেছে। বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোকাব্বির হোসেন গণমাধ্যমে বলেন, ‘কাতার-কুয়েত-সৌদি ও নেপাল বাংলাদেশি যাত্রীদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা  দেওয়ায় সব ফ্লাইট অনির্দিষ্টকালের জন্য বাতিল করেছে বিমান। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া নভেল করোনাভাইরাসের কারণে বাংলাদেশ বিমান এয়ারলাইনস ২৭০ কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়েছে। ফ্লাইট কাটছাঁট এবং ওমরাহ না করতে পারায় বিমান এই ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।’ বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের সচিব মহিবুল হক এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, এই ক্ষতি দিন দিন বাড়ছে। তিনি আরও বলেন, ‘বিমানের পাশাপাশি ক্ষতি গুনছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষও।’ সব ফ্লাইটই ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম, সিলেট, কক্সবাজার, যশোর, সৈয়দপুর, রাজশাহী ও বরিশাল রুটে চলাচল করে। তবে অভ্যন্তরীণ রুটে বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলো ৮০ শতাংশ ফ্লাইট পরিচালনা করে থাকে। পুরো বিশ্বেই এখন একই অবস্থা বিরাজ করছে। প্রভাব পড়েছে বৈশ্বিক অর্থনীতিতেও। এরই মধ্যে অনেক দেশের আমদানি-রপ্তানি, বিমান যোগাযোগ ও পর্যটন শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। বিমান সংস্থাগুলোর জোট ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইএটিএ) আশঙ্কা করছে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্বের বিমান পরিবহন সংস্থাগুলোকে ১১৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।

 

এভিয়েশনে আর্থিক সহায়তা দেবে ভারত

করোনাভাইরাসের কারণে নিষেধাজ্ঞা ও যাত্রী সংকটে ভারতে বিভিন্ন এয়ারলাইনস কোম্পানির ফ্লাইট বাতিল ও স্থগিত করা হয়েছে। যাতে বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে কোম্পানিগুলো।  ধারণা করা হচ্ছে যথার্থ সময়ে সরকার যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে আগামী মে-জুনে সব এয়ারলাইনস কোম্পানিই বন্ধ হয়ে যাবে ভারতে। বিশ্বজুড়েই করোনা বিপর্যয়ে বাতিল এবং কাটছাঁট করা হচ্ছে এয়ারলাইনসগুলোর ফ্লাইট। এ অবস্থায় দেশটির এয়ারলাইনস কোম্পানিগুলোর কর স্থগিত ও অর্থ সহায়তার চিন্তা করা হচ্ছে। এয়ারলাইনস কোম্পানিগুলোকে ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থ সহায়তার পরিকল্পনা করছে ভারতের বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয়। পাশাপাশি জ্বালানি করসহ কোম্পানিগুলোর ধার্য করা বিভিন্ন কর সাময়িকভাবে স্থগিতের বিষয় বিবেচনাসহ নানারকম পরিকল্পনা করছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

 

 

সবচেয়ে বড় ক্ষতি আমেরিকা-ইউরোপে

বিশ্বে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। আর এর প্রভাব পড়েছে মানুষের জীবনযাত্রায়। ইউরোপ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বিমান ভ্রমণ বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রুট। কিন্তু ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করায়  ইউরোপের এয়ারলাইনসগুলো বিশ্বের অন্যসব এয়ারলাইনসের মতোই পড়েছে ক্ষতির মুখে।   উত্তর আমেরিকা, লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপের বিমান চলাচলের ট্র্যাককারী এনওয়াইএসই আরকা এয়ারলাইনস ইনডেক্স থেকে জানা যায়, করোনাভাইরাসের কারণে রাজস্ব আয় ৪০০ কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে। গত এক দশকে প্রথম এ ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ল বিমান চলাচল শিল্প। করোনা সংকটে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খেয়েছে নরওয়েজিয়ান এয়ার। ইতিমধ্যে এয়ারলাইনসটি ৪ হাজারের বেশি ফ্লাইট বাতিল করেছে। অর্ধেকের বেশি বিমানকর্মীকে কাজে না আসার নির্দেশ দিয়েছে বিমান সংস্থাটি। এভাবে আর কতদিন চলবে বলতে পারছে না কেউ। 

 

অস্ট্রেলিয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত এয়ারলাইনস

বিশ্বজুড়ে গত দুই মাসে কয়েক লাখেরও বেশি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। যার প্রভাব পড়েছে অস্ট্রেলিয়ায়ও। ক্ষতিগস্ত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার এয়ারলাইনসগুলো। বড় বড় বিমানবন্দর দিন দিন ফাঁকা হয়ে পড়েছে। অনেক এয়ারলাইনস তাদের কর্মীদের বাধ্যতামূলক অবৈতনিক ছুটিতে পাঠিয়েছে। অনেক বিমান সংস্থার পাইলট এবং কর্মীরা ভাইরাসে আক্রান্তের ভয়ে কাজে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। একই সঙ্গে দেশে দেশে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় বিশ্ব পর্যটনে ধস নেমেছে। অনেকের দাবি এভিয়েশন শিল্পে করোনাভাইরাস শুধু বিপর্যয় নয়, ‘মহাবিপর্যয়’ ডেকে এনেছে। এই অবস্থায় টিকে থাকাই কঠিন হয়ে যাবে। আন্তর্জাতিক গন্তব্যে ফ্লাইট ৬০ শতাংশের বেশি কমে গেছে সেখানে।

 

বিপর্যয় শুরু চীন থেকেই

চীনে জীবনযাত্রা আবার স্বাভাবিক গতিতে ফিরে আসতে শুরু করেছে। তবে চীনের করোনাভাইরাসের কারণেই ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে বৈশ্বিক এয়ারলাইনসগুলো। আইকাও’র তথ্য মতে, প্রায় বেশির ভাগ এয়ারলাইনস চীন থেকে সব আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করেছে এবং আরও ৫০টি এয়ারলাইনস সম্পর্কিত বিমান পরিচালনা বন্ধ করেছে করোনা আক্রমণের শুরুতেই। ফলে সরাসরি চীন  থেকে আসা বিদেশিদের জন্য বিদেশি বিমান সংস্থার সক্ষমতা কমেছে গত দুই মাসে। বৈশ্বিক এয়ারলাইনসের পূর্বাভাসের তুলনায় যাত্রী কমেছে প্রায় দুই কোটি বা ১৬.৪ শতাংশ। এতে বিশ্বব্যাপী বিমান সংস্থাগুলোর জন্য মোট অপারেটিং রাজস্ব কমেছে ৫০০ কোটি ডলার। বর্তমানে চীনের অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল আবার স্বাভাবিক হয়েছে। জনগণ ফিরে যাচ্ছে নিজ নিজ কর্মস্থলে।

সর্বশেষ খবর