রবিবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২০ ০০:০০ টা

বরফের দেশে অবাক জীবন

তানভীর আহমেদ

বরফের দেশে  অবাক জীবন

বরফের দেশের জীবনযাত্রা একেবারেই অন্যরকম। কোথাও কোথাও এত ঠান্ডা যে, সাধারণ মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে। সেখানে জীবন ধারণ বেশ চ্যালেঞ্জিং। হাড়জমে ওঠা ঠান্ডা, তুষারপাত-তুষার ঝড়, খাবারের সংকট, আবাসন সংকট, পরিবহনের নেই কোনো ব্যবস্থা। যোগাযোগ, বিদ্যুৎ এসব পৌঁছায়নি। কোনো কোনো শীতের দেশে অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে গড়ে উঠেছে সভ্যতা। আর দুই মেরু অঞ্চলে উপজাতি সম্প্রদায় ছাড়া তেমন কেউ বসবাস করে না। বরফ দেশের অবাক জীবন নিয়েই আজকের রকমারি-

 

তাদের বরফের বাড়ি

উত্তর মেরুতে জীবন অনেক কঠিন। গাছপালা না থাকায় নেই কাঠ। যে সামান্য পরিমাণ কাঠ এস্কিমো বা ইনুইটরা জোগাড় করে সেসব জ্বালানি হিসেবেই কাজে লাগায়। বাড়ি বানাতে যে কাঠের দরকার তা আর জোগাড় হয় না। তাই বাধ্য হয়ে বরফই হলো তাদের বাড়ি তৈরির জন্য সবচেয়ে ভালো উপাদান। প্রচ- শীতে শক্ত বরফের খ- দিয়ে তারা তৈরি করে বিশেষ এক ধরনের ঘর। একে বলা হয় ‘ইগলু’। ছোট ছোট ফাঁকফোকরে ছোট ছোট বরফের টুকরা ঢুকিয়ে তৈরি করা হয় এই বাড়ি। টুকরাগুলো টালির ফাঁকে ফাঁকে জমে হাওয়া ঢোকার পথ বন্ধ করে দেয়। আর জানালা তৈরি করে একখ- স্বচ্ছ বরফের টুকরা দিয়ে। ইগলুতে ঢুকতে হয় হামাগুড়ি দিয়ে। চার-পাঁচ হাত লম্বা একটা সুড়ঙ্গপথ পেরিয়ে তবেই পাওয়া যায় ইগলুর দরজা। সাধারণত ইগলুর উচ্চতা পাঁচ থেকে ছয় ফুট। বাড়ির ভিতর সবসময় জ্বলতে থাকে পাথরের তৈরি প্রদীপ। প্রদীপের সলতে তৈরি করা হয় সমুদ্রের শেওলা দিয়ে। আর প্রদীপ জ্বলে সিলের তেলে। বরফের বাড়ির ভিতরে ইনুইটদের মেলে কিছুটা উষ্ণতা আর হিংস্র প্রাণীদের আক্রমণ থেকে নিরাপত্তা। ভয়ঙ্কর তুষারঝড়ে এই বাড়ি তাদের প্রাণ বাঁচায়। অবশ্য বছরের অর্ধেক সময় পেরোতে না পেরোতে এই বাড়ি গলে যায়। গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লে বরফ গলে নদীতে চলে যায় ইগলু বাড়ি। তখন তাদের বাইরে খোলা মাঠে তাঁবু টানিয়ে বসবাস করা ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।  যেনতেনভাবে তৈরি একটা ফ্রেমের ওপর পশুর চামড়া দিয়ে ঢেকে তারা তৈরি করে এই তাঁবু।

 

কুকুর টানা গাড়িই ভরসা

বরফের দেশ বললে উত্তর গোলার্ধের উত্তর আলাস্কা, কানাডা এবং সাইবেরিয়ায় অবস্থিত আর্কটিক তুন্দ্রা অঞ্চলের কথা আসে। ইনুইট জাতির বসবাস এখানে। বরফে ঢাকা পুরো অঞ্চল। মাটি বলে কিছু নেই। বরফের নিচে বইছে সমুদ্র। সারা বছরই এই অঞ্চল ঢাকা থাকে বরফে। তাই চলাচল খুবই বিপজ্জনক। এই বরফ এলাকায় এখনো যোগাযোগের অন্যতম বাহন হলো নৌকা এবং কুকুরের গাড়ি বা স্লেজ। এ গাড়িকে তারা বলে কামুতিক। কুকুরের গাড়ি, এমন এক ধরনের গাড়ি যা বরফের ওপর দিয়ে টেনে নিলেই চলে। ইঞ্জিনের এই যুগে, মোটরগাড়ি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রাজপথে। সেখানে স্লেজ গাড়ি, কোনো তেল লাগে না, গ্যাস লাগে না। এর কোনো ইঞ্জিন নেই। এমনকি নেই কোনো চাকা। পশুর চামড়া, শক্ত হাড় এসব সাধারণ জিনিস দিয়েই তারা তৈরি করে একেকটি গাড়ি। এই গাড়িকে জুড়ে দেয় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরের গলায়। আমাদের দেশের ঘোড়ার গাড়ির মতো তারা কুকুরের গাড়িতে চড়ে ঘুরে বেড়ায় বরফের দেশে। তাদের এই কুকুর কিন্তু যে সে কুকুর নয়। কুকুরগুলোা বেশ শক্তিশালী। সাধারণ কুকুরের চেয়ে অনেক বেশি ঘন এবং পুরু এদের গায়ের লোম। নিজেদের প্রয়োজনে ইনুইটরা বাড়িতে এই কুকুর পোষে। এরা নদীতে শিকারে যায় ছোট নৌকায় চড়ে। নাম কায়াক। মালামাল পরিবহন, লোক আনা-নেওয়া এবং অন্যসব জিনিস পরিবহনে এরা বড় নৌকা ব্যবহার করে, যাকে ‘উমিয়াক’ বলে। উমিয়াক লম্বায় প্রায় ছয় থেকে ১২ মিটার। বিশেষ এই নৌকার তলদেশ সমান। ফলে নদী তীরের খুব  কাছাকাছি ভিড়তে পারে সহজেই।

 

বরফ দেশের প্রহরী ওরা

সবচেয়ে বড় ও আকর্ষণীয় প্রাণী হলো মেরু-ভালুক। হিমশীতল বরফে আচ্ছাদিত উত্তর মেরুতে বাস করে বিশালদেহী সাদা লোমের এই প্রাণী। এই ভালুক নিয়ে তৈরি হয়েছে অনেক গল্প, চলচ্চিত্র। শুভ্র বরফে ঢাকা উত্তর মেরুর সৌন্দর্য হাজার গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে এই মেরু-ভালুক। বরফের জনমানবহীন প্রান্তরে রাজত্ব করছে তারা। পুরু চামড়া এবং চামড়ার নিচে পুরু চর্বিস্তরের কারণে মেরু-ভালুক প্রচন্ড ঠান্ডায়ও টিকে থাকতে পারে। শীতের শুরুতে এদের চামড়ার চর্বিস্তর আরও বেড়ে যায়। চমৎকার সাঁতারু হিসেবে মেরু-ভালুকের সুখ্যাতি রয়েছে। উত্তর মেরুর বরফ গলতে শুরু করায় এদের বাসস্থান, প্রজনন স্থান ও শিকার করার ক্ষেত্র প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মুখে পড়ছে। সম্প্রতি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনজারভেশন অব নেচারের এক রিসার্চ রিপোর্টে বলা হয়েছে, খুব বেশি হলে আর ৪০ বছর! তারপরই বিলুপ্ত হয়ে যাবে মেরু অঞ্চলের ভালুকগুলো! যেহেতু সুমেরুতে দ্রুত হারে বরফ গলছে। আর এতে আগামী ৩৫ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে এক-তৃতীয়াংশ পোলার বিয়ার বা মেরু-ভালুক! জানা যায়, বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরে অদূর ভবিষ্যতে যেসব প্রজাতির প্রাণী পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়ে যাবে, সেই লাল তালিকায় প্রথমেই রয়েছে  পোলার বিয়ার।

 

এস্কিমোদের খাবার কাঁচা মাংস আর মাছ

বরফের দেশে কোনো গাছ নেই, তাই শিকার করেই খাবার জোগাড় করতে হয় তাদের। সামুদ্রিক স্তন্যপায়ী তিমি, সিল, পেঙ্গুইন, পাখি, পাখির ডিম, বরফ অঞ্চলের খরগোশ, মেরু ভালুক ও মাছ তাদের প্রধান খাদ্য। সামুদ্রিক উদ্ভিদ, হার্ব জাতীয় ঘাস, ঘাসের শিকড়, বেরি জাতীয় ফল দূর থেকে সংগ্রহ করে তারা। পশু আর মাছের তেল ব্যবহার করে আগুন জ্বালায়। হিংস্র প্রাণী তীর, বর্শা দিয়ে শিকার করে। তিমি ও সিল শিকারে তারা সিদ্ধহস্ত। এস্কিমোরা শীতের সময় খাওয়ার জন্য খাবার সংরক্ষণ করে। গ্রীষ্মকালে মাছ ও মাংস শুকিয়ে নেয়। এ সময় তারা থাকে চামড়ার তৈরি ‘টুপিক’ নামক তাঁবুতে। সাদা বরফে ঢাকা নদীর বুকে ওতপেতে অপেক্ষা করে একটি গর্তের কাছে। এই গর্ত থেকে মুখ বের করে শ্বাস-প্রশ্বাস নেয় সিল, তখনই তারা সেটাকে শিকার করে। এই কৌশল সেখানকার শ্বেত ভালুকরাও অবলম্বন করে। এ ছাড়া তারা শিকার করে ওলরুস, ক্যারিব্যু। এসব প্রাণীর মাংস তারা কখনো সিদ্ধ করে আবার কখনোবা কাঁচাই খেয়ে থাকে। প্রচন্ড ঠান্ডা থাকায় তারা দীর্ঘদিন খাবার সঞ্চয় করে রাখতে পারে। উত্তর মেরুতে খাবারের ভয়াবহ সংকট। বরফের নিচে থাকা মাছ ধরে সাময়িক ক্ষুধা মেটালেও দিন দিন তাদের খাবার সংকট চরম আকার ধারণ করছে। ঘাস জাতীয় খাবার চিবিয়ে তারা কাটিয়ে দেয় দিনের পর দিন। সারা পৃথিবীর মানুষ যখন ফ্যাট জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলছে, তখন ইনুইট জাতির মানুষের প্রাণ বাঁচিয়ে রেখেছে ফ্যাট জাতীয় খাবার, কাঁচা মাংসÑযা এক বিস্ময়। তারা কখনো একা খাবার খায় না। যে বা যারাই শিকার বা খাবার জোগাড় করে সবাই ভাগ করে খায়।  বরফ গলিয়ে পানি নয়তো সিলের গরম রক্ত আর কিছু নেই পানীয় বলতে।

 

সর্বোচ্চ তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস

আর্কটিকের বরফের ছোট-বড় দ্বীপগুলো ভেসে চলে গ্রীষ্মে। আর শীতে এসে জমে দাঁড়িয়ে যায়। দুই ঋতুর উত্তর মেরুতে প্রায় ছয় মাসের গরম আর ঠা-া আবহাওয়া বলা হলেও এখানকার গরমতম দিনেও তাপমাত্রা থাকে শূন্য ডিগ্রি সেলসিয়াস। বরফ জমে থাকা এই গ্রীষ্মের দিনে ছয় মাস সূর্যের দেখা পাওয়া যায়। শীতকাল এলে রাতের আঁধার নেমে আসে ছয় মাসের জন্য। যদিও ঠিক হিসাবটি ভিন্ন। শীতকাল থাকছে ৯ মাস আর বাকি তিন মাস গ্রীষ্মকাল। গ্রীষ্ম কি শীত, সব সময়ই অবিশ্বাস্য ঠান্ডায় মোড়ানো থাকে উত্তর মেরু। শীতকালে তাপমাত্রা মাইনাস ১৫ থেকে শুরু করে মাইনাস ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যায়। গবেষকরা দীর্ঘদিন ধরেই সে সময়ের পরিবেশের চিত্র তুলে আনার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু বিরূপ আবহাওয়া সব প্রচেষ্টাকেই বাধাগ্রস্ত করেছে। শীতকালে তুষারঝড়ের কবলে উত্তর মেরুর পরিবেশ আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। গ্রীষ্ম ও শীত ছাড়াও আরও দুটি ঋতু উত্তর মেরুতে খুঁজে পেয়েছেন গবেষকরা। শরৎ ও বসন্ত। তবে এই দুটি ঋতুর ব্যাপ্তিকাল কয়েক সপ্তাহ মাত্র। শীতকালে আকাশ থাকে পরিষ্কার। সমুদ্র বরফ হয়ে জমে আছে, তাই বাষ্প নেই, নেই মেঘ, নেই বৃষ্টি। গ্রীষ্ম আসার আগে তুষারঝড় বয়ে যায় উত্তর মেরুতে। শীতে উত্তর মেরুতে যতটা না ঠান্ডা,  তারচেয়ে বেশি ঠান্ডা পড়ে আশপাশের এলাকায় (সাইবেরিয়ায়)।

 

 

এন্টার্কটিকার বিস্ময় কাহিনি

► পৃথিবীর দুর্গমতম, উচ্চতম, শীতলতম, শুষ্কতম ও নির্জনতম মহাদেশ এন্টার্কটিকা

► দুনিয়ায় সবচেয়ে বেশি বাতাস চলাচল করে এই মহাদেশে

► চরম আবহাওয়া থাকা সত্ত্বেও এন্টার্কটিকায় পাওয়া যায় ১১৫০ প্রজাতির ছত্রাক

► অনেকের ধারণা এন্টার্কটিকায় পোলার বিয়ার বা মেরু-ভালুক বাস করে কিন্তু এটা সত্যি নয়

► রয়েছে ২০০ প্রজাতির জলজ উদ্ভিদ এবং প্রাণী

► এন্টার্কটিকায় কোনো স্থায়ী বাসিন্দা নেই

এন্টার্কটিকার আবিষ্কারক পর্যটক জেমস কুক

অনেকেই অভিযাত্রিক ক্যাপ্টেন জেমস কুকের নাম জানি। ইনি ছিলেন ইংরেজ পর্যটক। এন্টার্কটিকা নামে যে একটি মহাদেশ আছে তার প্রথম ধারণা দেন এই ব্রিটিশ পর্যটক। তিনি দুবার এন্টার্কটিকা অতিক্রম করেন। প্রথমবার ১৭ জানুয়ারি, ১৭৭৩ এবং দ্বিতীয়বার ১৭৭৪ সালে। তাই তাকে এন্টার্কটিকার আবিষ্কারক বলা হয়। তার আগে কয়েকজন রাশিয়ান এ মহাদেশের কিছু কিছু অংশ শনাক্ত করেছিলেন বলে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানায়। তবে তারা পরিষ্কার ধারণা দিতে পারেননি। বিস্তারিত ধারণা দেন জেমস কুক। এ ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই। 

বিশ্বের শীতল মরুভূমি

পৃথিবীর দক্ষিণতম মহাদেশ। দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে এই মহাদেশ অবস্থিত। এশিয়া, আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা ও দক্ষিণ আমেরিকার পর ১,৪০,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার ক্ষেত্রফল বিশিষ্ট এই মহাদেশ বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম মহাদেশ। অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ অপেক্ষা এটি প্রায় দ্বিগুণ আকৃতিবিশিষ্ট। এই মহাদেশের ৯৮% অংশ গড়ে ১.৯ কিলোমিটার পুরু বরফাবৃত। এন্টার্কটিকা বিশ্বের শীতলতম ও শুষ্কতম মহাদেশ এবং এর গড় উচ্চতা ও বায়ু প্রবাহবেগও মহাদেশগুলোর মধ্যে সর্বাধিক। বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ মাত্র ২০০ মি.মি. হওয়ায় এ মহাদেশকে শীতল মরুভূমি হিসেবে গণ্য করা হয়।

দ্বিতীয় শতাব্দীতে বিশ্ব মানচিত্রে

দ্বিতীয় শতাব্দীতে তিরের মারিনোস তার বিশ্ব মানচিত্রে এ নামটি ব্যবহার করেছিলেন বলে জানা যায়। গাইয়াস জুলিয়াস হাইগিনাস এবং অ্যাপুলেইয়াস নামক রোমের লেখকরা দক্ষিণ মেরু বোঝাতে পোলাস আন্তার্কতিকাস শব্দটি ব্যবহার করতেন। যেখান থেকে ১২৭০ খ্রিস্টাব্দে ফরাসিতে পোলে আন্তার্তিকে এবং ১৩৯১ খ্রিস্টাব্দে জিওফ্রে চসার ইংরেজিতে পোল আন্টার্টিক শব্দটি ব্যবহার করেন। এন্টার্কটিকা মহাদেশের কোনো স্থায়ী অধিবাসী নেই এবং উনবিংশ শতাব্দীর পূর্ব পর্যন্ত কোনো মানুষ এ স্থানকে দেখেছিলেন বলে কোনো প্রমাণ নেই। এতদসত্ত্বেও প্রথম শতাব্দী থেকেই একটি বিশ্বাস প্রচলিত ছিল যে, পৃথিবীর দক্ষিণে টেরা অস্ট্রালিস নামক এক বিশাল মহাদেশ উপস্থিত থাকতে পারে। টলেমি মনে করতেন যে, ইউরোপ, এশিয়া ও উত্তর আফ্রিকা নিয়ে গঠিত তৎকালীন যুগে পরিচিত পৃথিবীর ভূমি সমষ্টির সামঞ্জস্য রক্ষার জন্য এ মহাদেশ দক্ষিণ দিকে অবস্থিত।

বরফস্তরের নিচে সুবিশাল পর্বতশ্রেণি

পশ্চিম এন্টার্কটিকার বিস্তীর্ণ বরফস্তরের নিচে রয়েছে আস্ত একটা পর্বতশ্রেণি। তার মাঝে গা-ঢাকা দিয়ে রয়েছে কয়েকশ মাইল ছড়ানো তিনটি উপত্যকাও। এই অনুসন্ধান নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে ‘জিওফিজিক্যাল রিসার্চ লেটার্স’ পত্রিকায়। ‘পোলার গ্যাপ’ নামে গবেষকদের বিশেষ অনুসন্ধানে ধরা পড়েছে পশ্চিম এবং পূর্ব এন্টার্কটিকার বরফের আস্তরণজুড়ে রয়েছে ওই তিন উপত্যকা। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ওই বরফ ঢাকা পাহাড় ও উপত্যকার কারণে সমুদ্রতলের উচ্চতা বাড়তে পারে অচিরেই।

বৃহৎ পর্বতমালা গ্যাম্বার্টসেভ

এন্টার্কটিকা তার সাদা বরফে আবৃত করে রেখেছে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ পর্বতমালা। যার নাম গ্যাম্বার্টসেভ। এটা প্রায় ৭৫০ মাইলজুড়ে বিস্তৃত। এই পর্বতমালার সর্বোচ্চ শৃঙ্গের উচ্চতা প্রায় ৯ হাজার ফুট, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এভারেস্টের প্রায় তিন ভাগের একভাগের সমান। এন্টার্কটিকায় যাওয়া দুরূহ ব্যাপার এবং কষ্টসাধ্য। কেউ যদি যেতে চান তাহলে তাকে প্রথমে নিউজিল্যান্ড বা অস্ট্রেলিয়ায় যেতে হবে।  সেখান থেকে প্লেন বা জাহাজে এখানে যাওয়া যাবে।

 

গলে যাচ্ছে বরফ!

সমুদ্রের উচ্চতা যদি অন্তত ১০ তলা উঁচু হয় তবে কী হবে? বিগত কয়েক বছরে আঘাত হানা সুনামি দেখে হলিউড সিনেমায় দেখানো দৃশ্য খুব অবাস্তব মনে হবে না আর। বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে অবিশ্বাস্য গতিতে গলছে আর্কটিক অঞ্চলের বরফ। স্রেফ গলে গিয়ে সমুদ্রে নামছে এ বরফ সমুদ্রের পানি। মাত্র এক দশকের ব্যবধানে উত্তর মেরুর বরফ গলে যাওয়ার চিত্র সাধারণ মানুষকেও আতঙ্কিত করবে। বাংলাদেশের মতো সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশগুলো রয়েছে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কঠিন ফলাফল ভোগের জন্য। বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঝুঁঁকির মুখে পড়া আর্কটিক সংক্রান্ত গবেষণা শেষে গবেষকরা জানাচ্ছেন, মানুষের সৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন আর্কটিককে উষ্ণতর ও আরও গতিশীল স্থান হিসেবে তৈরি করছে। এর প্রতিক্রিয়ায় গত এক দশকের তুলনায় দ্রুততর গরম হয়ে ইতিহাসের যে কোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে অঞ্চলটি। ২০১৭ সালের বার্ষিক প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়, শীতকালীন সর্বাধিক সামুদ্রিক বরফ এলাকার পরিমাপ সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছে। প্রতি বছর পাতলা হয়ে চার বছরের বেশি পুরনো সাগর বরফও অদৃশ্য হয়ে গেছে। গ্রামগুলো বরফগলা পানিতে ধুয়ে যাচ্ছে। গবেষণা কর্মসূচির পরিচালক ড. জেরেমি ম্যাথিস বলেন, অঞ্চলটি ফ্রিজ হিসেবে কাজ করে পৃথিবীর চমৎকার সেবা করেছে। আর এখনকার অবস্থা এমন যে, ফ্রিজটির দরজা খোলা বাকি আছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর