শিরোনাম
বুধবার, ২৩ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা

বিশ্বের দামি যা কিছু...

সাইফ ইমন

বিশ্বের দামি যা কিছু...

পৃথিবীর সবচেয়ে দামি বস্তু কী বা কেমন তা জানার আগ্রহ কমবেশি সবারই থাকে। মানুষের প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে মূল্যবান হলো সোনা-সংশ্লিষ্ট কিছু। কিন্তু বাস্তবতা হলো সোনার চেয়েও মূল্যবান অনেক কিছুই রয়েছে পৃথিবীর বুকে। আবার অধিকাংশ মানুষই মূল্যবান বস্তু হিসেবে হীরা কিংবা ইউরেনিয়ামকে সবার ওপরে রাখবে। এগুলো অবশ্যই দামি কিন্তু বাস্তবতা বলছে এমন কিছু বস্তু আছে, যার দামের কাছে অনেক কিছুই তুচ্ছ...

 

১ কোটি ৭০ লাখ ডলার দাম এই স্বর্গের পাথরের

মিয়ানমারের একটি খনিতে ১৭৫ টন ওজনের বিশাল এক জেড পাথর পাওয়া যায়। পাথরটি ১৪ ফুট উঁচু ও ১৯ ফুট লম্বা। ধারণা করা হচ্ছে, এর দাম প্রায় ১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। দেশটির উত্তরাঞ্চলীয় কাচিন প্রদেশের একটি খনিতে বিশালাকৃতির এই জেড পাথর পাওয়া গেছে। মিয়ানমারেই বিশ্বের সবচেয়ে ভালো জেড পাথর পাওয়া যায়। জেড সবুজ রঙের প্রায় স্বচ্ছ একটি পাথর। মিয়ানমারের মোট জিডিপির অর্ধেকই আসে জেড শিল্প থেকে। জেড পাথরের সবচেয়ে বড় বাজার পাশের দেশ চীন। সেখানে এটিকে ‘স্বর্গের পাথর’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ৩০০ টন ওজনের বিশাল জেড পাথরটি ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে কাচিন প্রদেশের ফাকান্তের মাত লিন চাউং খনি থেকে আহরণ করা হয়েছিল। মিয়ানমার সরকার এরই মধ্যে জেড পাথরটি থেকে ২০০ কোটি কিয়েত উত্তোলন শুল্ক আদায় করে ফেলেছে। এই মূল্যবান রত্ন পাথরটি যখন পরিষ্কার করে ছোট ছোট খন্ডে ভাগ করা হবে তখন এর দাম কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। জেড পাথরের নেকলেস ও ব্রেসলেট অনেক জনপ্রিয়। তার সঙ্গে চায়নায় বিভিন্ন মূর্তি বানাতে ব্যবহার করা হয় মূল্যবান এই পাথর।

 

৭৩ লাখ ডলার দামের ব্যাগ পার্ভা এমিয়া

ইতালিতে তৈরি হয়েছে মহিলাদের জন্য ব্যবহৃত একটি হ্যান্ডব্যাগ, যা বিশ্বের লাক্সারি আইটেমগুলোর মধ্যে সবথেকে দামি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। মূলত ব্যাগটির নকশা, কারুকার্য এবং চামড়ার কোয়ালিটির ওপর নির্ভর করে এর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। আর দাম শুনলে আপনার চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। বিশ্বের সবথেকে দামি এই হ্যান্ডব্যাগটির মূল্য ৫.৩ মিলিয়ন। জানা গেছে, ইতালির ব্রান্ডেড কোম্পানি বোলোনা-ভিত্তিক বোয়ারিনি মিলানেসি তিনটি পার্ভা এমিয়া ব্যাগ তৈরি করেছেন। যার জন্য প্রায় ১ হাজার ঘণ্টা কাজ করতে হয়েছে। তাও আবার প্রতি ব্যাগ পিছু। আধা-চকচকে অ্যালিগেটরের ত্বক থেকে তৈরি, হ্যান্ডব্যাগটি ১০টি সাদা সোনার প্রজাপতি দিয়ে সজ্জিত। এর মধ্যে চারটি হীরা এবং তিনটি নীলকান্তমণি এবং বিরল প্যারাইবা টুরমলাইনস দ্বারা সজ্জিত। ব্যাগটির মোট ওজন ১৩০ ক্যারেটেরও বেশি। এটিতে একটি ডায়মন্ড পাভ ক্লপও রয়েছে। জানা গেছে, এই ব্যাগের নকশা থেকে শুরু করে দাম নির্ধারণ সবকিছুই সমুদ্র দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে করা হয়েছে।

 

সবচেয়ে দামি বাড়ি বাকিংহাম প্যালেস

বিলাসবহুল বাকিংহাম সংরক্ষণ করে রেখেছে ভিন্ন ভিন্ন রাজতন্ত্রের নানা ইতিহাস। লন্ডনের স্বরাষ্ট্র ও প্রশাসনিক সদর দফতরও বাকিংহাম প্যালেস। রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান ও আতিথেয়তার সব আয়োজন করা হয় ওয়েস্ট মিনস্টার শহরের এই রাজপ্রাসাদে। বাকিংহাম প্যালেস ৪০০ বছর ধরে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের দখলে। বাকিংহাম দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে যথাক্রমে ১০৮ মিটার ও ১২০ মিটার। প্রাসাদটি ৭৭ হাজার বর্গমিটার জায়গাজুড়ে বিস্তৃত। প্রাসাদে কক্ষ আছে ৭৭৫টি। এর মধ্যে কর্মচারীদের জন্য ১৮৮টি কক্ষ, ৯২টি কার্যালয়, ৭৮টি বাথরুম, ৫২টি প্রধান কক্ষ এবং ১৯টি স্টেট রুম রয়েছে। প্রাসাদের দরজা ১,৫১৪টি এবং জানালা ৭৬০টি। প্রাসাদে যত ছবি আছে তার মধ্যে রয়েছে ৭ হাজার পেইন্টিং, ৫ লাখ প্রিন্ট, ৩০ হাজারটি ওয়াটার কালার ও ড্রয়িং।

 

প্রাণী দেহাংশে সবচেয়ে দামি গন্ডরের শিং

গন্ডারের শিং বিশ্বের সবচেয়ে দামি বস্তুগুলোর একটি। এ কারণে হুমকির মুখে পড়েছে এই প্রাণীটি। গত বছরই প্রায় ১২০০র বেশি গন্ডার শিকারিদের হাতে প্রাণ হারিয়েছে। বিবিসির দক্ষিণ আফ্রিকার সংবাদদাতা লিয়ানা হোসের পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গন্ডারের শিংয়ের সন্ধানে দক্ষিণ আফ্রিকায় চোরা শিকারিরা যায় মূলত প্রতিবেশী দেশ মোজাম্বিক থেকে। বন্যপ্রাণী মেরে তাদের দেহাংশ বিক্রি, বছরে ১৯০০ কোটি ডলারের আন্তর্জাতিক ব্যবসা। এ ব্যবসায় এ মুহুর্তে সবচেয়ে চড়া হলো গন্ডারের শিংয়ের বাজারমূল্য। আর তাই চোরা শিকারিরা হয় গন্ডারকে মেরে তার শিং উপড়ে নেয় অথবা শিং কেটে গন্ডারকে আহত অবস্থায় জঙ্গলে ফেলে রেখে যায়। গন্ডারের একটা শিংয়ের দাম আড়াই লাখ মার্কিন ডলার।

 

সেক্স ক্ষমতা বাড়ায় দুর্লভ ছত্রাক ইয়ারচাগুম্বা

ইয়ারচাগুম্বা নামে এই ছত্রাকজাতীয় উদ্ভিদের দখল নিয়ে বহু রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছে চীন ও  নেপালের মধ্যে। মার্কিন ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্সের রিপোর্ট বলছে, বিশ্বের সবচেয়ে দামি বায়োলজিক্যাল কমোডিটির মধ্যে অন্যতম ইয়ারচাগুম্বা। হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চলে ১০ হাজার ফুট উচ্চতায় হদিস মেলে ইয়ারচাগুম্বা নামের ঔষধির। শুঁয়োপোকার মতো দেখতে এই ছত্রাকটি। প্রত্যেক গরমের মৌসুমে হিমালয়ের পাদদেশে বসবাসকারীরা এই ছত্রাক সংগ্রহ করতে নেমে পড়েন। এই ঔষধি ছত্রাক খুবই মূল্যবান। প্রতি গ্রাম ১০০ ডলার দামে মেলে এই ছত্রাক। বাংলাদেশি মুদ্রায় গ্রামপ্রতি যার মূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৮ হাজার টাকার মতো। এশিয়া এবং মার্কিন মুলুকে এর চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধিতে এর সুনাম রয়েছে।

 

ইতিহাস সমৃদ্ধ হীরা ভারতবর্ষের কোহিনুর

ইতিহাস সমৃদ্ধ এক রত্ন। হীরা। তার নাম কোহিনুর। এটি ডিম্বাকৃতির শ্বেত হীরা। বর্তমান ওজন ১০৫ ক্যারেট (২১.৬ গ্রাম) বা ৩১৯ রতি। প্রাথমিকভাবে ওজন ছিল ৭৫৬ ক্যারেট। সম্রাট শাহজাহানের রাজদরবারে কোহিনুরের ওজন পরীক্ষা করা হয়। ফরাসি রত্ন ব্যবসায়ী তাভারনিয়ার যাচাই করে দেখেন, এর ওজন ২৬৮ ক্যারেটের সামান্য বেশি। ভেনিসের হীরক কর্তনকারী হরটেনসিও জর্জিস প্রথম অদক্ষ হাতে এ হীরা কেটে ফেলেন। এত বড় সর্বনাশ করায় সম্রাট শাহজাহান তাকে ১০ হাজার রুপি জরিমানা করেন। কোহিনুর কখনো ক্রয়-বিক্রয় করা হয়নি। এতে ৩৩টি পার্শ্ব রয়েছে। বিভিন্ন সময় হীরাটি হিন্দু, পার্সি, মুঘল, তুর্কি, আফগান, শিখ এবং ব্রিটিশ শাসকদের অধিকারে ছিল। স্যার ওলফের মতে, কোহিনুর মুঘলদের অধিকারে ছিল ২১৩ বছর, আফগানদের অধিকারে ছিল ৬৬ বছর এবং ২০১১ সাল নাগাদ ব্রিটেনের অধিকারে ১২৭ বছর। এ হীরা দ্বাদশ শতাব্দীতে ভারতের অন্ধ্রপ্রদেশের গুন্টার জেলার হিন্দু অধ্যুষিত সন্তোষনগর অঞ্চলে কল্লর গ্রামে কল্লুর খনি থেকে উত্তোলন করা হয়। একই সঙ্গে কোহিনুরের যমজ দরিয়া-ই-নুরও উত্তোলন করা হয়। 

 

ইতিহাসের সবচেয়ে মূল্যবান সিংহাসন

১৭০০ শতাব্দীতে মুঘল সম্রাট শাহজাহান সম্পূর্ণ সোনা ও হাজারো বহু মূল্য মণিমুক্তার সমন্বয়ে এই সিংহাসন নির্মাণ করেন। পৃথিবী বিখ্যাত হীরা কোহিনুরও ব্যবহৃত হতো ময়ূর সিংহাসনের শোভা হিসেবে। ১৭৩৯ সালে নাদির শাহ ভারত আক্রমণ করে বহু মূল্যবান ধনরত্নের সঙ্গে এই সিংহাসনও নিজের দেশে নিয়ে যান। ১৭৪৭ সালে নাদির শাহ আততায়ীর হাতে নিহত হন। আর এরপরই আসল ময়ূর সিংহাসনটি হারিয়ে যায়। বিখ্যাত ময়ূর সিংহাসন, যার খ্যাতি ছিল দুনিয়াজোড়া। ফারসিতে একে বলা হতো ‘তখত-ই-তাবুস’। ময়ূর সিংহাসন নামটি পরে দেওয়া হয়। পরবর্তী পারস্য অধিপতিরা তাদের সিংহাসনকে এ নামেই ডাকতেন। সিংহাসনের নাম ‘ময়ূর সিংহাসন’।  কারণ সিংহাসনের পেছনে দুটি ময়ূরের ছবি ছিল, যারা তাদের অনিন্দ্য সুন্দর পেখম ছড়িয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। আর এই পেখমগুলো খচিত ছিল নানারকম দুষ্প্রাপ্য আর অতিমূল্যবান রত্নপাথর দিয়ে। এর মাঝে ছিল নীলকান্তমণি, পান্না, চুনি কিংবা পদ্মরাগমণি, মুক্তা ও অন্যান্য মূল্যবান পাথর।

 

বিশ্বের সবচেয়ে দামি গুপ্তধন ভাইকিংদের সম্পদ

গুপ্তধন মানেই দুর্লভ মূল্যবান জিনিস। আর এই গুপ্তধনের ইতিহাসে সবচেয়ে দামি মনে করা হয় ইংল্যান্ডের কিউয়ারডেলে খুঁজে পাওয়া ভাইকিংদের সম্পদ। সময়কাল ১৮৪০ খ্রিস্টাব্দ। রিবেল নদীর তীরে ভেঙে যাওয়া বাঁধ নির্মাণের সময় একদল শ্রমিক হঠাৎ একটি সিসার তৈরি বাক্স খুঁজে পায়। বাক্সটি খুলে তারা হতবাক। এই মামুলি চেহারার বাক্সে তারা খুঁজে পায় প্রায় ৮,৬০০ পদের নানা জিনিসপত্র, যার মধ্যে ছিল রুপার গয়না, মুদ্রাসহ রুপার নানা তৈজসপত্র। এটি ছিল ভাইকিং রাজ্যের চিহ্ন বহনকারী সবচেয়ে বড় রত্নভান্ডার। যারা এই ভান্ডারের সন্ধান পেয়েছিল তারাও কিন্তু খালি হাতে ফেরেনি, একটি দুটি মুদ্রা তারা নিজেরাও রাখতে সক্ষম হয়েছিল। মূল্য আনুমানিক ৩.২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।

 

ভাস্কর্যের মূল্যে প্রথমে আছে ভেনাস ডি মেলো

ভেনাস ডি মিলোর ভাস্কর্যটি বিশ্বজুড়ে এতটাই পরিচিত যে, জনপ্রিয়তার দিক থেকে মোনালিসা ও ডেভিডের পরই এর অবস্থান। প্রায় ২,০০০ বছরের পুরনো এ ভাস্কর্যটি নারীর। বাহুহীন এই বিখ্যাত পাথরের ভাস্কর্র্যটি প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল কালের অতল গহ্‌বরে। ভেনাস ডি মিলো প্রাচীন গ্রিক ভাস্কর্যের অন্যতম বিখ্যাত রচনাগুলোর একটি। ১৩০ এবং ১০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মাঝে নির্মিত হয়েছিল এই এটি। প্রেম ও সৌন্দর্যের দেবী আফ্রোদিতিকে চিত্রিত করে ভেনাস। ১৮২০ সালের ৮ এপ্রিল জোরগস কেন্ট্রটাস নামক ব্যক্তি মিলো দ্বীপের ধ্বংসস্তুপে মূর্তিটি খুঁজে পান। পরবর্তীতে অষ্টাদশ লুইসকে উপহার হিসেবে দেওয়া হলে তিনি ১৮২১ সালে ল্যুভর মিউজিয়ামে মূর্তিটি দান করেন। দাম ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার উল্লেখ করা আছে।

 

একজনের নাস্তার মূল্য ৪০ লাখ টাকার বেশি!

একজনের এক বেলার নাস্তার মূল্য ৪০ লাখ টাকার বেশি! সত্যিই এমনটা ঘটেছে। রাশিয়ান ব্যবসায়ী সহস্র কোটিপতি রোমান আবরাহিমভিচের বেলায়। ম্যানহাটনের এক রেস্টুরেন্টে অল্প কিছুক্ষণের জন্য বসেছিলেন নাস্তা খেতে। রেস্টুরেন্টে বসে তিনি খাবার অর্ডার করা শুরু করেন আর রেস্টুরেন্ট বেয়ারাদের দৌড়াদৌড়ি শুরু হয়ে যায়। হাইপ্রোফাইল এই ব্যবসায়ীকে তারা চিনতে পেরেছিল। কিন্তু খাবার শেষে ছোট্ট বিলের কাগজটি হাতে নিয়ে কোনো ভাবান্তর হলো না রোমান আবরাহিমভিচের। সেখানে লেখা ছিল প্রায় ৪০ লাখ টাকারও বেশি বিল। পুরো টাকা শোধ করে বেরিয়ে যান তিনি। কিন্তু বিলের কাগজটি মিডিয়াকর্মীদের বদৌলতে পৃথিবীর মানুষ জানল এই লোকের এক বেলা খেতে কত টাকা লাগে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর