মানুষের সভ্যতার ইতিহাস সর্বদাই নিজের কল্পনা, শক্তি, বুদ্ধি, চিন্তা, মানসিক দৃঢ়তা, সাহসিকতা, ক্ষমতার সীমানাকে অতিক্রম করার ইতিহাস। প্রযুক্তির সফল ব্যবহার মানুষের হাতে এনে দিয়েছে অভাবনীয় অর্জন। একই সঙ্গে পেছনের ব্যর্থতাকে বিদায় জানাতে এবং জটিল কাজগুলো সহজ করতে প্রযুক্তিনির্ভরতা বাড়ছে দিনের পর দিন। তাই বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে এর ভবিষ্যৎ ব্যবহার পরিকল্পনাও অনেক বেশি। যে শহরের প্রযুক্তি যত উন্নত, সে শহর অর্থনৈতিক দিক থেকেও তত উন্নত। বিশ্বের সেরা হাইটেক শহর নিয়ে লিখেছেন সাইফ ইমন
>> সানফ্রান্সিসকো, যুক্তরাষ্ট্র
বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় স্থান যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার সানফ্রান্সিসকোয় অবস্থিত সিলিকন ভ্যালি। ৩০০ বর্গমাইল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই জায়গা সান ফ্রান্সিস্কো এবং স্যান হোসের সমুদ্র আর পাহাড়ে ঘেরা একটি স্থান। তবে এটি নিছক একটি স্থানই নয়, বরং পৃথিবীর তথ্য প্রযুক্তি, উদ্ভাবন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের গ্লোবাল সেন্টার বলা চলে। এমন কি বর্তমানে সিলিকন ভ্যালিকে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের জন্মস্থান হিসেবে পরিগণিত করা হয়। আধুনিক বিশ্বের প্রাণকেন্দ্রও বলা চলে একে। এখানে রয়েছে সহস্রাধিক স্মার্টআপ প্রতিষ্ঠান, রয়েছে ফেসবুক, অ্যাপল, গুগল, সিসকো সিস্টেমস, অ্যাডোবি, ইবে, ইনটেল, এইচপিসহ নামকরা সব প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়। এগুলোর জন্মও ঘটেছে সিলিকন ভ্যালিতে। টেকনোলজিতে পেশাজীবীদের জন্য সবচেয়ে আকর্ষণীয় এই শহরটি। প্রতিনিয়ত নতুন আবিষ্কারে বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে তাদের হাত ধরে। সিলিকন ভ্যালির প্রযুক্তিবিদরা ২৪ ঘণ্টা শুধু প্রযুক্তি নিয়েই ব্যস্ত থাকেন। ১৯৯৫ সালের পর সিলিকন ভ্যালি হয়ে ওঠে ইন্টারনেট অর্থনীতি এবং উচ্চ প্রযুক্তি-সংক্রান্ত বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে।
>> টরেন্টো, কানাডা
প্রযুক্তি ব্যবসার ৪০ শতাংশ হয় কানাডার টরেন্টো শহরে। আর তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, প্রযুক্তিচিন্তায় বিশ্বের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শহর এটি। দেশটির মধ্যে যেমন এটি বৃহত্তম শহর তেমনি উত্তর আমেরিকারও চতুর্থ বৃহত্তম শহর টরেন্টো। এজন্য একে উত্তরের সিলিকন ভ্যালিও বলা হয়। টরেন্টোকে মূলত আধুনিক উদ্ভাবনের অন্যতম প্ল্যাটফরমও বলা চলে। বিশ্বের বিভিন্ন শীর্ষ প্রতিষ্ঠানেরও আইকন এটি। এই শহরে ফেসবুক, টুইটার, লিংকডইন, গুগল ছাড়াও বেশ কিছু নামিদামি প্রতিষ্ঠানের অফিস রয়েছে। বিশ্বমানের গবেষণা কেন্দ্র থাকায় এটি যে কারও জন্য প্রযুক্তি বিষয়ে বিশ্বস্ত গন্তব্য হয়ে উঠেছে। এটি শুধু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগের ক্ষেত্রে অবদান রেখেছে তা কিন্তু নয় বরং স্বচালিত যানবাহন থেকে শুরু করে জীবন বাঁচানোর অত্যাধুনিক ডিভাইসের ব্যবহারে রেখেছে উল্লেখযোগ্য অবদান। আইফোন এমন একটি অ্যাপ তৈরি করেছে যা তাৎক্ষণিকভাবে হƒদরোগ এবং স্নায়ুতন্ত্র বিশ্লেষণ করে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ দিতে সক্ষম। এ ছাড়াও বছরজুড়ে কোম্পানিগুলো বিপুল পরিমাণ কর্মক্ষেত্রে তৈরি করে থাকে।
>> প্যারিস, ফ্রান্স
লা দিফেন্সের এই অতি আধুনিক রূপের সঙ্গে ঐতিহাসিক রূপকথার নগরী প্যারিসের এখন আর মিল নেই। কারণ সেই রূপকথার নগরী আজকের অত্যাধুনিক প্যারিস। রূপকথার সঙ্গে যেন কোনো মিল নেই বরং এখানে এসে মনে হয় যেন কল্পবিজ্ঞানের যুগের অতি আধুনিক এক শহরে চলে এসেছেন। অত্যাধুনিক হওয়ার পাশাপাশি এই শহর পৃথিবীতে ঐতিহাসিক শহরও বটে। প্যারিসের ঐতিহাসিক ল্যুভর মিউজিয়ামের ঘরে একদিকে হাজার বছরের ইতিহাস আজও সযতেœ সংরক্ষিত আছে। সেই মিউজিয়ামের বিশাল চত্বর থেকে পশ্চিম দিকের দীর্ঘ ঐতিহাসিক সরলরেখার শেষে প্রায় ১০ কিলোমিটারের মধ্যে একবিংশ শতাব্দীর অত্যাধুনিক স্থাপত্য প্যারিসের এক অতি আধুনিক রূপ। ইউরোপের মধ্যে সবচেয়ে বড় ব্যবসা কেন্দ্র বলা যায় এই লা দিফেন্সকে। ফ্রান্সসহ পৃথিবীর অনেক বড় বড় করপোরেট অফিসের ঠিকানা প্যারিসের এই লা দিফেন্স। ফলে এই শহর হয়ে উঠেছে প্রযুক্তির উৎকর্ষতার কেন্দ্রবিন্দু। এই শহরে বসবাসরত মানুষ উপভোগ করতে পারছে বিশ্বের অত্যাধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা।
টোকিও, জাপান
প্রযুক্তি-বিশ্বে জাপানের রাজধানী টোকিওর অবস্থান অনেক এগিয়ে। শহরটিতে নতুন কেউ পা দিয়েই টের পাবেন ভিন্নতা। দ্রুততম ট্রেন সিস্টেম থেকে শুরু করে স্মার্টফোনের প্রযুক্তি, রোবোটিক্স এমনকি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সর্বাধুনিক প্রয়োগ আপনাকে হতবাক করবে। তাদের রেস্টুরেন্ট থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি জীবন বীমা কোম্পানিতে মানুষের বদলে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা স্থান করে নিয়েছে। ২০২০ সালের অলিম্পিক খেলার আসরে নিরাপত্তার দায়িত্বও পালন করবে রোবট। টেক গ্যাজেট, পরবর্তী প্রজšে§র মোবাইল ফোন, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি পণ্য ও দ্রুতগতির যানবাহন তৈরিতে এই শহরটির জুড়ি নেই। ভবিষ্যতের নেতৃত্ব দেবে এই টোকিও। প্যানাসনিক, নিক্কন, সনিসহ বেশ কিছু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের জন্ম এখানে।
সিঙ্গাপুর সিটি, সিঙ্গাপুর
এশিয়ার মধ্যে প্রযুক্তিতে শীর্ষ শহরের তালিকায় একধাপ এগিয়ে রয়েছে সিঙ্গাপুর সিটি। সমগ্র বিশ্বে তার অবস্থান তৃতীয়। মাত্র ৪০ বর্গ কিলোমিটারের ছোট এই দেশের প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ। শহরের মেরিনা বে স্যান্ড এবং গার্ডেন বাই দ্য বে স্থাপনা দুটি তারই উদাহরণ। অধিকাংশ দোকান ও শপিং সেন্টার ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত। গবেষণা মতে, বেশিরভাগ প্রোগ্রামার এবং উদ্যোগী পুঁজিপতির বাড়ি রয়েছে এই শহরে। তবে এই শহরটি ক্রমাগত নতুন অবকাঠামো এবং অত্যাধুনিক প্রযুক্তির শহর হিসেবে পরিচিত হচ্ছে। এ ছাড়া ভবিষ্যতের সবচেয়ে উচ্চ প্রযুক্তির শহর হতে চলেছে। এমআইটির সঙ্গে অংশীদারিত্বে দেশটিতে স্মার্ট ট্রান্সপোর্ট চালু হতে যাচ্ছে। এই প্রযুক্তির ব্যবহার মাইলফলক হবে।
সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
অস্ট্রেলিয়ার প্রযুক্তিতে শীর্ষ শহর হচ্ছে সিডনি। এখানে জীবনযাত্রা অনেক প্রযুক্তিবান্ধব। এখানে নিয়মকানুনও অনেক কড়া। সবচেয়ে বড় কথা অস্ট্রেলিয়ার বাসিন্দারা অনেক বেশি সচেতন। ফলে অস্ট্রেলিয়ার সিডনি হয়ে উঠেছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির শহর হিসেবে।
এখানকার শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শুরু করে গবেষণার জন্য রয়েছে বৈশ্বিক সুযোগ-সুবিধা। শহরের পরতে পরতে রয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির প্রয়োগ। আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের সর্বোচ্চ ব্যবহার করছে শহরটি। এখানকার সব দোকান ও শপিং সেন্টার ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত। অনেকের মতে, বিশ্বের অনেক বিখ্যাত আইটি উদ্যোক্তার আবাস এই শহরে। শহরটির ক্রমাগত নিত্যনতুন অবকাঠামো শহরটিকে করেছে আলাদা।
>> সিউল, দক্ষিণ কোরিয়া
বিশ্বের প্রযুক্তির রাজধানী হিসেবে খ্যাত দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী শহর সিউল। হাইটেক প্রযুক্তির বিশ্বের অন্যতম সেরা শহর এটি। এটি এমন একটি শহর যেখানে অধিকাংশ মানুষ কাজ করে হাই টেক কোম্পানিতে। শহরটির অলিগলি, পার্ক, রাস্তাসহ ১০ হাজার ৪৩০টি স্থানে রয়েছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ওয়াইফাই ব্যবস্থা। দক্ষিণ কোরিয়ার মূল আয়ের অধিকাংশ আসে এই শহর থেকেই। সিউলে এলজি, স্যামসাং, হুন্দাই-কিয়াসহ ১০০-এর বেশি বিশ্বমানের কোম্পানির প্রধান কার্যালয় রয়েছে। এখানকার ৯০ ভাগ কোরিয়ান দ্রুতগতির ব্রডব্যান্ড লাইন ব্যবহার করে। যার গতি প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ১০০ মেগাবাইট। শহরের প্রতিটি জায়গায় নাগরিক ও পর্যটকদের জন্য রয়েছে বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ। এ ছাড়াও ২০২২ সালের মধ্যে সিউলকে প্রযুক্তিতে আরও অনেক বেশি এগিয়ে নিতে পরিকল্পনা রয়েছে শহরটির নগরপিতার। এতে তৈরি হবে নতুন কর্মসংস্থান, বাড়ানো হবে প্রযুক্তির উন্নয়ন।
>> সেনজেন হংকং, চায়না
সিলিকন ভ্যালি, চায়না চায়নার সিলিকন ভ্যালি হিসেবে পরিচিত সেনজেন হংকং লাগোয়া একটি শহর। এর আয়তন ২ হাজার বর্গকিলোমিটার। সোয়া ১ কোটি জনসংখ্যার এই শহরের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো- এতে রয়েছে বহু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয়। বিশ্বের প্রযুক্তি ব্যবসায়ীরা আইটি পণ্য কিনতে এখানে ভিড় করেন। ঝকঝকে সুউচ্চ ভবনে সাজানো গোছানো শহরে চলে জমকালো আলোর খেলা। পরিকল্পিত এই শহরে রয়েছে সবুজের সমারোহ। শুধু এই শহর বলেই নয়; প্রযুক্তি খাতে গোটা চীনের অগ্রগতি যে কোনো দেশের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ বটে। ২০ বছর ধরে চীনের প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নিয়ে কারও তেমন মাথা ব্যথা ছিল না। তারা অন্যান্য দেশের প্রযুক্তি পণ্যগুলোর অনুলিপি করে অপেক্ষাকৃত সস্তায় বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছিল। এ জন্যই চীনের পণ্যগুলোকে একটু তাচ্ছিল্যের সঙ্গে দেখছিল মানুষ। তবে তারা মৌলিক গবেষণা এবং প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ বাড়িয়ে দিয়েছে।
>> শিকাগো, যুক্তরাষ্ট্র
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তির শহর হচ্ছে শিকাগো। জনবহুল শহর হিসেবেও এই শহরের নামডাক রয়েছে। করোনার আগে রেকর্ড পরিমাণ অর্থাৎ ৫৮ মিলিয়ন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক অতিথিকে স্বাগত জানিয়েছিল। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া পেতে বেশির ভাগ মানুষ প্রতি বছর শিকাগোয় অবস্থান করে। এটি নিউইয়র্কের পরে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পরিদর্শনকারী শহর। শহরটি ২০১৮ সালের টাইম আউট সিটি লাইফ ইনডেক্সের প্রথম স্থান অর্জন করে, যা ৩২টি শহরের ১৫ হাজার ব্যক্তির বৈশ্বিক জীবন মানের জরিপের ওপর ভিত্তি করে তৈরি। শহরের ল্যান্ডমার্কগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মিলেনিয়াম পার্ক, নেভি পিয়র, ম্যাগনিফিসেন্ট মাইল, শিকাগো আর্ট ইনস্টিটিউট, মিউজিয়াম ক্যাম্পাস, উইলস (সিয়ার্স) টাওয়ার, বিজ্ঞান ও শিল্প জাদুঘর এবং লিংকন পার্ক চিড়িয়াখানা। এখানে বিশ্বখ্যাত অনেক কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে।
>> বেঙ্গালুরু, ভারত
ভারতের সিলিকন ভ্যালি হিসেবে অভিহিত করা হয় বেঙ্গালুরুকে। তথ্য প্রযুক্তি শিল্পেরও রাজধানী বলা হয় একে। প্রযুক্তির উন্নয়ন ও উদ্ভাবনে এটি দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে। ভারতের সবচেয়ে বড় প্রযুক্তির শহরও এই বেঙ্গালুরু। সে দেশের মোট আইটি রপ্তানির ৩৩ শতাংশ তৈরি হয় বেঙ্গালুরু থেকে। এখানে অফিস খুলেছে মাইক্রোসফট, ইসরো, উইপ্রো, ইনফোসিস, গুগলসহ বেশ কিছু নামিদামি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান। এই শহরে ২ হাজারটির বেশি তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা রয়েছে। কৃষি ও উৎপাদন শিল্প থাকলেও এখানে তথ্য-প্রযুক্তি শিল্প রাজ্যের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান ভিত্তি। দেশের তৃতীয় জনবহুল শহর দাক্ষিণাত্যের মালভূমির উচ্চভূমিতে এটি অবস্থিত। এক সময় বেঙ্গালুরু ছিল সবুজ চারণভূমি ও গাছ-গাছালিতে ভরা। অথচ বর্তমানে এটি তথ্য-প্রযুক্তির প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি এটি বিখ্যাত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং প্রযুক্তিবিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানেরও প্রাণকেন্দ্র। যেমন- ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স, ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, বেঙ্গালুরু এখানে অবস্থিত। ৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ভারতের আইটি শিল্পের প্রায় অর্ধেক বেঙ্গালুরুতে অবস্থিত।
১৯৮০ সালের দিকে বেঙ্গালুরু যাত্রা শুরু করে। সেই দশকে বেঙ্গালুরুতে কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়।
টেক্সাস ইনস্ট্র–মেন্ট প্রথম বিদেশি কোম্পানি হিসেবে বেঙ্গালুরুতে অফিস খোলে। বিশ্বের শীর্ষ আইটি সেবা কোম্পানির পাঁচটির চারটিই ভারতভিত্তিক। এই শহর ভারতের সেরা আইটি বিশেষজ্ঞ সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারদের প্রধান আকর্ষণ। বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানি অন্যান্য দেশের তুলনায় বেঙ্গালুরুতে কাজ করতে অনেক আগ্রহী। তারা যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের তুলনায় এক-চতুর্থাংশ কম খরচে অত্যন্ত যোগ্যতাসম্পন্ন আইটি কর্মীদের দ্বারা কাজ করাতে পারে। বেঙ্গালুরু, শুধু আইটি শিল্পেই প্রসিদ্ধ নয়; অন্যান্য প্রধান শিল্প যেমন- বিমান, ইলেকট্রনিক্স, জৈবপ্রযুক্তি এবং মেশিন তৈরির কারখানাও রয়েছে এখানে। সর্বোপরি বেঙ্গালুরু ভারতের আউটসোর্সিংয়ের কেন্দ্রবিন্দু এবং বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় আউটসোর্সিং গন্তব্যের একটি। নতুন নতুন আইটি কোম্পানি এ শহরে দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে।
>> লন্ডন, যুক্তরাজ্য
প্রযুক্তির দিক থেকে আরও একটি মেগা সিটি হচ্ছে যুক্তরাজ্যের লন্ডন।
প্রায় ২ হাজার বছর আগে গোড়াপত্তন ঘটে লন্ডন শহরের। শুরু থেকেই ইউরোপের বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই লন্ডন। গবেষকরা বলেন, বহু শতাব্দী-প্রাচীন শহর কখনো নির্দিষ্ট ধরনের স্থাপত্যের দ্বারা চিহ্নিত হয় না। তারা বহু শতাব্দী পেরিয়েছে এবং সম্ভবত যুদ্ধ বা অভ্যন্তরীণ সংকটের মধ্য দিয়ে গেছে। তাই তাদের রাস্তাগুলো এবং বিল্ডিংগুলো বরং সেই দীর্ঘ অস্তিত্বের প্রতিচ্ছবি বহন করে। যুক্তরাজ্যের রাজধানী এই লন্ডনও তাই। এটি যেন নিজেই হাজার বছরের ইতিহাস বয়ে বেড়াচ্ছে। শতবর্ষ পেরিয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লন্ডন প্রযুক্তিগতভাবে বিশ্বের অনেক শহর থেকে অনেক এগিয়ে। টেক ওয়ার্ল্ডে লন্ডনকে শীর্ষস্থানীয় ভাবা হয়। বিশ্বের আধুনিক সব প্রযুক্তির সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে এখানকার অবকাঠামো। সেই সঙ্গে রয়েছে বৈজ্ঞানিক গবেষণার উন্মুক্ত দ্বার। গোটা বিশ্ব থেকে প্রযুক্তিবিদরা এই শহরে এসে ভিড় করেন। তবে সাম্প্রতিক দশকগুলোয় লন্ডন আশ্চর্যজনক আধুনিক স্থাপত্য হিসেবে পরিণতি পেয়েছে। লন্ডন একবিংশ শতাব্দীর জন্য নবায়ন করা হয়েছে। ২ হাজার বছরেরও বেশি পুরনো ইতিহাসসমৃদ্ধ লন্ডন শহর নিজেই এক বিশাল জাদুঘর। তবে এই শহরে এক শরও বেশি জাদুঘর আছে, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ। এদের মধ্যে ব্রিটিশ মিউজিয়াম, ভিক্টোরিয়া অ্যান্ড আলবার্ট মিউজিয়াম, ন্যাচারাল হিস্টরি মিউজিয়াম, সায়েন্স মিউজিয়াম ও মিউজিয়াম অব লন্ডন সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য। যে কোনো দেশের প্রাণ হচ্ছে তার অর্থনৈতিক কাঠামো। এদিক থেকে লন্ডন যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। এক হিসাবে বলছে, লন্ডনের অর্থনীতির আয়তন প্রায় ৬০ হাজার কোটি মার্কিন ডলার। এই শহরের অর্থনীতি বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম মহানগর অর্থনীতি। এই অর্থনীতির বেশির ভাগই প্রযুক্তিনির্ভর। ভবিষ্যতের পৃথিবীতে লন্ডন প্রযুক্তি দিয়েই নিজের অবস্থান শক্ত রাখবে- এটিই মনে করছেন বোদ্ধারা। প্রযুক্তিতে তারা এতই উন্নতি করেছে যে, লন্ডন শহরের অর্থনীতি আরেকটি উন্নত দেশ সুইডেনের সমগ্র অর্থনীতির সমান। লন্ডনের অর্থনীতি সমগ্র যুক্তরাজ্যের অর্থনীতির প্রায় এক-চতুর্থাংশ (২২%) গঠন করেছে; যা রীতিমতো বিস্ময়কর এবং ঈর্ষণীয়।