মঙ্গলবার, ৮ মার্চ, ২০২২ ০০:০০ টা

দানের মাঝে নারীদের অনন্য নজির

মেজর নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ (অব.) পিএইচডি

দুস্থ মানুষের সেবায় নিজেকে উজাড় করে দেওয়া রেমন ম্যাগাসাসি শান্তি পুরস্কার এবং নোবেল শান্তিসহ অসংখ্য পুরস্কারজয়ী দেবীতুল্য নারী মাদার তেরেসার মতে- ‘আমরা কতটুকু দান করি তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। গুরুত্বপূর্ণ হলো- কোনো কিছু আমরা কতটা আন্তরিকতা বা ভালোবাসা নিয়ে দান করি।’ পুরুষ শাসিত বিশ্বে উপার্জন উপভোগ এবং দানের ক্ষেত্রে পুরুষরা অনেক বাড়তি সুবিধা পায়। তবে বাধা পেরিয়ে নারীর এগিয়ে যাওয়ার উদাহরণ কম নয়। তাই জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর ‘নারী’ কবিতার শুরুতেই লিখেছেন : ‘সাম্যের গান গাই-আমার চক্ষে পুরুষ রমণী কোন ভেদাভেদ নাই।/বিশ্বের যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ নারীর নীরব অবদান অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আলোচনা বা স্বীকৃতির বাইরে থাকে। তারপরও কিছু নারী তাঁদের সম্পদ এবং জীবনের অধিকাংশ সময় মানবসেবায় এমনভাবে অকাতরে দান করেন যে কোনোক্রমেই তা আলোচনার বাইরে থাকে না। দাত্রী নারীদের মহান ও চিরকল্যাণকর সৃষ্টির কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা আজ সময়ের দাবি।

 

মেলিন্ডা গেটস [ আমেরিকা ]

‘প্রতিদিন ঘুম থেকে ওঠেই আমরা দুজন এমন একটি পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে আমাদের সম্পদ ব্যয় করার স্বপ্ন দেখি, যেখানে প্রতিটি মানুষ ভালো থাকার এবং নিজ প্রতিভা ও যোগ্যতা কাজে লাগিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টির সুযোগ পাবে।’ এমন ধরনের আশা নিয়েই বিশ্বের প্রথম কাতারের ধনী, আমেরিকা তথা বিশ্ববাণিজ্যের মুঘল, সফল সফটওয়্যার নির্মাতা, বিনিয়োগকারী, লেখক এবং দাতা বিল গেটস এবং তাঁর প্রাক্তন স্ত্রী মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটস। ২০০০ সালে নিজেদের গড়া বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা ফাউন্ডেশন’ নামের দাতব্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বময় নানা ধরনের দাতব্য কার্যক্রম শুরু করেন মেলিন্ডা। তাঁর জন্ম ১৯৬৪ সালের ১৫ আগস্ট আমেরিকার টেক্সাস রাজ্যের ডালাস শহরে। আমেরিকার ডিউট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিবিএ এবং এমবিএ সনদ অর্জনের পর মেলিন্ডা বিশ্বেসেরা প্রযুক্তিবিদ বিল গেটসের স্বনামধন্য মাইক্রোসফট কোম্পানিতে মার্কেটিং ম্যানেজার হিসেবে যোগদান করেন। তাঁর হাত ধরেই মাইক্রোসফট মাল্টিমিডিয়ার বিশ্বসেরা প্রযুক্তি যেমন : মাইক্রোসফট ওয়ার্ড, পাবলিশার মানি, এক্সপেডিয়া প্রভৃতি জগৎময় ছড়িয়ে পড়ে। ৯০ দশকের শুরুতে মেলিন্ডা মাইক্রোসফটের জেনারেল ম্যানেজারের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৯৪ সালের প্রথমদিকে মাইক্রোসফটের প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটসের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের ঘরে জন্ম নেয় তিন সন্তান। সন্তানদের যত্ন নিতে গিয়ে মেলিন্ডা মাইক্রোসফটের চাকরি ছেড়ে দিলেও নানা ধরনের দাতব্য বা সেবামূলক কাজে জড়িয়ে পড়েন। বিল গেটস এবং মেলিন্ডা উভয়ে তাঁদের গড়া ফাউন্ডেশনের কো-ফাউন্ডার। এ ফাউন্ডেশন নারী-পুরুষের মাঝে সমতা, বিশ্বময় উন্নয়ন, নিজ নিজ ক্ষেত্রে উন্নতির সুযোগ সৃষ্টি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নীতি উন্নয়নসহ নানা ক্ষেত্রে সহায়তা করে। ওয়াশিংটনে ফাউন্ডেশনের হেড অফিস এবং ভারত, চীন, ব্রিটেন, জার্মানি, ইথিওপিয়া, আবুজা, নাইজেরিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় তাঁদের আঞ্চলিক অফিস রয়েছে। এ ফাউন্ডেশনে কাজ করেন প্রায় ১ হাজার ৮০০ কর্মী। প্রতিষ্ঠার পর দুই দশকে বিল ও মেলিন্ডা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ৬০ হাজার কোটি ডলারেরও বেশি অনুদান বিতরণ করেন। বর্তমানে এই ফাউন্ডেশনের সম্পদের মূল্য প্রায় ৫০ হাজার কোটি ডলার। এ সম্পদের আয় থেকেই বিশ্বময় সেবা দিয়ে যাচ্ছেন বিল ও মেলিন্ডা। ২০২০ সালে আমেরিকার ৪৯টি রাজ্যে এবং বিশ্বের নানা প্রান্তের ১৩৪টি দেশের পিছিয়ে পড়া মানুষ বিল ও মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের কল্যাণে উন্নত জীবনের পথে এগিয়ে যায়। দুঃখজনক হলেও সত্য, ২০২১ সালের আগস্টের প্রথম সপ্তাহে আদালতের মাধ্যমে তাঁরা ২৭ বছরের বিবাহিত জীবনের অবসান ঘটান। বিভিন্ন সূত্রমতে, এ সময় তাঁদের প্রত্যেকের ৭ হাজার ৬০০ কোটি ডলারের সম্পদ ছিল। বিবাহবিচ্ছেদের পরও উভয়েই ‘কো-চেয়ার’ হিসেবে ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফউন্ডেশনের’ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে অতি সম্প্রতি মেলিন্ডা গেটস তাঁর অধিকাংশ আয় ও সম্পদ ওই ফাউন্ডেশনের বদলে বিশ্বের বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে দান করার ঘোষণা দেন। এই মহান দানবীরের মতে ‘একজনের কাছে এত  সম্পদের পাহাড় জমা থাকা একটি অবাস্তব বা নিষ্ঠুর বিষয়। আমি বিশ্বাস করি যারা এ সৌভাগ্য লাভ করেছেন তাদের উচিত সুচিন্তিত ও সর্বোত্তম উপায়ে তা দান করা।’

 

অপরাহ উইনফ্রে [ আমেরিকা ]

আমেরিকার স্মরণকালের জনপ্রিয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব অপরাহ গেইল উইনফ্রে। তাঁর জন্ম ১৯৫৪ সালের ২ জানুয়ারি। ১৯৮৬ সালে তাঁর উপস্থাপিত ‘দি অপরাহ  উইনফ্রে শো’ বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। পাশ্চাত্যের মিডিয়া ইতিহাসে অনুষ্ঠানটিকে সবচেয়ে জনপ্রিয় বলে গণ্য করা হয়। ১৯৮৬ থেকে ২০১১ পর্যন্ত টানা ২৫ বছর এ টকশোর জনপ্রিয়তা অটুট ছিল।

অপরাহ উইনফ্রের জীবন শুরু হয় দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে। তাঁর দরিদ্র মা কিশোরী অবস্থায় গর্ভধারণ করেন এবং একজন ‘একক মা’ বা ‘সিঙ্গেল মাদার’ হিসেবে আমেরিকার মিসিসিপি গ্রামে উইনফ্রের জন্ম দেন। কৃষ্ণবর্ণের উইনফ্রে দারিদ্র্যের মধ্য দিয়েই বেড়ে ওঠেন এবং নানা প্রকার প্রতিকূলতা, নির্মমতা ও বিরূপ পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। শিশুকালেই তিনি পারিবারিকভাবে নির্যাতিত হন এবং মাত্র ১৪ বছর বয়সে গর্ভবতী হন। তাঁর গর্ভ থেকে এক অপরিপক্ব ছেলে সন্তানের জন্ম হলেও জন্মের পরই এই সন্তানের মৃত্যু ঘটে। পরবর্তীতে পিতাসম এক নাপিতের বাড়িতে ঠাঁই মেলে উইনফ্রের। স্কুলে পড়া অবস্থায় রেডিওতে খন্ডকালীন চাকরি নেন তিনি এবং ১৯ বছর বয়সে সান্ধ্য সংবাদ উপস্থাপক সহকারীর দায়িত্ব পালন করেন। অল্প বয়সে একজন কৃষ্ণাঙ্গ হিসেবে সংবাদ উপস্থাপনের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয় তাঁর মাধ্যমে। এরপর তাঁর শুধুই এগিয়ে চলা। যা চূড়ান্ত রূপ পায় ১৯৮৬ সালে ‘দি অপরাহ উইনফ্রে শো’র মাধ্যমে। পরবর্তীতে তিনি নিজেই অভিনেত্রী, নির্মাতা, প্রযোজক ও লগ্নিকারক এবং নির্দেশক হিসেবে মিডিয়া জগতে নতুন এবং ঈর্ষণীয় অবস্থান তৈরি করেন। দারিদ্র্যকে জয় করে মাত্র ৩২ বছর বয়সে তিনি মিলিয়নিয়ার অর্থাৎ কোটিপতিতে পরিণত হন। ৪১ বছর বয়সে বিশ্বের একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান হিসেবে তাঁর কাছে ৩৪০ মিলিয়ন বা ৩৪ কোটি ডলারের সম্পদ জমা হয়। ২০০০ সালে তাঁর মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৮০ কোটি ডলার, যা তাঁকে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে ধনী কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানের মর্যাদা এনে দেয়। ফোর্বস ম্যাগাজিনের মতে, ২০০৪ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত একমাত্র অপরাহ উইনফ্রেই ছিলেন পৃথিবীর একমাত্র কৃষ্ণাঙ্গ বিলিয়নিয়ার বা শত কোটি ডলারের মালিক। ২০০৩ সালে তিনিই প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ বিলিয়নিয়ার হওয়ার রেকর্ড গড়েন। ২০১৪ সালে ৩০০ কোটি ডলারের সম্পদ অর্জনের পাশাপাশি তিনি একমাত্র নিজ বা একক চেষ্টায় আমেরিকানদের মধ্যে সবচেয়ে ধনী হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।

বিপুল সম্পদ তাঁকে আরও লোভী বা কৃপণের বদলে উদার ও দানবীরে পরিণত করেছে। ২০০৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত উইনফ্রে ছিলেন আমেরিকার সবচেয়ে ধনী ৫০ জনের মধ্যে একজন। ২০১২ সালের মধ্যে তিনি ৪০০ মিলিয়ন বা ৪০ কোটি ডলার শুধু শিক্ষা খাতেই দান করেন। ২০১২ সালে তিনি আমেরিকার জর্জিয়া রাজ্যের মোরহাউস কলেজের ৪০০ শিক্ষার্থীর জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করেন। মিডিয়া জগতে দুই যুগপূর্তি উপলক্ষে নিজ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ধন্যবাদ জানাতে তিনি ২০০৬ সালের গ্রীষ্মে হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে এক বিনোদন ভ্রমণের ব্যবস্থা করেন, যেখানে সপরিবারে যোগ দেন ১ হাজার ৬৫ জন। ২০১৩ সালে উইনফ্রে ‘স্মিথসোনিয়াস ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব আফ্রিকান হিস্ট্রি অ্যান্ড কালচার’ নামক জাদুঘরে ১২ মিলিয়ন বা ১ কোটি ২০ লাখ ডলার দান করেন। ১৯৯৮ সালে তাঁর উদ্যোগে গড়ে ওঠে “অপরাহ’স অ্যাঞ্জেলস নেটওয়ার্ক” নামক সেবা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাপী অলাভজনক সেবা সংস্থাসমূহে সাহায্য প্রেরণ করে। প্রতিষ্ঠার পর দ্রুতই এই প্রতিষ্ঠান ৮০ মিলিয়ন বা ৮ কোটি ডলার সংগ্রহ করে। এই প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক ব্যয় উইনফ্রে ব্যক্তিগতভাবে বহন করেন। ২০০৫ সালে সামুদ্রিক ঝড় (হ্যারিকেন) ‘ক্যাটরিনা’য় আমেরিকার ওরলিয়ানসে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। অপরাহ অ্যাঞ্জেল নেটওয়ার্ক তাৎক্ষণিকভাবে ১১ মিলিয়ন বা ১ কোটি ১০ লাখ ডলার তহবিল সংগ্রহ করে। যা পরবর্তী এক বছরের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত টেক্সাস, মিসিসিপি, লুইসিয়ানা ও আলবেনিয়ায় দুস্থদের গৃহনির্মাণে ব্যয় হয়। সাউথ আফ্রিকার ‘হেনলি অন ক্লিপ’ নামক স্থানে ২০০৭ সালে ২২ একর জায়গার ওপর উইনফ্রের উদ্যোগে গড়ে ওঠে ‘অপরাহ উইনফ্রে’ লিডারশিপ একাডেমি ফর গার্লস’। এ জন্য উইনফ্রে ব্যয় করেন ৪০ মিলিয়ন বা ৪ কোটি ডলার। নিঃসন্তান উইনফ্রে সময় পেলে নিজেই অনলাইনে এই স্কুলের মেয়েদের ক্লাস নেন এবং অনুপ্রেরণা জোগান।

 

বিয়ন্সে নোলস [ আমেরিকা ]

নব্বই দশকের শেষভাগে পাশ্চাত্যের সংগীত ভবনে সাড়া জাগিয়েছিল তিন জনপ্রিয় মার্কিন মহিলা শিল্পীর গড়া ব্যান্ড ‘ডেসটেনিস চাইল্ড’। এই ব্যান্ডটিকে মেয়েদের নিয়ে গড়া বিশ্বের সবচেয়ে ব্যবসা সফল ব্যান্ড বলে গণ্য করা হয়। এই ব্যান্ডের প্রাণভ্রমর বা মূল শিল্পী হলেন অপরূপ সুন্দরী গায়িকা বিয়ন্সে গিজাল নোলস কার্টার। ১৯৮১ সালের ৪ সেপ্টেম্বর আমেরিকার টেক্সাস রাজ্যের হিউস্টনে জন্ম নেওয়া এ শিল্পী গান পরিবেশন ছাড়াও গান রচনা ও অভিনয় করেও মন জয় করেছেন বিশ্ববাসীর। ছোটবেলা থেকেই গানের চর্চা শুরু করেন বিয়ন্সে। নব্বই দশকের শুরুতেই সাফল্য ধরা দিতে থাকে তাঁর জীবনে। তবে ১৯৯৬ সালে ‘ডেসটেনিস চাইল্ড’ ব্যান্ড গড়ার মধ্য দিয়ে দ্রুতই বদলে যায় তাঁর জীবন। ২০০২ সালে কমেডি সিনেমা ‘অস্টিন পাওয়ারস ইন গোল্ড মেম্বারসে’ ফক্সি ক্লিওপেট্রা নামক এক গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বিয়ন্সে পা রাখেন রুপালি পর্দায়। অন্যদিকে যৌথভাবে গান রচনার মধ্য দিয়ে তিনি সাফল্য লাভ করেন। এককভাবে লেখা তাঁর কিছু গানও জনপ্রিয়তা লাভ করেন। বিশেষত নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে লেখা ‘ইনডিপেনডেন্ট ওমেন’ এবং ‘সারভাইবার’ তাঁর অনন্য সৃষ্টি। এমনিভাবে দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে গান, গানের অ্যালবাম, স্টেজ শো, ট্যুর মুভি, মিউজিক ভিডিও, লাইভ টিভি শো এবং গান রচনা তাঁর শিল্প প্রতিভার বিকাশ ঘটায়। সাফল্য ও পুরস্কারের বন্যায় ভাসায় এবং আর্থিক দিক থেকে ব্যাপকভাবে উন্নতি ঘটায়। ২০০৮ সালে আমেরিকার বিজনেস ম্যাগাজিনের প্রকাশিত তথ্যমতে, ২০০৭-০৮ এই সময়ে বিভিন্ন শিল্পমাধ্যম থেকে তাঁর প্রাপ্ত আয় ৮০ মিলিয়ন বা ৮ কোটি ডলার অতিক্রম করে। ২০১৪ সালে তিনি ছিলেন ইতিহাসের পাতায় সবচেয়ে বেশি আয় করা কৃষ্ণাঙ্গ সংগীত তারকা। ২০১৮ সালে তাঁর সম্পদের মূল্য ছিল প্রায় ৩৫৫ মিলিয়ন বা ৩৫ কোটি ৫ লাখ ডলার। ধারাবাহিক সাফল্য ও অর্জন বিয়ন্সেকে উদার ও মানবদরদি করে তুলেছে। ২০০২ সাল থেকে তিনি ও তাঁর অপর দুই সঙ্গী মিলে ‘নোওয়েলেস-রোল্যান্ড সেন্টার’ থেকে মানবসেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। ২০০৬ সালে হ্যারিকেন ‘ক্যাটরিনায়’ গৃহহীনদের বাসস্থান নির্মাণে তিনি বিভিন্ন দাতা সংস্থাকে সহায়তা করেন এবং এককভাবে শুরুতেই প্রায় আড়াই লাখ ডলার প্রদান করেন। একইভাবে ২০০৮ সালের ইকি নামক হ্যারিকেনে গৃহহারাদের পাশেও দাঁড়ান বিয়ন্সে। গালফ কোস্ট রিলিফ ফান্ডে তিনি এককভাবে প্রায় ১ লাখ ডলার দান করেন। ২০০৭ সালে তিনি ৪৩টি পরিবারকে বাসস্থান নির্মাণ করে দেন। এসব গৃহ রক্ষণাবেক্ষণে ২০১৬ সালে দান করেন ৭ মিলিয়ন বা ৭০ লাখ ডলার। মাদকাসক্ত তরুণ সমাজকে সুপথে ফিরিয়ে আনতে ২০০৯ সালে বিয়ন্সে ‘ফিনিক্স হাউস’ নামক সংগঠনের মাধ্যমে ৪ মিলিয়ন বা ৪০ লাখ ডলার ব্যয় করেন এবং তাঁর মায়ের মাধ্যমে তাঁদের স্বাভাবিকভাবে আয় রোজগার করার জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেন। হাইতিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর অসহায়দের সহায়তার জন্য বিয়ন্সের উদ্যোগে ‘টি-শার্ট’ বিক্রি করে ১ মিলিয়ন বা ১০ লাখ ডলার সংগ্রহ ও বণ্টন করা হয়। অতিরিক্ত ওজনের শিশুদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অগ্নিনির্বাপণের সময় প্রাণ হারানোদের পরিবারের পাশে সবসময়ই পাওয়া যায় বিয়ন্সেকে। তিনি অসহায়দের সহায়তার জন্য বেশ কিছু সংগঠনের শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করেন। ২০১৩ সাল থেকে নারীর ক্ষমতায়নের উন্নয়নে তিনি বিভিন্ন সংগঠনকে সহায়তা করে চলেছেন। বিভিন্ন কল্যাণমূলক কাজের জন্য তহবিল সংগ্রহের ক্ষেত্রে তাঁর অগ্রগামী ভূমিকা অনন্য নজির সৃষ্টি করেছে। কৃষ্ণাঙ্গদের অধিকার রক্ষার অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকায় তাঁকে পাওয়া যায়। ‘ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার’ আন্দোলনের সময় ২০১৬ সালে আমেরিকার ফ্লিন্ট নামক শহরের পানিতে ক্ষতিকারক জীবাণু ছড়িয়ে পড়ে। বিয়ন্সে বিশুদ্ধ পানির জন্য দান করেন ৮২ হাজার ডলার। তিনি তাঁর স্বামী জে জির সঙ্গে যৌথভাবে ক্রমাগত দান করে চলেছেন। আমেরিকায় ২০১৭ সালের হ্যারিকেন হারভির পর দুস্থদের মধ্যে ৭৫ হাজার ম্যাট্রেস বিছানা প্রদান করেন এবং তাদের খাবারের ব্যবস্থা করেন। বহু অ্যালবাম এবং ট্যুর থেকে প্রাপ্ত অর্থের পুরোটাই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের কল্যাণে ব্যয়ের বহু নজির সৃষ্টি করেছেন বিয়ন্সে। ২০২০ সালে কভিডের কারণে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের কল্যাণে তিনি ৬ মিলিয়ন বা ৬০ লাখ ডলার অনুদান প্রদান করেন। এ ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে কভিড চলাকালে প্রতি সপ্তাহে ১৪ টন খাবার, ৫০০ পরিবারকে গৃহস্থালি সামগ্রী ও ১০০ জন বয়স্ককে প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন বিয়ন্সে। সেই সঙ্গে অকাতরে খাদ্য ও চিকিৎসাসামগ্রী নিয়ে হাজির হন কভিড আক্রান্ত রোগীদের পাশে। কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতিষ্ঠিত করতে পুঁজি দিয়েও তিনি সহায়তা করেন। কৃষ্ণাঙ্গদের ৭১৫টি ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য তাঁর অনুদান ছিল ৭০ লাখ ডলারেরও বেশি। আফ্রিকার বহু দেশে নানাভাবে সাহায্য ও সহায়তা নিয়ে তিনি প্রতিনিয়ত হাজির হচ্ছেন।

 

ওলাজুমুকে [ নাইজেরিয়া ]

মাত্র ১৪ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি, ১৯ বছরে বিজ্ঞানে স্নাতক সনদ লাভ এবং ২৩ বছরে শিল্পায়নের জন্য অর্থসংস্থান সংক্রান্ত সরকারি অফিসে যোগ দিয়ে নিজ দেশ নাইজেরিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন স্থপতি ওলাজুমুকে ওলুফুন মিলোলা অ্যাডেনোও। তাঁর জন্ম ১৯৬৮ সালের ১৬ অক্টোবর নাইজেরিয়ার ইবাডান অঞ্চলে। ১৯৯৪ সালে মাত্র ২৫ বছর বয়সে সরকারি চাকরি ছেড়ে ওলাজুমুক ‘এডি কনসাল্টিং’ নামে নিজস্ব ডিজাইন ফার্ম গড়ে তোলেন। কোকাকোলা কিংবা লরিয়েলের মতো বিশ্বমানের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং নানা ধরনের সরকারি স্থাপনার নকশা তৈরি করে অল্প সময়েই সাফল্য অর্জন করে তাঁর ফার্ম। ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বহু সাফল্যের দেখা পান এই কৃষ্ণাঙ্গ স্থপতি। বিশ্বের প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহে বক্তৃতা দেওয়ার জন্যও তাঁর সুনাম রয়েছে। জ্বালানি ক্ষেত্রের কারিগরি বিষয় নিয়েও কাজ করে তাঁর প্রতিষ্ঠান। কাজের পাশাপাশি জনসেবা বিশেষত নারীর ক্ষমতায়ন তাঁর অন্যতম নেশা এবং ভালো লাগার বিষয়। এ ভালো লাগা থেকেই ১৯৯৯ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন অসাম ট্রেজারস ফাউন্ডেশন। শুরুতেই নাইজেরিয়ার জনবহুল ও বৃহৎ শহর ল্যাগোসে সেবা ছড়িয়ে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায় এই ফাউন্ডেশন। ২০৩০ সালের মধ্যে মূলত ১ হাজার তরুণীকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো যোগ্য করে গড়ে তুলতে কাজ করছে অসাম ট্রেজারস ফাউন্ডেশন। শহরের সুবিধাবঞ্চিত শিশু, তরুণী ও মহিলাদের একটি ক্যাম্পের মাধ্যমে সংগঠিত করে স্কুল বা কলেজের শিক্ষার ধারাবাহিকতা রক্ষা বা ঝরে পড়া রোধ তাঁর অন্যতম সাফল্য। কিশোরী ও তরুণীদের যৌন হয়রানি ও যৌন রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে অবিরাম সচেষ্ট ট্রাস্টের কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকরা। বিগত দিনে ওলাজুমুকের সহাতায় নতুন জীবনের সন্ধান পেয়েছে প্রায় ৭০ হাজার মানুষ। যাদের অধিকাংশ কিশোরী, তরুণ, যুবতী ও নারী।

 

জেনিফার পিটার  [ আমেরিকা ]

২০০০ বছর ধরে চলা সাম্রাজ্যবাদ, আগ্রাসন আধিপত্যবাদ এবং মানুষ ও সম্পদের ওপর শোষণের ইতিহাসের ওপর দাঁড়িয়ে আছে আমাদের আজকের এই পৃথিবী। ২০১০ সালের শেষে একটি ম্যাগাজিনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনই সাহসী উচ্চারণ করেছিলেন আমেরিকার মহতী নারী জেনিফার পিটার। নভো ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে জেনিফার ও তাঁর স্বামী পিটার ২০০৬ সাল থেকেই নারীর প্রতি সহিংসতা রোধ, কিশোরী ও তরুণীদের সুরক্ষা, নারীর অর্থনৈতিক ভিত রচনা এবং নারীর ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে নানামুখী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এই দম্পতির আরও একটি বড় পরিচয় হলো- জন্মসূত্রে পিটার পৃথিবীর সবচেয়ে ধনীদের অন্যতম প্রখ্যাত মার্কিন ধনকুবের ও বিনিয়োগকারী ওয়ারেন বাফেটের পুত্র। সেই সূত্রে জেনিফার ওয়ারেনের পুত্রবধূ। অন্য একটি সেবা সংস্থার মাধ্যমে শ্বশুরের বরাদ্দকৃত বার্ষিক ১ লাখ ডলার অনুদানের বিষয়টি জেনিফার ১৯৯৬ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত তদারকি করেন। ২০০৬ সালের ২৬ জুন ওয়ারেন বাফেট নাটকীয়ভাবে ঘোষণা করেন যে, তাঁর প্রতিষ্ঠিত বার্কসাইয়ার হাথাওয়ে ইনক-এর সম্পদের একটি বড় অংশ তিনি মানবকল্যাণে দান করবেন। তারই অংশ হিসেবে ৩০ মিলিয়ন বা ৩ কোটি ডলার দেওয়া হয় জেনিফার ও পিটারের বিশ্বস্ত হাতে। উভয়ে মিলে নভো ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন সেবা সংস্থার সাহায্য নিয়ে একের পর এক মানবসেবা কার্যক্রম চালিয়ে যান। তাঁরা ২০০৭ সালে নাইক ফাউন্ডেশনের সহায়তায় ‘দি গার্ল ইফেক্ট’ কর্মসূচিসহ বিভিন্ন নারী উন্নয়নমূলক সেবায় ব্যয় করেন ৩ কোটি ২১ লাখ ডলার। ২০০৮ সালে নভো ফাউন্ডেশনে তৃণমূল পর্যায়ের নারীদের উন্নয়নে ব্যয় করেন প্রায় ৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এভাবে প্রতি বছর বাড়তে থাকে নভো ফাউন্ডেশনের অনুদান ও সেবার পরিধি। ২০২০ সালে তাদের অনুদান প্রায় ২১ কোটি ডলারে পৌঁছে। করোনাকালে নভো ফাউন্ডেশনের সেবা সবার প্রশংসা অর্জন করে। ২০২১ সালে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বন্ধ বা প্রায় বন্ধ স্কুল খোলার লক্ষ্যে ১২ লাখ ডলার ব্যয় করে। প্রায় ৩০ লাখ ডলারের অনুদান দেওয়া হয় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের। ৩ লাখ মানুষের খাবারের ব্যবস্থা করে। এ ছাড়া নারী উন্নয়নে ৫ কোটি ডলার ব্যয়ের প্রতিশ্রুতি দেয়। যদিও নভো ফাউন্ডেশন বিভিন্ন সেবা সংস্থা, দাতব্য প্রতিষ্ঠান এবং এনজিওর মাধ্যমে এই অর্থ ব্যয় করে, তবে সবাই জানে এর নেপথ্যে রয়েছে জেনিফার পিটারের নিরলস শ্রম, মেধা এবং নারী ও শিশুদের সেবা করার অদম্য ইচ্ছাশক্তি।

 

প্রিসিলা চ্যান [ আমেরিকা ]

মহত্ত্ব এবং দয়ার এক নতুন উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন আমেরিকার ম্যানচেস্টারে ১৯৮৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারিতে জন্ম নেওয়া শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. প্রিসিলা চ্যান। তাঁর আরেকটি পরিচয় তিনি ও তাঁর স্বামী মার্ক জাকারবার্গ জনপ্রিয় মেটা প্ল্যাটফরমের ফাউন্ডার, যা কিছুদিন আগেও ফেসবুক নামে পরিচিত ছিল। তিনি বর্তমানে মেটা প্ল্যাটফরমের সিইও। ২০১২ সালের ১৯ মে তিনি ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। আর ২০১৫ সালের ১ ডিসেম্বর তাঁর বিশেষ আগ্রহ ও প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত হয় ‘চ্যান জাকারবার্গ ইনিশিয়েটিভ’ নামের দাতব্য সংস্থা। এই সংস্থা প্রথমত সবার আরও অংশগ্রহণ, ন্যায়ভিত্তিক এবং স্বাস্থ্যসম্মত ভবিষ্যৎ এবং দ্বিতীয়ত স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিজ্ঞান গবেষণা ও জ্বালানি বিষয়ে মানুষের প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে বৈষম্যহীন পৃথিবী গড়ার মহতী প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। আমেরিকার সফটওয়্যার কোম্পানি অ্যান্ডেলার (Andela)  মাধ্যমে এই দাতব্য সংস্থা নাইজেরিয়া, ঘানা ও কেনিয়ায় ৫২ কোটি ৪০ লাখ ডলার ব্যয়ে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট উন্নয়নে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে। ২০১৬ সালে ভারতে নতুনদের কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবসা প্রসার তথা স্টার্চ অ্যাপের জন্য অন্যান্য সেবা সংস্থার সঙ্গে যৌথভাবে ৫ কোটি ডলার ব্যয় করে। এভাবে শিক্ষার্থীদের পুঁথিগত, প্রযুক্তিগত এবং মানসিক সুস্থতার উন্নতিকল্পে অকাতরে দান করে চলেছে এ দম্পতি। আমেরিকার সানফ্রান্সিসকো ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ৫০ কোটি ডলারের তহবিল গঠন করে চ্যান ও মার্ক দরিদ্রদের গৃহ নির্মাণ করে দেন। বিজ্ঞান গবেষণা বিশেষত রোগ প্রতিরোধে এবং ২১০০ সালের মধ্যে রোগমুক্ত পৃথিবী গড়া, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার ব্যাপক উন্নতির মহান ব্রত নিয়ে এগিয়ে চলেছেন তাঁরা।

২০১৫ সালের ২ ডিসেম্বর এক যুগান্তকারী ঘোষণায় প্রিসিলা চ্যানের অনুপ্রেরণা ও মার্ক জাকারবার্গের বদান্যতায় তৎকালীন ফেসবুকের ৯৯% শেয়ার জনকল্যাণে ব্যয় করার নির্দেশনাসংবলিত একটি চিঠি তাঁদের সদ্য ভূমিষ্ঠ কন্যার উদ্দেশ্যে প্রেরিত হয়। এই শেয়ারের তৎকালীন বাজার মূল্য ছিল ৪ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। মানব ইতিহাসে এই ঘোষণা এক অনন্য নজির। যার নেপথ্যে পুরো কৃতিত্বের দাবিদার বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ডা. প্রিসিলা চ্যান।

 

নওয়াব ফয়জুন্নেসা [ বাংলাদেশ ]

বংশগত সূত্রে মুঘল বংশের সন্তান ছিলেন বর্তমান কুমিল্লা জেলার লাকসামের হোমনাবাদ পরগনার অন্তর্গত পশ্চিমগাঁওয়ের জমিদার বাড়িতে জন্ম নেওয়া নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী। ১৮৭৩ সালে বাবার মৃত্যুর পর তিনি জমিদারি লাভ করেন। ১৮৮৯ সালে ইংল্যান্ডের মহারানী ভিক্টোরিয়ার নির্দেশক্রমে তাঁকে ‘নওয়াব’ উপাধি দেওয়া হয়। ১৯০৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু ঘটে। মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর সব ভূসম্পত্তি মানবসেবায় দান করেন। কুমিল্লা শহরের নওয়াব ফয়জুন্নেসা সরকারি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় এবং লাকসামে অবস্থিত নওয়াব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজ তাঁর জীবদ্দশায় তাঁরই অনুদানে গড়া। বহু মাদরাসা ও ছাত্রাবাস প্রতিষ্ঠায় তিনি অকাতরে দান করেছেন। ব্রিটিশ শাসকরা তখন তাঁর কাছ থেকে নগদ অর্থঋণ নিয়ে কুমিল্লার শাসনকার্য পরিচালনা করেন। কুমিল্লা ও লাকসামে তিনি দুটি হাসপাতাল নির্মাণ করেন। ১৮৯৪ সালে পবিত্র হজ পালন করতে গিয়ে নওয়াব ফয়জুন্নেসা মক্কায় হাজিদের জন্য একটি মুসাফিরখানা প্রতিষ্ঠা করেন। নিজ উদ্যোগে নিজ গ্রামে প্রতিষ্ঠিত ১০ গম্বুজ মসজিদের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন এই মহতী নারী।

সর্বশেষ খবর