রবিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

জীবনের শেষ সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘পুনর্জন্মে মিসির আলি হয়ে ফিরতে চাই’

নুহাশ পল্লীতে ২০১২ সালের ২৫ মে সকাল থেকে সন্ধ্যা, বিশ্রাম নিয়ে তিন দফায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে কথা বলেন হুমায়ূন আহমেদ।  তাঁর সাক্ষাৎকারটির চুম্বকাংশ আবারও তুলে ধরা হলো পাঠকদের জন্য। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন- জাকারিয়া সৌখিন রণক ইকরাম

 

আপনিও প্রথমে কবিতা লিখতেন?

: [হাসি] কবিতা লিখেছি। স্কুল ম্যাগাজিনে ছাপা হওয়া আমার প্রথম লেখা ছিল ইংরেজি কবিতা। ইংরেজি পত্রিকায় বাংলা কবিতা ছাপিয়েছি আমার বোন মমতাজ আহমেদ শিখুর নামে। নিজে কবিতা লিখে বোনের নামে ছাপানোর অন্যরকম আনন্দ আছে। কবিতার দুটো লাইন অনেকেরই পরিচিত মনে হতে পারে। কারণ এই দুটো লাইন আমি আমার দ্বিতীয় উপন্যাস ‘শঙ্খনীল কারাগার’-এ ব্যবহার করেছি। লাইন দুটো এরকম- ‘দিতে পারো একশ ফানুস এনে/আজš§ সলজ্জ সাধ একদিন আকাশে কিছু ফানুস উড়াই।’

 

সেখান থেকে গদ্যের জাদুকর আপনি কবি নয় কেন?

: নাহ। কবিতার বিষয়ে আমি তেমন আগ্রহী ছিলাম না। তবে কবি হওয়ার চেষ্টা করলে মনে হয় আমি ব্যর্থই হতাম। কীভাবে যেন আমার সুমতি হলো। লিখতে লিখতে গদ্যটাই বেশি লেখা হয়ে গেল।

 

মৃত্যুর পরের জীবন সম্পর্কে আপনার ধারণা কী?

: ধর্মীয়ভাবে একটা ধারণা সবার মধ্যে আছে। কিন্তু আমার একান্ত ব্যক্তিগত ধারণা হচ্ছে, দ্য মোমেন্ট আই উইল ডাই- আমি মাটির সঙ্গে মিশে যাব। শোন, মানুষের যদি পরকাল থাকে তাহলে পিঁপড়ার কেন থাকবে না? মানুষ আর পিঁপড়ার মধ্যে তো কোনো পার্থক্য দেখি না।

 

তাহলে মৃত্যুটা আপনার কাছে কেমন?

: মৃত্যুটা আমার কাছে খুবই পেইনফুল। মানুষ এত ক্ষমতা নিয়ে পৃথিবীতে আসে, ৭০-৮০ বছর বাঁচে। অথচ একটা কচ্ছপ সাড়ে তিন শ বছর বাঁচে, হোয়াই? কচ্ছপের মতো একটা প্রাণী কেন সাড়ে তিন শ বছর বাঁচবে? আমরা কেন নই?

 

রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে আপনি কি বলবেন?

আবার একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘মরণরে তুহু মম শামও সমান’। [মৃদু হেসে] উল্টা দুই রকম কথা বলে গেছেন। শোন, কবি-সাহিত্যিকরা অনেক কথা বলে। এগুলো নিয়ে মাথা ঘামাও ক্যান?

 

আপনার জীবন-মৃত্যু-আয়ু নিয়ে এখনকার ভাবনাটা কী?

একটা কথা স্পষ্ট বলতে চাই, আমাদের আয়ু মূলত ৫০ বছর। অনেক সময় ৫০-এর পরেও আমরা বেঁচে থাকি। কিন্তু সেটা বাড়তি বাঁচা। আমি তো অতিরিক্ত ১৬ বছর বেঁচে আছি। অনেক দিন বেঁচে গেছি আমি, তাই না। কত লোক তো আছে তার আগেই মারা যান। রোড অ্যাক্সিডেন্ট হয়, এটা হয়, ওটা হয়। আর আমার একটা ডিজিজ হয়েছে। হোক না সেটা ক্যান্সার। কিন্তু এটারও চিকিৎসা চলছে। তাই খামাখা মাথা ঘামিয়ে কি লাভ? আর যদি মারা যাইতে হয় তাহলে মারা গেলাম।

 

পুনর্জš§ থাকলে হিমু, মিসির আলি নাকি শুভ্র- কী হতে চাইবেন?

: পুনর্জš§ বলে কিছু আছে কি না আমার ঠিক জানা নেই। যদি সে রকম কিছু থেকে থাকে তাহলে পরের জন্মে আমি অবশ্যই মিসির আলী হয়ে পৃথিবীতে আসতে চাই।

 

মিসির আলি কেন?

: লজিক। মিসির আলি লজিক্যাল লোক। সে যুক্তির বাইরে কিছু করে না। আর আমারও লজিক খুবই পছন্দ।

 

আপনার কর্মে আপনি কতটা তৃপ্ত? সবচেয়ে বেশি তৃপ্ত কিসে? অতৃপ্তি আছে কি?

: আসলে দুই ধরনের মানুষ আছে। এক ধরনের মানুষ যারা কোনো কিছুতেই তৃপ্ত নয়। কিন্তু আমি খুব অল্পতেই তৃৃপ্ত। অতৃপ্তি ব্যাপারটা আমার মধ্যে নেই। আর যখন যে কাজটা করি সেটাতেই আমি সবচেয়ে বেশি তৃপ্ত হই। আমি যে ছবিটা বানালাম আমার কাছে মনে হয় এটাই আমার সেরা কাজ। সেরা বইয়ের ক্ষেত্রে প্রতিটা নতুন কাজ আমার কাছে শ্রেষ্ঠ মনে হয়। আমার অতৃপ্তি নেই। মে বি আমি ক্রিয়েটিভ লোক না। কারণ শুনেছি ক্রিয়েটিভ লোকদের তৃপ্তি থাকতে হয় না, অতৃপ্তি থাকতে হয়।  

[সংক্ষেপিত]

সর্বশেষ খবর