বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিচিত্র কারাগার

কারাগারের কথা চিন্তা করলে চোখের সামনে ভেসে ওঠে কাঁটাতারের বেড়া, অস্ত্র হাতে নিরাপত্তারক্ষী আর অ্যালার্ম সিস্টেম বেষ্টিত ভবন। যেখানে অপরাধীদের শাস্তি হিসেবে দেওয়া হয় বন্দি জীবন। তবে বিভিন্ন দেশে এমন সব কারাগার রয়েছে যেখানে সবকিছুই স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মতো। এর কোনো কোনোটি আবার হার মানায় বিলাসী জীবনযাপনকেও...

আবদুল কাদের

বিচিত্র কারাগার

আরানজুয়েজ কারাগার

স্পেন

স্পেনের আরানজুয়েজ কারাগার। যেখানে ‘ফাইভ স্টার’ মানের সেল রয়েছে। যেখানে এলে মনে হবে কোনো রিসোর্টে সময় কাটাচ্ছেন। একে পারিবারিক কারাগার বলেও আখ্যায়িত করা যায়। কেননা, কোনো অপরাধী হয়ে এখানে এলে কারাগার কর্তৃপক্ষ পরিবার নিয়ে সময় কাটানোর ব্যবস্থা করে থাকে। ফলে অপরাধীর মনেই হবে না, তিনি কারাগারে আছেন। কারাগারটির সব সুবিধা আসলে তৈরি হয়েছিল বন্দিদের শিশু সন্তানকে নিয়ে স্বাভাবিক সময় কাটানোর জন্য। শিশু সন্তান যেন তার বাবা-মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত না হয় সে জন্য কারাগারের ভিতরেই ফাইভ স্টার হোটেলের আদলে নানা সুবিধা রাখা হয়। বাচ্চাদের জন্য এখানে রয়েছে নার্সারি, খেলার মাঠ এবং থাকার জন্য আলাদা বিলাসী রুম। তবে কারাগারের একমাত্র শর্ত হলো- প্রত্যেক কয়েদিকে সকাল-সন্ধ্যায় রোল কলে উপস্থিত থাকতে হবে।

 

সলেনটুনা কারাগার

সুইডেন

এটি কয়েদিদের প্রাইভেট কারাগার। কারণ, এখানে কয়েদিদের জন্য রয়েছে আলাদা অ্যাপার্টমেন্ট। ঘরগুলোর ভিতরে সুন্দর বাথরুম, বিছানা, পড়ার টেবিল, টিভি সবই রয়েছে। কম্পিউটার আর বইয়ে সাজানো ঘরের দেয়ালে গিটার দেখে অবাক হওয়ার কিছু নেই। একে পরিবেশবান্ধব কারাগারও বলা হয়ে থাকে। এ জন্য ২০১৯ সালে পুরস্কারও জিতেছে কারাগারটি। পরিবেশবান্ধব উদ্যোগ হিসেবে কারাগারটির ১১০০ বর্গমিটার ছাদ সবুজের চাদরে ঢাকা হয়েছে। বায়ু চলাচলের জন্য বিশেষ ব্যবস্থার পাশাপাশি আট শ্রেণির বর্জ্য নিষ্পত্তির ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। ৬ হাজার বর্গমিটার কারাগার ভবনটি সম্পূর্ণ কাচে আচ্ছাদিত; যা এর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যায়ামাগারে বন্দিরা ব্যায়ামে ব্যস্ত থাকতে পারেন। যারা বাগানে কাজ করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য রয়েছে সে সুযোগও। সব মিলিয়ে সলেনটুনায় কয়েদি কখনই নিজেকে বন্দি মনে করেন না।

 

ওতাগো সংশোধনাগার

নিউজিল্যান্ড

একে কারাগার না বলে সর্বোত্তম প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বলা যায়। স্থানীয়দের কাছে কারাগারটি ‘মিল্টন হিল্টন’ নামে পরিচিত। কারণ, এতে রাগবি কোর্ট থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি খেলাধুলার ব্যবস্থা রয়েছে। বিশ্বের সেরা কারাগারগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘ওতাগো কারেকশন ফ্যাসিলিটি’। নিউজিল্যান্ডের কারাগারটি সত্যিকার অর্থেই একটি বিশেষ সংশোধনাগার। এখানকার কয়েদিদের পুনর্বাসনে সবচেয়ে বেশি নজর দেওয়া হয়। এখানে অপরাধী কিংবা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের প্রশিক্ষিত করে গড়ে তোলা হয়। প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে এখানে আছে রান্নাবান্না, গবাদি পশু পালন, হাঁস-মুরগি পালন। এমন কি আসামিদের এখানে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। কারাগারের সেলগুলো বেশ পরিপাটি। প্রতিটি সেল দামি সব সিরামিক টাইলস দিয়ে নির্মিত। বন্দিদের এখানে শাস্তির পরিবর্তে মানসিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

 

হ্যালডেন কারাগার

নরওয়ে

নরওয়েতে অপরাধী হওয়াটাও দারুণ ব্যাপার। কেননা, দেশটির কারাগারগুলোয় অপরাধীরা অতিবাহিত করেন আয়েশী জীবন। তেমনি একটি কারাগার হলো- ওস্টফোল্ডের হ্যালডেন কারাগার; যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম কারাগার। অপরাধ বিশ্লেষকরা একে কারাগার বলতে নারাজ। তাদের ভাষায় হ্যালডেন হলো- সংশোধনাগার। অপরাধীদের পুনর্বাসনের উদ্দেশ্যে ২০১০ সালে কারাগারটি প্রতিষ্ঠিত হয়। বাইরের জীবনকে অনুসরণ করে কারাগারটির অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। এখানকার কয়েদিদের সেলগুলো নানা রঙে রাঙানো। প্রতিটি সেল নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছে দামি সব সিরামিক টাইলস। বড় পর্দার টিভি, ফ্রিজ আর দামি দামি সব আসবাবপত্রে সাজানো হয়েছে সেলগুলো। বন্দিদের মানসিক বিকাশের জন্য রয়েছে খেলার মাঠ। এখানে কারারক্ষীদের হাতে নেই কোনো অস্ত্র। এমনকি দায়িত্বে আছেন নারী নিরাপত্তারক্ষীও।

 

সান পেদ্রো কারাগার

বলিভিয়া

বলিভিয়ার সান পেদ্রো কারাগারটি যেন রূপকথার কোনো জায়গা। যে কারও চোখ কপালে উঠতে বাধ্য। এটি বিশ্বের অন্যতম বিচিত্র কারাগার। কর্তৃপক্ষ কারাগার প্রাঙ্গণকে একটি আবাসিক এলাকায় রূপ দিয়েছে। যেখানে কয়েদিরা সবাই একই পরিবারের বাসিন্দা। এ ছাড়াও কারাগার প্রাঙ্গণে রয়েছে দোকান, ক্যাফে এবং অনেক সুবিধা। এর প্রধান ফটক পেরিয়ে ভিতরে গেলেই চোখে পড়বে ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করছে, মার্কেটে বেচা-বিক্রিতে ব্যস্ত সব দোকান, রেস্তোরাঁ, হোটেল সবই আছে এখানে। এ জেলখানায় নেই কোনো প্রহরী, নির্দিষ্ট কোনো পোশাক, এমন কি জানালায় লোহার গরাদও নেই এ জেলখানায়। সেলগুলোতে আছে ব্যক্তিগত গোসলখানা, রান্নাঘর, এমনকি টিভিতে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি চ্যানেল দেখার সুযোগ। তবে এ জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হয়। এ জন্য তাদের সবাইকে জেলখানার ভিতরে বিভিন্ন দোকানে কাজ করে আয় করতে হয়।  বিশ্বের সুন্দর কারাগারগুলোর মধ্যে সান পেদ্রো অন্যতম। একে ভ্রমণ কারাগারও বলা হয়। ২০০৭ সালে মার্কাস লুটেম্যানের ‘এল চোকো’ বইয়ে লিখেছেন সান পেদ্রোর গল্প। এক সুইডিশ বন্দি পর্যটকদের কারাগারটিতে ভ্রমণের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর