শুক্রবার, ১০ জানুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

গুণীজন সম্মাননা ২০২০

গুণীজন সম্মাননা ২০২০

তাঁরা সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। কেউ কবিতায়, কেউ কথাসাহিত্যে, কেউ ভাষাসংগ্রামে-মুক্তিযুদ্ধে জীবন বাজি রেখে করেছেন যুদ্ধ; কেউ আবার সাংবাদিকতায়, চিকিত্সায়, শিক্ষায়, আইন পেশায়, কেউ সিনেমা-নাটক-গানে কিংবা ব্যবসা ও শিক্ষাব্যবস্থায় রেখেছেন অসামান্য অবদান। ফুটবল-ক্রিকেট-হকি-দাবা-শ্যুটিংয়ে তাঁদের কেউ কেউ নিজ অবদানে উজ্জ্বল। কালের কণ্ঠ’র দশম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এই ২৫ বিশেষ ব্যক্তিত্বকে ‘গুণীজন সম্মাননা ২০২০’ জানাচ্ছে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ

 

 

আহমদ রফিক

ভাষাসংগ্রাম

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক,  কবি ও প্রাবন্ধিক আহমদ রফিকের জন্ম ১২ সেপ্টেম্বর ১৯২৯, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের শাহবাজপুরে। শিক্ষাজীবন শুরু নড়াইল মহকুমা হাই স্কুলে। এরপর ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে। অসাম্প্রদায়িকতা ও মুক্তচিন্তার ধারক, প্রগতিশীল লেখক, ভাষাসংগ্রামী আহমদ রফিকের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে : কবিতা—‘নির্বাসিত নায়ক’, ‘বাউল মাটিতে মন’, ‘রক্তের নিসর্গে স্বদেশ’, ‘পড়ন্ত রোদ্দুরে’; প্রবন্ধ-গবেষণা—‘বুদ্ধিজীবীর সংস্কৃতি’, ‘রবীন্দ্রনাথের রাষ্ট্রচিন্তা ও বাংলাদেশ’, ‘একুশের ইতিহাস আমাদের ইতিহাস’, ‘ভাষা আন্দোলন : ইতিহাস ও তাত্পর্য’, ‘ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি ও কিছু জিজ্ঞাসা’, ‘রবীন্দ্রভুবনে পতিসর’ প্রভৃতি। পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদকসহ      দেশি-বিদেশি অনেক পুরস্কার।

 

 

তোয়াব খান

সাংবাদিকতা

একেবারেই মামুলি জীবন নয় তাঁর। বহুদর্শী মানুষ তিনি। কেবলই একজন সাংবাদিক নন, সাংবাদিকদেরই সাংবাদিক তিনি। সাংবাদিকতা শুরু দৈনিক সংবাদে। ১৯৭২ সালে দৈনিক বাংলার সম্পাদক হন। ওই সময় বাংলাদেশের প্রশাসনিক ক্ষেত্রে নানা বিচ্যুতি তাঁকে উদ্বুদ্ধ করে কলাম লেখায়। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর প্রেসসচিব। পালন করেছেন প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রেসসচিবের দায়িত্ব। ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক। সম্পাদক হিসেবে আবার ফিরেছেন দৈনিক বাংলায়। পেশাগত জীবনে ছয়টি দশক পেরিয়ে নিঃসন্দেহে তিনি আজ এক প্রতিষ্ঠান। ৮৫ পেরিয়ে আসা এই মানুষটি ২৪ এপ্রিল ১৯৩৪, সাতক্ষীরায় জন্মগ্রহণ করেন।

 

 

জহিরুল হক

খেলা (ফুটবল)

পঞ্চাশ-ষাটের দশকে একই সঙ্গে মোহামেডান, পূর্ব পাকিস্তান আর পাকিস্তান দলে খেলা ফুটবলার জহিরুল হক। জন্ম ৫ জানুয়ারি ১৯৩৫, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে। মোহামেডানে খেলেছেন ১৯৬০ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত। অধিনায়ক ছিলেন বেশ কয়েক মৌসুম। ডিফেন্সে খেলতেন। দুর্ধর্ষ ফরোয়ার্ডত্রয়ী কবির-মারি-আশরাফের সঙ্গে খেলেছেন। ঢাকা লীগ জিতেছেন সাতবার। জিতেছেন আগা খান গোল্ড কাপ। ১৯৬০ সালে করাচিতে গিয়ে করাচিকে হারিয়েই জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন। ফুটবল ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল সেন্ট্রাল প্রেসের হয়ে। প্রথম বিভাগে তাঁর অভিষেক তেজগাঁও ফ্রেন্ডসের হয়ে। পুলিশের চাকরি নিয়ে এরপর পুলিশ দলেও খেলেছেন। সেই চাকরি ছেড়েই দায়িত্ব নেন মোহামেডানের রক্ষণ সামলানোর। দিনে দিনে জহির হয়ে ওঠেন সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার।

 

 

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

শিক্ষা

২৩ জুন ১৯৩৬, মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগরের বাড়ৈখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন প্রাবন্ধিক ও শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বাক্স্বাধীনতা, মানবাধিকার, পরিবেশ সুরক্ষা, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও সামাজিক ন্যায়বিচার বিষয়ক আন্দোলনে অগ্রগণ্য ব্যক্তিত্ব। বাবার চাকরিসূত্রে শৈশব কেটেছে রাজশাহী ও কলকাতায়। পড়াশোনা করেছেন ঢাকার সেন্ট গ্রেগরীজ স্কুল, নটর ডেম কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলা প্রবন্ধসাহিত্য

যাঁদের নিরলস অবদানে সমৃদ্ধ, তিনি তাঁদের অন্যতম। প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে ‘শরত্চন্দ্র ও সামন্তবাদ’, ‘আমার পিতার মুখ’, ‘বেকনের মৌমাছিরা’, ‘বাঙালীকে কে বাঁচাবে’, ‘উপনিবেশের সংস্কৃতি’, ‘বাঙালীর জাতীয়তাবাদ’ উল্লেখযোগ্য। বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদকসহ অনেক পুরস্কার পেয়েছেন।

 

 

সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী

ব্যবসা

সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী এপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের চেয়ারম্যান। জন্ম ২৬ ফেব্রুয়ারি ১৯৪২, কলকাতায়। বাবা স্যার সৈয়দ নাসিম আলী ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রধান বিচারপতি, বড় ভাই এস এ মাসুদ এলাহী কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। পাঁচ পুরুষের পেশা আইন হলেও মঞ্জুর এলাহী আসেন ব্যবসায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতিতে এমএ করেন। ব্যবসায় আসার আগে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকরি নেন। মাত্র ১৫ হাজার টাকা নিয়ে চাকরি ছেড়ে ব্যবসায় নামেন। সুনাম, কঠোর পরিশ্রম ও অঙ্গীকার রক্ষাই ব্যবসায়ীর মূলধন—এমন বিশ্বাস সামনে রেখে এগিয়ে চলেছেন। চামড়ার ব্যবসার সঙ্গে যোগ করেন জুতার ব্যবসা। বর্তমানে বিশ্বের ৮০টির বেশি দেশে এপেক্সের জুতা রপ্তানি হচ্ছে।

 

 

মেজর অব. রফিকুল ইসলাম

মুক্তিযুদ্ধ

 মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর-উত্তম আমাদের গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধের সেই অসম সাহসী বীর সেনানী, যিনি আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণার আগেই বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে অধীনস্থ ইপিআরের বাঙালি সৈনিক ও জেসিওদের নিয়ে পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে চট্টগ্রাম শহর দখলে নেন। মুক্তিযুদ্ধে ১ নম্বর সেক্টরের কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। পেয়েছেন ‘বীর-উত্তম’ খেতাব। জন্ম ১৯৪৩ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর, চাঁদপুর। ১৯৬৩ সালে যোগ দেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলসের চট্টগ্রাম হেডকোয়ার্টার্সে অ্যাডজুট্যান্ট পদে ছিলেন। ১৯৯৬ সালে চাঁদপুর-৫ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। তাঁর লেখা গ্রন্থ ‘লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে’ ও ‘মুক্তির সোপানতলে’ মুক্তিযুদ্ধের উল্লেখযোগ্য সংযোজন।

 

 

আলী যাকের

অভিনয় (নাটক)

স্বাধীনতার পরপর বাংলাদেশের অন্যতম বড় অর্জন মঞ্চনাটক। যাঁদের হাত ধরে শিল্পমাধ্যমটির বিকাশ ঘটেছে, তাঁদের অগ্রসৈনিক গুণী অভিনেতা, সংগঠক ও নির্দেশক আলী যাকের। ‘জাগো বাহে, কোনঠে সবায়’—মঞ্চে যখন তিনি বিদ্রোহী নূরলদীন, তাঁর মুখের সংলাপ শুনে দর্শকের চোখেও জ্বলে ওঠে বিদ্রোহের আগুন। ‘বাকি ইতিহাস’, ‘বিদগ্ধ রমণীকুল’, ‘দেওয়ান গাজীর কিস্সা’, ‘নূরলদীনের সারা জীবন’—তাঁর প্রতিটি নাটকেই নতুন কিছু পেয়েছে দর্শক; হয় নির্দেশনায়, নয়তো অভিনয়ে। টিভি নাটক-চলচ্চিত্রেও আছে তাঁর অসামান্য অর্জন। ‘বহুব্রীহী’, ‘আজ রবিবার’, ‘পাথর সময়’ তাঁর অভিনীত জনপ্রিয় নাটক। বড় পর্দায় ‘আগামী’, ‘নদীর নাম মধুমতি’, ‘লালসালু’তে প্রশংসিত হয়েছেন। লেখালেখি করছেন নিয়মিত। একুশে পদক পাওয়া এই শিল্পীর জন্ম ১৯৪৪ সালের ৬ নভেম্বর, চট্টগ্রাম।

 

 

নির্মলেন্দু গুণ

সাহিত্য (কবিতা)

‘হুলিয়া’র কবি নির্মলেন্দু গুণ। জন্ম ২১ জুন ১৯৪৫, নেত্রকোনার বারহাট্টায়। লেখাপড়া শুরুও সেখানে। উত্তর আকাশ পত্রিকায় প্রকাশিত প্রথম কবিতা ‘নতুন কান্ডারী’ দিয়ে লেখালেখির শুরু। প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’। কবিতার পাশাপাশি গদ্য ও ভ্রমণকাহিনিও লিখেছেন। তাঁর কবিতায় উঠে এসেছে রাজনীতি, ইতিহাস, প্রেম, শ্রেণিসংগ্রাম, স্বৈরাচারবিরোধিতা প্রভৃতি বিষয়। ‘প্রেমাংশুর রক্ত চাই’ ও ‘হুলিয়া’ প্রকাশের পর ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন এই কবি। অন্যান্য গ্রন্থের মধ্যে ‘না প্রেমিক না বিপ্লবী’, ‘অমীমাংসিত রমণী’, ‘তার আগে চাই সমাজতন্ত্র’, ‘আমি সময়কে জন্মাতে দেখেছি’, ‘আমার কণ্ঠস্বর’, ‘আত্মকথা’ উল্লেখযোগ্য। পেয়েছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার।

 

 

ডা. সালেহ আহমেদ

চিকিৎসা

অধ্যাপক ডা. মো. সালেহ আহমেদ চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ। জন্ম ১ অক্টোবর ১৯৫৩, বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ। ১৯৭৮ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। চক্ষু বিষয়ে এফসিপিএস ডিগ্রি অর্জন করেন ১৯৮৩ সালে। ১৯৭৮ সালে ইনসার্ভিস ট্রেইনি হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ২০০৩ সালে তিনি জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে যোগদান করেন। ২০০৪ সালে ওই ইনস্টিটিউটে রেটিনা বিভাগ খোলার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এবং বাংলাদেশে ভিট্রিও রেটিনা বিষয়ে প্রথম অধ্যাপক হিসেবে কাজ করেন। ২০১০ সালে সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর বসুন্ধরা আই হসপিটাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগীর  ভূমিকা গ্রহণ করেন এবং ২০১৪ সাল থেকে এই হাসপাতালে অবৈতনিক পরিচালক হিসেবে কর্মরত।

 

 

ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ

 চিকিৎসা

অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহর জন্ম ১৯৫৪ সালে, জামালপুর জেলার ইসলামপুর। ১৯৭৮ সালে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। কর্মজীবন শুরু ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই। পরে উচ্চশিক্ষা নেন যুক্তরাজ্যে। ছিলেন হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালেও। পরে যোগ দেন বর্তমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে। ২০০৮ সালে অধ্যাপক পদে উন্নীত হন এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। পর্যায়ক্রমে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান এবং একই অনুষদের ডিন হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তাঁকে দুই বছরের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সম্মানজনক ইউজিসি অধ্যাপক হিসেবে ভূষিত করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে নিযুক্ত করা হয়। ২০১৬ সালে তিনি একুশে পদক লাভ করেন।

 

 

সাবিনা ইয়াসমিন

সংগীত

চার দশক ধরে সুললিত কণ্ঠে যিনি বাংলা গানকে মাধুর্যমণ্ডিত করে আসছেন, তিনি সাবিনা ইয়াসমিন। জন্ম ১৯৫৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর, ঢাকা। ফরিদা ইয়াসমিন, ফওজিয়া খান ও নীলুফার ইয়াসমিন—বড় তিন বোনই গানের মানুষ। উচ্চাঙ্গসংগীত, লোকগান, আধুনিক গান, চলচ্চিত্রের গান—সব ঘরানাতেই তাঁর কণ্ঠ সাবলীল। ‘সব কটা জানালা খুলে দাও না’, ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মা গো’, ‘সুন্দর সুবর্ণ তারুণ্য লাবণ্য’—দেশাত্মবোধক এসব গানে তাঁর আকুতিভরা কণ্ঠ আবেগাপ্লুত করেনি এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া কঠিন। দেশীয় চলচ্চিত্রে প্রায় ১২ হাজার গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। আব্দুল আলীম, এন্ড্রু কিশোর ছাড়াও দ্বৈত গান করেছেন কিশোর কুমার, মান্না দের মতো কিংবদন্তির সঙ্গে। স্বীকৃতিও পেয়েছেন। একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার  পেয়েছেন ১০ বার!

 

 

কাজী সালাহউদ্দিন

খেলা (ফুটবল)

দেশের ফুটবলের সবচেয়ে বড় তারকা তিনি। গোল করার দক্ষতা, ফুটবল প্যাশন ও ফ্যাশনে সবার চেয়ে এগিয়ে। বাংলাদেশের প্রথম পেশাদার ফুটবলার হিসেবে খেলেছেন হংকং লীগে। তিনি কাজী সালাহউদ্দিন। জন্ম ২৩ সেপ্টেম্বর ১৯৫৪, ঢাকা। বিএএফ শাহীন স্কুলের মাঠে ফুটবল, ক্রিকেট ও অ্যাথলেটিকসে তাঁর হাতেখড়ি। ১৯৬৮ সালে আজাদ বয়েজে ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরুর পর ওই বছরই দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবলে দিলকুশা ক্লাবে নাম লেখান। ১৯৭০ সালে যোগ দেন মোহামেডানে। এবং মুক্তিযুদ্ধেও। ১৯৭২ সাল থেকে আবাহনীর আকাশি-নীল জার্সিতে মাঠ মাতান। কোচ হিসেবেও দায়িত্ব নেন আবাহনীর। এরপর বাংলাদেশ দলের দায়িত্বেও ছিলেন। এখন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন ফুটবলের এই মহাতারকা।

 

 

আবদুল কাদির মোল্লা

ব্যবসা ও শিক্ষা

অদম্য ইচ্ছাশক্তির অধিকারী আবদুল কাদির মোল্লার জন্ম ১৯৬১ সালের ৮ আগস্ট, নরসিংদীর মনোহরদী। শিক্ষাজীবন নরসিংদী মেরিন একাডেমিতে। কর্মজীবন শেষে গড়ে তোলেন অন্যতম পোশাক উত্পাদনকারী প্রতিষ্ঠান থার্মেক্স গ্রুপ। মানুষ মানুষের জন্য—এই মূলমন্ত্র সামনে রেখে গড়ে তুলেছেন দাতব্য প্রতিষ্ঠান মজিদ মোল্লা ফাউন্ডেশন। আর এই প্রতিষ্ঠানের আওতায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণ ও আর্থিক অনুদান প্রদান করেন। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠা করেছেন আবদুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ। এর ধারাবাহিকতায় তিনি নরসিংদীসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার প্রায় ১৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো নির্মাণ এবং তিন শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণে আর্থিক সহযোগিতা করে আসছেন।

 

 

হাসান আজিজুল হক

সাহিত্য (কথাসাহিত্য)

বাংলা ছোটগল্পের অন্যতম প্রাণপুরুষ হাসান আজিজুল হক। জন্ম ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৩৯, কলকাতার বর্ধমান জেলার যবগ্রাম। নিজ গ্রামেই শিক্ষাজীবন শুরু। পড়েছেন খুলনা বিএল কলেজ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, সাতচল্লিশের দেশভাগ, পাকিস্তানি দুঃশাসন, ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ তাঁর লেখায় দারুণভাবে উঠে এসেছে। জীবনসংগ্রামে লিপ্ত মানুষের কথকতা তাঁর গল্প-উপন্যাসের প্রধান অনুষঙ্গ। ‘আগুনপাখি’ তাঁর শ্রেষ্ঠ উপন্যাস। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘আত্মজা ও একটি করবী গাছ’, ‘নামহীন গোত্রহীন’, ‘পাতালে হাসপাতালে’, ‘সাবিত্রী উপাখ্যান’, ‘ফিরে যাই ফিরে আসি’, ‘এই পুরাতন আখরগুলি’ প্রভৃতি। তিনি আদমজী সাহিত্য পুরস্কার, বাংলা একাডেমি পুরস্কার, একুশে পদক, স্বাধীনতা পুরস্কারসহ দেশি-বিদেশি অনেক পুরস্কার পেয়েছেন।

 

 

মুহাম্মদ কামরুজ্জামান

ক্রীড়া সাংবাদিকতা

জাতীয় দলে খেলা হয়নি, তবে ঘরোয়া পর্যায়ে সর্বোচ্চ স্তরেই খেলেছেন ফুটবল-ক্রিকেট। অমন তো কতজনই রয়েছেন! তবে বল-ব্যাট ছেড়ে হাতে কলম তুলে নেওয়ার পর তিনি হয়ে যান অনন্য একজন। মুহাম্মদ কামরুজ্জামান হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের ক্রীড়া সাংবাদিকতার পথিকৃত্। জন্ম ১৯৪০ সালে কুষ্টিয়ার মেহেরপুর। ষাটের দশকে প্রথম বিভাগ ফুটবল খেলেছেন দাপটের সঙ্গে। ওই দশকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন ক্রীড়া সাংবাদিকতা। তখন সংবাদপত্রে   খেলার সংবাদ ছাপা হতো এক-দেড় কলাম।  তাঁর উদ্যোগেই সেটি পূর্ণ পৃষ্ঠায় রূপান্তরিত হয়। ১৯৬৭ সালের সেপ্টেম্বরে দৈনিক পাকিস্তানে  যোগ দেন। গণমাধ্যমের ক্রীড়া সাংবাদিকদের এখন আলাদা মূল্য। সেটি প্রতিষ্ঠিত তাঁর হাত ধরেই। বাংলাদেশের ক্রীড়া সাংবাদিকতার বাতিঘর তিনি। এখনো বটবৃক্ষের ছায়া হয়ে আছেন সবার ওপর।

 

 

মোফাজ্জল করিম

জনপ্রশাসন

সোনালি সকাল, দুরন্ত দুপুরের লেখক, সাবেক সচিব, কূটনীতিক মোফাজ্জল করিমের জন্ম ৬ আগস্ট ১৯৪১, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া। লেখাপড়া করেছেন মৌলভীবাজার, বগুড়া, নোয়াখালী, ঢাকা ও অস্ট্রেলিয়ায়। সিলেটের হরগঙ্গা কলেজে অধ্যাপনার মধ্য দিয়ে কর্মজীবন শুরু। এরপর যোগ দেন সিভিল সার্ভিস অব পাকিস্তানে। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের বিভিন্ন জেলায় প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন শেষে সচিব হিসেবে নিয়েছেন অবসর। পরে কূটনীতিক ছিলেন যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ডে। মূলত কবি। শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের শুরুটা কেটেছে দেশের বিভিন্ন জেলায়। মৌলভীবাজারের নিস্তব্ধ নিঝুম নীলাকাশে দুপুরের নিঃসঙ্গ কৈশোর পেরিয়ে নোয়াখালী, কুমিল্লার সোনালি দিন তাঁকে করেছে অভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ। তারই পরশ পাওয়া যায় তাঁর কবিতায়।

 

 

বশির আহমেদ

খেলা (হকি)

শৈশব কেটেছে আরমানিটোলা স্কুলের খেলার মাঠ দাপিয়ে। হকি, ফুটবল, ক্রিকেট, অ্যাথলেটিকসহ কোনোটাই বাদ যায়নি। সব খেলায় সপ্রতিভ বশির আহমেদ দেশের ক্রীড়া ইতিহাসে এক সব্যসাচী ব্যক্তিত্ব। জন্ম ১৯৪১ সালে, ঢাকা। তাঁর দীর্ঘ খেলোয়াড়ি জীবনে হকির ঔজ্জ্বল্য বেশি হলেও ১৯৫৬ সালে ক্লাব ক্যারিয়ার শুরু হয় ক্রিকেট দিয়ে। পরের বছর যোগ হয় হকি ও ফুটবল। তিনি পাকিস্তান হকি দলে খেলেছেন; কেনিয়া ও নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে নেমেছেন মাঠে। অসামান্য কৃতিত্বের স্মারক হিসেবে বশির আহমেদ ১৯৬০ সালে পেয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বুর সম্মান, ক্রীড়া লেখক সমিতির ‘সেরা ক্রীড়াবিদের সম্মাননা। ১৯৮০ সালে তাঁকে জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। এ ছাড়া সংগঠক হয়ে কাজ করেছেন ফুটবল, কাবাডি ফেডারেশনসহ বিভিন্ন ক্লাবে।

 

 

ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ

আইন

ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ। আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন দুইবার। প্রধানত সাংবিধানিক ও ব্যবসাসংক্রান্ত মামলা নিলেও দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের পক্ষে ফৌজদারি মামলাও লড়েছেন। এরই মধ্যে আইন পেশায় ৪৬ বছর পার করেছেন। জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৪ জুলাই, চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানার দৌলতপুর। চট্টগ্রাম শহরেই পড়ালেখা শুরু এবং বেড়ে ওঠা। এলএলবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং ব্যারিস্টারি লন্ডনে। ১৯৭৩ সালে বার কাউন্সিলে আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্তির পর নিজের চেষ্টা ও মেধা দিয়ে আইন পেশায় দেশের সেরাদের কাতারে তিনি। শুধুই আইনজীবী হিসেবে নিজেকে সীমাবদ্ধ না রেখে বিচার বিভাগকে কলুষমুক্ত করতে দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি সব সময় সোচ্চার।

 

 

আ ক ম মোজাম্মেল হক

মুক্তিযুদ্ধ

আ ক ম মোজাম্মেল হক সেই অনন্য গৌরবের অধিকারী, যিনি মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগেই ১৯৭১ সালের ১৯ মার্চ গাজীপুরের জয়দেবপুরে প্রতিরোধ যুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। জন্ম ১৯৪৬ সালের ১ অক্টোবর, গাজীপুর। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের শুরু ছাত্রজীবন থেকেই। তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগের গাজীপুর মহকুমা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। গাজীপুর জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ৪৪ বছর ধরে—প্রথমে সাধারণ সম্পাদক, বর্তমানে সভাপতি হিসেবে। জনপ্রতিনিধিত্বের শুরু ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে; পরে পৌর চেয়ারম্যান ও মেয়র নির্বাচিত হন। ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন দ্বিতীয় মেয়াদে। পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান  স্বাধীনতা পদক।

 

 

সৈয়দ আবুল হোসেন

ব্যবসা ও শিক্ষা

শিক্ষা ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদানের জন্য ২৩টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করা সৈয়দ আবুল হোসেনের জন্ম ১ আগস্ট ১৯৫১, মাদারীপুরের কালকিনি। পড়াশোনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। কর্মজীবনে প্রতিষ্ঠার পরই এলাকায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপনে মনোযোগী হন। নিজস্ব অর্থায়নে গড়ে তোলেন ৪টি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজসহ ৬টি কলেজ, ৫৮টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ অসংখ্য প্রতিষ্ঠান। সংসদ সদস্য হিসেবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং ২০০৯ সালে যোগাযোগ মন্ত্রী ও পরে আইসিটি মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রসারে অবদানের জন্য পেয়েছেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, স্বাধীনতা পুরস্কার এবং বিদ্যাসাগর পুরস্কার-২০১৯। 

 

 

ফরিদা আক্তার ববিতা

অভিনয় (চলচ্চিত্র)

কিশোরী বয়সে পুতুল খেলার ছলে বেণি দোলাতে দোলাতেই বড় বোন সুচন্দার হাত ধরে চলে এলেন চলচ্চিত্রে। জহির রায়হানের ‘সংসার’-এ (১৯৬৮) হলেন শিশুশিল্পী। তারপর অনেক পথ, অভিনয় করেই কাটিয়ে দিয়েছেন অর্ধশতাব্দী! আটবার জাতীয় পুরস্কারসহ পেয়েছেন দেশের প্রায় সব নামি পুরস্কার। অভিনয় করেছেন পৌনে তিন শ ছবিতে। ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, ‘আলোর মিছিল’, ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’, ‘সুন্দরী’, ‘নয়নমণি’, ‘কসাই’, ‘লাঠিয়াল’, ‘বাদী থেকে বেগম’, ‘দহন’, ‘স্বরলিপি’—বাংলাদেশের এই ছবিগুলো তো আছেই, হয়েছেন অস্কারজয়ী বাঙালি চলচ্চিত্রকার সত্যজিত্ রায়ের ‘অশনি সংকেত’-এর অনঙ্গ বউ। আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্রাঙ্গণে বাংলাদেশের সবচেয়ে পরিচিত মুখ এই অভিনেত্রী—ফরিদা আক্তার ববিতা। জন্ম ৩০ জুলাই ১৯৫৩ সালে, বাঘেরহাট।

 

 

আব্দুস সাত্তার নিনি

খেলা (শ্যুটিং)

শ্যুটিংয়ে বাংলাদেশের যে গৌরবগাথা আতিকুর রহমানকে সঙ্গী করে, তার শুরুটা করে দিয়েছিলেন ১৯৬২ সালে জন্ম নেওয়া আব্দুস সাত্তার নিনি। ১৯৯০ কমনওয়েলথ গেমসে নিনি-আতিকই প্রথম জানান দেন, বাংলাদেশ এই নিশানাভেদের খেলায় বিশ্বমানের। অকল্যান্ডে সেই আসরে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে পেছনে ফেলে ১০ মিটার এয়ার পিস্তল ইভেন্টে দেশকে সোনা জেতান। মাত্র বছর ছয়েকের ক্যারিয়ার, তাতেই সোনা ফলিয়েছেন। পিস্তল ইভেন্টে জাতীয় পর্যায়ে ৯টি সোনা, ১৯৯৩-এর সাফ গেমসেও নিনি জেতেন দলীয় সোনা। শখের বশে ২৬ বছর বয়সে ক্লাবে নিজের উদ্যোগে পিস্তল আনিয়ে শ্যুটিং শুরু করেছিলেন। ১৯৯০-এর কমনওয়েলথ দলে ক্রীড়া পরিষদ শ্যুটারদের রাখতেই চায়নি, নিনিই নাম ঢুকিয়েছেন; এবং সোনার পদক গলায় ঝুলিয়ে দেশে ফিরেছেন।

 

 

আতিকুর রহমান

খেলা (শ্যুটিং)

নব্বইয়ের দশকের শুরু। দেশে তখন ফুটবলের দাপট। এরই মধ্যে অকল্যান্ডে নতুন খেলার সোনালি ঝংকার বেজে ওঠে। ১৯৯০ কমনওয়েলথ গেমস শ্যুটিংয়ে এয়ার পিস্তল ইভেন্টে আতিকুর রহমান সোনা জেতেন আব্দুস সাত্তার নিনিকে সঙ্গে নিয়ে। অপরিচিত শ্যুটিংকে প্রথম আলোকিত করেন তাঁরা। এরপর আতিকুর রহমান আর পেছনে ফিরে তাকাননি। একের পর এক আন্তর্জাতিক সাফল্যে রাঙিয়েছেন শ্যুটিংকে। ১৯৯১ শ্রীলঙ্কা সাফ গেমসে জেতেন দুটি সোনা—একটি ব্যক্তিগত, অন্যটি দলগত। দুই বছর বাদে ঢাকায় পরের আসরেও দুটি সোনা জয়ের ধারা অব্যাহত রাখেন। ৫ মে ১৯৬৫ জন্ম নেওয়া চট্টগ্রামের এই কৃতী শ্যুটারকে এই অসামান্য অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯৫ সালে স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়।

 

 

নিয়াজ মোরশেদ

খেলা (দাবা)

মাত্র ৯ বছর বয়সে দাবার বোর্ডে ব্যাকরণ মানা চাল দেওয়া রীতিমতো অবিশ্বাস্য ব্যাপার। সে বয়সেই দাবার ব্যাকরণ রপ্ত করা নিয়াজ মোরশেদ একদিন চমকে দেন রুশ গ্র্যান্ডমাস্টার লুতিকভকে। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সফরে এসে প্রেস ক্লাবে খেলতে বসে অবলীলায় বাকি সবাইকে হারালেও ওই শিশুকে কুপোকাত করতে পারেননি লুতিকভ। ২০ চাল খেলে ড্র মেনে নেওয়া রুশ গ্র্যান্ডমাস্টার বলেও যান, ‘এই ছেলে একদিন গ্র্যান্ডমাস্টার হবে।’ সেই নিয়াজ মোরশেদ এক যুগের মাথায় গ্র্যান্ডমাস্টার হয়েও যান। ১৫ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক মাস্টার হওয়ার পর ১৯৮৭ সালে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। গ্র্যান্ডমাস্টার নিয়াজ দেশের সীমা ছাড়িয়ে বাংলাদেশকে নিয়ে যান প্রথম আন্তর্জাতিক সাফল্যের চূড়ায়ও। তাঁর জন্ম ১৩ মে ১৯৬৬, ঢাকা।

 

 

আকরাম খান

খেলা (ক্রিকেট)

একটিমাত্র ইনিংসের ওপর কি একটি দেশের ক্রিকেট দাঁড়িয়ে থাকে? থাকে। যদি তা হয় আকরাম খানের সেই কিংবদন্তিতুল্য ইনিংস।

১৯৯৭ আইসিসি ট্রফি। বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন নিয়ে মালয়েশিয়া যায় বাংলাদেশ। নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে না জিতলেই বিদায়। তখনই আকরামের বীরত্ব। সেই জয়ের ধারাবাহিকতায় লাল-সবুজ পতাকা পায় বিশ্বকাপে ওড়ার অধিকার; জেতে আইসিসি ট্রফিও। অধিনায়ক আকরাম যদি সেই ইনিংসটি না খেলতেন, তাহলে নিশ্চিতভাবেই অন্তত চার বছর পিছিয়ে যেত বাংলাদেশের ক্রিকেট। আকরাম অধিনায়ক ছিলেন; দেশের জার্সিতে ছয় টেস্ট, ৪৪ ওয়ানডে খেলেছেন—তবে সব ছাপিয়ে আইসিসি ট্রফিতে তাঁর সেই অপরাজিত ৬৮ রানই সবার স্মৃতিতে সবচেয়ে উজ্জ্বল। সেই ইনিংস যে বাংলাদেশ ক্রিকেটের আধুনিকতার ভিত্তি!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর