রবিবার, ১০ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

ফ্রান্স এবারও শীর্ষ ফেবারিট

ফ্রান্স এবারও শীর্ষ ফেবারিট

দুঙ্গার ১৯৯৪ বিশ্বকাপজয়ী দলে বেশ কয়েকটা পরিবর্তন ছিল। রোনাল্ডো, রিভালদো আর রবার্তো কার্লোসরা ইতালির বিপক্ষে বিশ্বকাপ জয়ে ছিলেন না। তবে এই তিনটা পরিবর্তন ব্রাজিলকে মানে-গুণে কতটা শক্তিশালী করেছিল তা ফুটবলভক্ত মাত্রই অনুধাবন করতে পারেন। ইতিহাসের সেরা গোলমেশিন রোনাল্ডো। রিভালদোর মতো প্লে-মেকার যুগে যুগে মেলে না। আর রবার্তো কার্লোসকে কে না জানে! কিন্তু কী অবাক করা ব্যাপার, এই ব্রাজিলও তিন তিনটে গোল হজম করল! ১৯৯৮ বিশ্বকাপে ফরাসিরা চমকেই দিয়েছিল বিশ্বকে। ক্ষেপা ষাঁড়ের মতো ছুটছিলেন জিনেদিন জিদান। বলে তার দুটো গুঁতোই শেষ করে দিয়েছিলে ব্রাজিলের শিরোপা স্বপ্ন। একটা ডান পাশের গোলবারে। অপরটা বাম পাশে। জিদানের নিখুঁত দুটো হেডারে সেদিন হতাশ হয়েছিল ব্রাজিলভক্তরা। অবশ্য এই দলটাই একটু রদবদল হয়ে চার বছর পর ব্রাজিলকে পেন্টা শিরোপার স্বাদ উপহার দেয়। ফ্রান্স এরপর ২০০৬ বিশ্বকাপে ফাইনাল খেলে। জিদানের সেই শেষ বিশ্বকাপ। ফরাসিরা এরপর আর ফুটবল দুনিয়ায় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি। কিন্তু ফুটবল যাদের রক্তে-মাংসে। অলি-গলি কিংবা শহুরে রাস্তায় যেখানে জিদানদের মতো ফুটবলারের দেখা মেলে চলতে-ফিরতে। সেখানে বেশি দিন ফ্রান্সকে ফেবারিটের তকমা থেকে দূরে রাখা যাবে কেমনে! ফ্রান্স আবারও বিশ্বকাপের শীর্ষ ফেবারিট। রাশিয়া বিশ্বকাপে ব্রাজিল, জার্মানি আর আর্জেন্টিনার সঙ্গে ফ্রান্সের নামও সমোচ্চারিত। এর অবশ্য যথেষ্ট কারণও রয়েছে। তরুণ একটা দল। কুড়ির আশপাশেই বেশির ভাগের বয়স। পঁচিশ পেরিয়েছেন খুব কমই। ত্রিশের ওপর আছেন হাতে গোনা কয়েকজন। তারাও যে নিয়মিত দলে স্থান পাবেন, কোনো নিশ্চয়তা নেই। কোচ দিদিয়ের দেশম সম্ভবত তরুণদের ওপরই আস্থা রাখবেন। আর রাখবেনই না বা কেন! উনিশের কিলিয়ান এমবাপ্পে মেসি-রোনালদোর শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট নিয়ে টানাটানি করছেন এখনই। আঁতোয়ান গ্রিজমান তো মেসি-রোনালদোর শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে অংশগ্রহণও করেছেন (২০১৬ ব্যালন ডি’অর ও ফিফা বর্ষসেরায় তৃতীয়)। দুজনকে টপকে লা লিগায় সেরা ফুটবলার হয়েছেন তিনি ২০১৬-তে। আশার আলো জাগিয়ে তুলছেন আরও বেশ কয়েকজন। পল পগবা তো নেইমারের আগে সবচেয়ে দামি ফুটবলার ছিলেন। নাবিল ফেকির, ওসমান ডেম্বলেরা এক নতুন ফ্রান্সকে সামনে নিয়ে এসেছেন। এদের সঙ্গে অভিজ্ঞ অলিভিয়ের গিরদ আর লরিসরা তো আছেনই। এসব তারকা ইংলিশ, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ আর জার্মান লিগের নামি ক্লাবগুলোতে খেলছেন। আলো ছড়াচ্ছেন প্রায় প্রতিটা ম্যাচেই। এমন একটা দল নিয়ে যে কোনো কোচই বিশ্বকাপের সোনালি ট্রফি হাতে নিতে চোয়ালবদ্ধ হয়ে লক্ষ্যস্থির করতে পারেন। দিদিয়ের দেশমও তাই করছেন। গত মার্চ থেকে ফরাসিরা ১১টা ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে হেরেছে মোটে দুটো। ড্রও করেছে দুটোতে। বাকিগুলোতে জয়। পরাজিত দলে আছে প্যারাগুয়ে, ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস আর ওয়েলসের মতো দলের নাম। রেকর্ডটা নিঃসন্দেহে ঈর্ষণীয়। ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষ দশে স্থান (নবম) ধরে রেখেছে তারা। রাশিয়া বিশ্বকাপের অন্যতম এই ফেবারিট দলের যাত্রাপথ অবশ্য কণ্টকাকীর্ণ। গ্রুপ পর্বেই দেখা হবে ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ের ১১ (পেরু) ও ১২ (ডেনমার্ক) নম্বর দলের সঙ্গে। এ ছাড়াও গ্রুপে আছে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়া। অবশ্য ফ্রান্সের মতো ‘চ্যাম্পিয়ন স্পিরিট’ নিয়ে এগিয়ে চলা দলের কাছে এসব বাধা হয়তো ‘তুড়ি মেরে উড়িয়ে’ দেওয়ার মতোই ব্যাপার। দেখা যাক, ফরাসিরা ভক্তদের আশা কতটুকু পূরণ করতে পারে!

 

 

সর্বশেষ খবর