শস্যভান্ডার খ্যাত বগুড়ায় শীতকালীন সবজির পাশপাশি গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষে আগ্রহ বেড়েছে স্থানীয় কৃষকদের। জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন সবজি উৎপাদন ও চাষাবাদে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কেউ আগাম জাতের সবজি উঠাচ্ছেন আবার কেউ ক্ষেত পরিচর্যা করছেন ভালো ফলনের আশায়। অনেক কৃষক বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজি বিক্রি করে ভালো দাম পাচ্ছেন।
ফলে আগের চেয়ে আগ্রহ বেড়েছে তাদের। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বলছে, গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে এবার জেলায় ১০ হাজারেরও বেশি হেক্টর জমিতে সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন।
জানা যায়, বগুড়া সদর, শিবগঞ্জ, গাবতলী, শাজাহানপুর, সারিয়াকান্দি, সোনাতলা, ধুনট, নন্দীগ্রামসহ অন্যান্য উপজেলায় গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষে আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের। জেলার মাঠে মাঠে কৃষকরা এখন সবজি চাষে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কেউ আগাম জাতের সবজি উঠাচ্ছে আবার কেউ ক্ষেত পরিচর্যা করছেন ভালো ফলনের আশায়। গ্রীষ্মকালে বিভিন্ন ধরনের সবজি যেমন-পটল, ঢেঁড়শ, কাকরুল, সিম, বেগুন, মূলা, করলা, ঝিঙা, লাউ, বাঁধাকপি, ফুলকপিসহ বিভিন্ন জাতের শাকসবজি উৎপাদন করছেন তারা। সবজি উত্তোলনসহ ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। ভালো ফলন আর ভালো দাম পাওয়ায় বেড়েছে সবজি চাষের জমি। এর আগে শীতকালীন সবজির দাম ভালো পাওয়ায় চাষিরা আগ্রহ সহকারে গ্রীষ্মকালীন শাক-সবজি চাষ শুরু করেছেন।
এদিকে, প্রতি বছর ৪ লাখ মেট্রিক টনের বেশি সবজি উৎপাদন হয় বগুড়ায়। শীতকালীন সবজির পাশপাশি গ্রীষ্মকালীন সবজি উৎপাদনও বেড়েছে জেলায়। শস্যভান্ডার খ্যাত বগুড়া জেলায় সারাবছর বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে থাকেন কৃষকরা। বগুড়ার সবজি মানসম্মত হওয়ায় গোটা দেশেই চাহিদা রয়েছে। ফলে প্রতিবছরই বাড়ছে সবজি চাষের জমি। দাম ভালো থাকায় আগ্রহ বেড়েছে কৃষকদের।
বগুড়ার সদর উপজেলার পীরগাছা এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সকাল থেকে তীব্র রোদ উপেক্ষা করে চাষিরা ফসল ফলাতে ব্যস্ত রয়েছেন। তবে আবহাওয়াজনিত কারণে এবার উৎপাদন কিছুটা কম হলেও মাঠে কৃষক রয়েছেন ক্ষেত পরিচর্যা আর ভালো ফলনের আশায়।
বগুড়া সদরের পল্লীমঙ্গল এলাকার চাষি একরামুল হক জানান, সারা বছরই তিনি বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করে থাকেন। এবছর অতিবৃষ্টি ও তীব্র খরায় ক্ষেতের ফসল কিছুটা নষ্ট হয়েছে। তিনি প্রায় দুই বিঘা জমিতে গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষ করেছেন। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ জমিতে পটল চাষ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে। দামও ভালো পাচ্ছে।
তিনি আরও জানান, সার, কীটনাশকসহ ভালো বীজ সরকারিভাবে সহায়তা পেলে উৎপাদন খরচ কম হতো। কৃষক আরও লাভবান হতো।
বগুড়া সদরের শেখেরকোলা গ্রামের আরেক কৃষক আমজাদ হোসেন জানান, তিন বিঘা জমিতে লাউ চাষ করেছেন। গত বছর ভালো ফলন হয়েছিল। এবারও ভালো ফলন হয়েছে। বাজারে দামও ভালো। প্রতি পিচ লাউ তিনি ৫০ থেকে ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। তবে সার বীজ কীটনাশক ও শ্রমিক খরচ বেড়েছে। যার ফলে উৎপাদন খরচও বাড়ছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত গ্রীষ্মকালীন মৌসুমে ১০ হাজারেরও বেশি হেক্টর জমিতে এবার সবজি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২ লাখ মেট্রিক টন। জেলার মাঠে মাঠে সবজি উৎপাদনে ব্যস্ত কৃষক। আবার হাটে বাজারে গ্রীষ্মকালীন সবজির বেচাকেনা চলছে পুরোদমে। এখনো বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ অব্যহত রয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়ার অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. নাজমুল হক মন্ডল জানান, গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষের জন্য কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষিদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। শস্যভান্ডার খ্যাত বগুড়া জেলা সবজি উৎপাদনে অন্যতম। এই জেলায় প্রচুর পরিমাণ সবজি উৎপাদন হয়ে থাকে। কৃষকদের মাঝে আগের চেয়ে গ্রীষ্মকালীন সবজি চাষে আগ্রহ বেড়েছে। তারা কোনো জমিই আর ফেলে রাখছেন না।
বিডি প্রতিদিন/এমআই