২৫ মে, ২০১৮ ১৮:২৮

অনাহারে বিনা চিকিৎসায় ধুকছেন বীরাঙ্গনা হালিমা

রাহাত খান, বরিশাল:

অনাহারে বিনা চিকিৎসায় ধুকছেন বীরাঙ্গনা হালিমা

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার ও তাদের দোসরদের কাছে যে সকল নারীরা সম্ভ্রম হারিয়েছিল তারাই হলেন বীরাঙ্গনা। ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন যাদের ত্যাগের বিনিময়ে লাল-সবুজের পতাকা পেয়েছিল স্বাধীন বাংলাদেশ, সেই সব বীরাঙ্গনাদের সন্মানিত করতে চেয়েছিলেন জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। 

স্বাধীনতার ৪ দশক পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বীরাঙ্গনাদের তালিকা করে তাদের সুযোগ সুবিধা দেয়ার কথা বলেছেন। হানাদারদের নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার বীরঙ্গনাদের অনেকে পরপারে চলে গেছেন। যারা বেঁচে আছেন, তাদের অনেকই লোকলজ্জার কারণে সেই সব ঘটনা চেপে গেছেন। কিন্তু তাদের মধ্যে যারা এখনো রোগে-শোকে ধুকছেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় আশার আলো দেখছেন তারা। 

তেমনই একজন মৃত্যুপথযাত্রী বীরাঙ্গনা বরিশাল নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ড আলেকান্দা এলাকার হালিমা বেগম। মুক্তিযুদ্ধের সময় হানাদার বাহিনীর কাছে সম্ভ্রম হারিয়েছিলন তিনি। হালিমার মতো হাজার হাজার নারীকে পাক বাহিনীর হাতে ইজ্জত হারাতে দেখেছেন মুক্তিযুদ্ধের সময় খাদ্য বিভাগের কর্মচারী আব্দুল হাকিম সরদার। 

বৃদ্ধ হাকিম আলী বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় খাদ্য বিভাগের দাপ্তরিক কাজে প্রতিদিন ওয়াপদার পাক পাহিনীর ক্যাম্পে যেতে হতো তাকে। ওই সময় দেখতেন প্রতিদিন শত শত নারীকে ট্রাকে করে বিভিন্ন এলাকা থেকে ধরে এনে ওয়াপদা কলোনীতে তাদের উপর চরম পাশবিক নির্যাতন করতো হানাদার ও তাদের দোসররা। আলেকান্দার হালিমা বেগমকেও ট্রাকে করে ধরে নিয়ে নির্যাতন করতে দেখেছেন তিনি। 

হানাদারদের নির্মম নিষ্ঠুরতার ঘৃনা-কষ্ট নিয়েই সারাটি জীবন কাটিয়েছেন হালিমা বেগম। আর নিরবে-নিভৃতে ঝরিয়েছেন চোখের জল। ১০ বছর আগে হৃদ রোগে (স্ট্রোক) আক্রান্ত হয়ে ভারসাম্য হারিয়েছেন তিনি। থাকেন অন্যের জমিতে পরগাছার মতো। জোটেনা ৩ বেলা ভাল-মন্দ খাবার, চিকিৎসা-ঔষধ কিছুই। ভারসাম্য হারিয়ে ফেলায় বলেন অসংলগ্ন কথা-বার্তা। 
 
হালিমার ছেলের বউ রহিমা বেগম জানালেন তার শাশুরির নিরব কান্না আর আহাজারির কথা। তিনি বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তার শাশুরি বিভিন্ন ওয়াক্তের নামাজের পর মোনাজাতে কান্নাকাটি করতেন। তখন তিনি বলতেন, পাক বাহিনীর হাতে সম্ভ্রম হারানোর কথা। এত দিন লোকলজ্জার ভয়ে পুরো পরিবারসহ বিষয়টি চেপে গেলেও সরকার বীরাঙ্গনাদের তালিকা করার উদ্যোগ নেয়ায় অন্ধকারের মধ্যে আলো দেখছেন তারা। 

বীরাঙ্গনাদের সম্মানিত করার সরকারি ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছেন পাক বাহিনীর হাতে সম্ভ্রম হারানো হালিমা বেগমের ছেলে নান্না কাজী। বৃদ্ধা মায়ের সু-চিকিৎসাসহ একটি স্থায়ী বাসস্থানের দাবি জানিয়েছেন বীরাঙ্গনা হালিমার ছেলে নান্না কাজী। 

বরিশাল জেলা ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতারা বলেছেন, তাদের জানা মতে বরিশালে ২/৩ জন বীরাঙ্গনা আছে। এর বাইরে অনেকের কথা শুনলেও লোকলজ্জা-সামাজিকতার কারণে অনেকই সেই কালো অধ্যায়ের কথা স্বীকার করতে চান না। অকৃতজ্ঞ এই জাতীর উচিত ছিল অনেক আগেই তাদের সম্মান জানানো, এতে বিশ্বে বাঙালি জাতীর সম্মান বাড়তো। 

তারা বলেছেন, স্বাধীনতার ৪ দশক পর বীরাঙ্গনাদের তালিকা করা অত্যন্ত কঠিন। তালিকা করতে গ্রামে-গঞ্জে ঘুড়তে হবে, এতে অনেক টাকার দরকার। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী সংগঠনকে পাশ কাটিয়ে আমলা নির্ভর হয়ে পড়ায়, এই তালিকার ভবিষ্যত নিয়ে সন্দিহান জেলা ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতারা। 

বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, বীরাঙ্গনারা মুক্তিযোদ্ধা। তারা ইতিমধ্যেই সরকারের প্রদেয় মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধা পেয়েছেন। কেউ যদি এই এই তালিকা থেকে বাদ পড়ে থাকেন তাদের তালিকাভুক্ত করে সরকারি সুযোগ-সুবিধা প্রদান একটি চলমান প্রক্রিয়া। বরিশালের আলেকান্দার হালিমা বেগম যদি প্রকৃত অর্থেই বীরাঙ্গনা হয়ে থাকেন, তবে যাচাই-বাছাই সাপেক্ষ তিনি সরকারি সুযোগ-সুবিধার আওতায় আসবেন।


বিডি প্রতিদিন/২৫ মে ২০১৮/হিমেল

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর