জঙ্গি সম্পৃক্তায় গ্রেফতার হয়ে জামিনে থাকা ব্যক্তিরা নিয়মিত হাজিরা দেন নিকটস্থ থানায়। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনের আগে-পরে অনেকেই হাজির হননি থানাগুলোতে। এ যেমন বাগমারা থানা পুলিশের তালিকায় থাকা ৪২ জঙ্গির মধ্যে ১৯ জুলাই হাজির হয়েছিলেন মাত্র একজন। দেশজুড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এ হামলায় জঙ্গিরা জড়িত বলে তথ্য পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গোয়েন্দা তথ্য বলছে, চিহ্নিত ও প্রশিক্ষিত জঙ্গিদের হাত আছে এমন নৃসংশতার পেছনে। এরপরই আইনশৃঙ্খা রক্ষাকারী বাহিনীর টার্গেটে রাজশাহী অঞ্চলের চিহ্নিত জঙ্গিরা। ১৩ থেকে ১৯ জুলাই তালিকাভুক্ত জঙ্গিদের অবস্থান নিশ্চিতে কাজ শুরু করেছে পুলিশ ও র্যাব। র্যাব ৫-এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফিরোজ কবীর বলেন, ২০১৬ সালের মামলায় জামিনে আছেন বেশকিছু জঙ্গি। তারা থানায় নিয়মিত হাজিরা দেন। কিন্তু অনেকে এ সহিংস ঘটনার সময় হাজিরা দেননি। তালিকা ধরে ধরে তাদের অবস্থান নিশ্চিত হতে কাজ শুরু করেছে র্যাব।
রাজশাহী জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল আলম জানান, জেলার বিভিন্ন উপজেলায় যেসব জঙ্গি জামিনে আছে, তাদের তালিকা পুলিশের কাছে আছে। বাগমারায় ৪২ জন তালিকাভুক্ত থাকলেও শেষ দিনে মাত্র একজন হাজিরা দিয়েছিলেন। এর পেছনে কারণ কী, সেটি অনুসন্ধানে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। পুলিশের তালিকায় থাকা জঙ্গিদের অবস্থান সহিংসতার আগে-পরে কোথায় ছিল, তার অনুসন্ধান শুরু হয়েছে জানিয়ে রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি বিজয় বসাক বলেন, জঙ্গিদের হাজিরার গড়পড়তা হিসাব দেখলেও আমরা দেখি যে এটি একেবারে অ্যাবনরমাল।
এ অ্যাবনরমালিটিটি আমাদের কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা এটি তদন্তের মধ্যে রেখেছি যে, তারা ওইদিন কোথায় ছিল, অথবা তাদের অবস্থান কোথায় ছিল। তারা যদি আমাদের এখানে না থেকে থাকে, সেদিন যদি তারা, বিশেষ করে যেসব জায়গায় ভয়ঙ্করতম ঘটনাগুলো ঘটেছে দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য, অথবা দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করার জন্য স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি, জঙ্গিরা-হতে পারে তারা সেদিন নরসিংদী আক্রমণের দিন ছিল। এমন হতে পারে ঢাকায়, বিভিন্ন জায়গায়, নারায়ণগঞ্জ এমনকি বগুড়াতেও যদি গিয়ে থাকে-সবকিছুই আমরা দেখব।
র্যাব ৫-এর অধিনায়ক ফিরোজ কবীর বলেছেন, চিহ্নিত জঙ্গিরা ওইদিন কোথায় ছিল, সেটি বের করতে বেশি সময় লাগবে না। শুধু তাদের অবস্থান নয়, তালিকাভুক্ত জঙ্গির পরিবারের অন্য সদস্যদের সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহে মাঠে কাজ শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ভাষ্য, ঢাকা ও এর আশপাশের জেলাগুলো বিচ্ছিন্ন করতে পরিকল্পনামাফিক রাজশাহী বিভাগ থেকে নাশকতায় অংশ নিয়েছিল জামায়াত-শিবির ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা। পরে কারফিউ শিথিল হলে ঢাকা থেকে রাজশাহী ফেরার পথে গ্রেফতার হন অনেকেই।
রাজশাহী বিভাগের অনেকেই ঢাকা ও আশপাশের জেলায় সংঘটিত সহিংসতার সঙ্গে সরাসরি জড়িত। পরে নিজ নিজ এলাকায় ফেরার সময় গ্রেফতার হয়েছেন। গ্রেফতার ব্যক্তিরা স্বীকার করেছেন, তারা ১৮ জুলাই থেকে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় জড়ো হন এবং শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে দুই দিন ধরে চালানো সহিংসতায় অংশ নেন। এ ছাড়া, নাশকতায় অংশ নেন জঙ্গি সংগঠন জেএমবির রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁর অন্তত ১৫০ সদস্য।
তিনি জানান, তারা নিশ্চিত যে, জেএমবির সদস্যরা ঢাকা, গাজীপুর ও নরসিংদী এলাকায় সংঘটিত নাশকতায় অংশ নিয়েছে। বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছে এবং এ বিষয়ে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এদের দেওয়া তথ্য-উপাত্ত নিয়ে র্যাব অধিকতর তদন্ত চালাচ্ছে এবং অন্য জঙ্গিদের গ্রেফতারে অভিযান পরিচালনা করছে।