আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে যেসব আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল সেগুলো জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও খুব একটা সাড়া মেলেনি সিলেটে। ১৫ বছরে জেলা ও মহানগরে ৯১৪টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হলেও সোমবার পর্যন্ত জমা হয়েছে মাত্র ৫৬টি। ফলে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র বাইরে থেকে যাওয়ায় যে কোনো ইস্যুতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছে সচেতন মহল। আগ্নেয়াস্ত্রের মালিকদের বেশির ভাগ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মী-সমর্থক হওয়ায় তারা রয়েছেন আত্মগোপনে। অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। ফলে যৌথ বাহিনীর জোরালো অভিযান ছাড়া এসব আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার কঠিন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সারা দেশে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা হয়। এ সময় সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্রের মহড়া ও ব্যবহার দেখা গেছে। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে গেলেও তাদের কাছে থাকা বৈধ ও অবৈধ অস্ত্র জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়। এ ছাড়া বিভিন্ন পুলিশ স্টেশন থেকে লুট হওয়া অস্ত্র নিয়েও দেখা দেয় আতঙ্ক। এ অবস্থায় লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্র স্বেচ্ছায় জমা দিতে সময় বেঁধে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তথা ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক জনগণকে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করে সরকার। এসব আগ্নেয়াস্ত্র ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সূত্র জানান, গত ১৫ বছরে সিলেট মহানগরে ২৪৮ ও জেলায় ৬৬৬টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়। এর মধ্যে সোমবার পর্যন্ত জমা হয়েছে মাত্র ৫৬টি। ফলে ৮৫৮টি আগ্নেয়াস্ত্র রয়ে গেছে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে। সিলেটের ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক সুবর্ণা সরকার জানান, ‘সোমবার পর্যন্ত ৫৬টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা হয়েছে। যারা আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা দেননি, তাদের বিরুদ্ধে সরকারি আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নির্দেশের পরও যেসব আগ্নেয়াস্ত্র জমা হয়নি, সেগুলো উদ্ধারে যৌথ অভিযান চালানো হবে।’ সিলেট জেলা পুলিশের মিডিয়া ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা মো. সম্রাট তালুকদার বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা পাওয়ার পরপরই আমরা থানাগুলোকে প্রচার চালানোর জন্য বলেছি। এসব আগ্নেয়াস্ত্র থানায় জমা দেওয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে প্রচার চালানো হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যেসব আগ্নেয়াস্ত্র জমা দেওয়া হয়নি সেগুলো উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’