রাজশাহী মহানগরী থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরে কাটাখালী পৌরসভা। সিটি করপোরেশনের মতো সব সুযোগসুবিধা আছে এ পৌরসভায়। এখানে কাউন্সিলররা আসছেন, অফিস খোলা থাকছে কিন্তু সেবা পাচ্ছেন না নাগরিকরা। কারণ পৌরসভাটিতে নেই নির্বাচিত মেয়র। আবার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা বহাল থাকলেও সেখানেও সেবা পেতে ভোগান্তিতে পড়ছেন নাগরিকরা। কারণ অধিকাংশ ইউপি চেয়ারম্যান পলাতক। আওয়ামী লীগের সমর্থক বা যারা আওয়ামী লীগের মনোনয়নে চেয়ারম্যান হয়েছিলেন, ৫ আগস্টের পর যারা অফিস করছিলেন তাদের নামে মামলা হয়েছে। ফলে তারা পলাতক।
পৌরসভাগুলোয় প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। এ ছাড়া যেসব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পলাতক, সেখানেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে উপজেলা নির্বাহী অফিসার অথবা সহকারী কমিশনারদের। তার পরও ভোগান্তি কমছে না নাগরিকের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কাটাখালী পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্ব পাওয়া অভিজিত সরকার বোয়ালিয়া ভূমি অফিসেরও সহকারী কমিশনার। একই সঙ্গে তাঁকে দুই দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে। ফলে অফিস সময়ে পৌরসভা ও ভূমি অফিস দুই জায়গায় দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নাগরিক সেবায় ব্যাঘাত ঘটছে। যদিও অভিজিত সরকারের দাবি, পৌরসভার কাজ মূলত সচিব ও কাউন্সিলররা করে থাকেন। রুটিন কাজগুলো তিনি দেখছেন। নাগরিকের ভোগান্তির কোনো সুযোগ নেই।
চারঘাট পৌরসভার মেয়র একরামুল হককে অপসারিত করে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক টুকটুক তালুকদারকে। স্থানীয় নাগরিকরা জানান, সপ্তাহে রবি ও বুধবার তিনি পৌরসভায় যান। জরুরি প্রয়োজনে নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল করিম ফাইলপত্র নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আসেন। পৌরসভার বাসিন্দারা বলেন, ট্রেড লাইসেন্স, জাতীয়তা সনদ, জন্মনিবন্ধন, মৃত্যুনিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ, প্রত্যয়ন, নাগরিকত্ব সনদসহ বিভিন্ন সনদ তার স্বাক্ষর ছাড়া পৌরবাসী পাচ্ছেন না। সপ্তাহের ওই দুই দিনের জন্য অপেক্ষা করতে হয় তাদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাজশাহীর নওহাটা পৌরসভা ভবনের নিচে বসে আছেন সেবাগ্রহীতারা। বিভিন্নজন এসেছেন বিভিন্ন কাজে। এদের মধ্যে রাজু আহম্মেদ নামে একজন এসেছেন নাগরিকত্ব সনদ নিতে। তিনি বলেন, ‘আমি পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। আমার জরুরিভাবে নাগরিকত্ব সনদ লাগবে। কিন্তু এসে দেখি কাউন্সিলর নেই। তাঁর জন্য অপেক্ষা করছি। এর আগেও দুই দিন এসে ঘুরে গেছি।’
নওহাটা পৌরসভার দোতলায় কাউন্সিলরদের বসার কক্ষ। সেখানে গিয়ে দেখা যায় কক্ষটি ফাঁকা। সেখানকার কর্মচারীরা জানান, আওয়ামী লীগপন্থি হওয়ায় কাউন্সিলররা আসছেন না। তাই সেবাও পাওয়া যাচ্ছে না।
বিভাগীয় কমিশনার দেওয়ান মো. হুমায়ুন কবির জানান, স্থানীয় সরকারের সেবা সচল করতে তাঁরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নাগরিকদের হয়তো একটু কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু আগের তুলনায় নাগরিক সেবা অনেকটা স্বাভাবিক হয়েছে। ধীরে ধীরে পুরো স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
উল্লেখ্য, রাজশাহী জেলায় নয় উপজেলা, ১৪ পৌরসভা ও ৭৬ ইউনিয়ন পরিষদ আছে। উপজেলা ও পৌরসভা চলছে প্রশাসকের মাধ্যমে।