জলবায়ু পরিবর্তনে চরম ভাঙনের কবলে পড়েছে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ ও বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন। স্থলভাগে তীব্র ভাঙনে এরই মধ্যে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে বঙ্গোপসাগর ও নদী তীরবর্তী বন বিভাগের ১৪টি অফিসের স্থাপনা। যে কোনো সময় নদীগর্ভে ও সাগরে বিলীন হয়ে যেতে পারে কয়েকটি অফিস। একই জায়গায় থেকে সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত দেখার নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক লীলাভূমি ‘জামতলা সি-বিচ’ও অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। ভয়াবহ ভাঙনে কমে আসছে সুন্দরবনের স্থলভাগের আয়তন। সুন্দরবন বিভাগ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জীববৈচিত্র্যের আধার সুন্দরবনের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গ কিলোমিাটার। এর মধ্যে স্থলভাগের পরিমাণ ৪ হাজার ১৪২ দশমিক ৬ বর্গকিলোমিটার, আর জলভাগের পরিমাণ ১ হাজার ৮৭৪ দশমিক ১ বর্গকিলোমটার। সুন্দরবন-সংলগ্ন সাগর এলাকার পরিমাণ ১ হাজার ৬০৩ দশমিক ২ বর্গকিলোমিটার। বিশ্বের এই বৃহৎ জলাভূমিও আন্তর্জাতিকভাবে ‘রামসার এলাকা’ হিসেবে স্বীকৃত। পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনে রয়েছে ১৮৪ প্রজাতির গাছ, ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী ও ২৯২ প্রজাতির মাছ।
রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসভূমি সুন্দরবনে সাগর-নদীর ভাঙনে বনবিভাগের কয়েকটি অফিস বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার অস্থায়ী শুঁটকিপল্লী, শ্যালারচর, আলোরকোল, রকাকিলমুনি, বগী, শরণখোলা, কটকা, কচিখালী, চান্দেরশ্বর টহল ফাঁড়ি, চাঁদপাই রেঞ্জের ঝাঁপসি, শুয়ারমারা, জোংড়া, হারবাড়ীয়া এবং করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্র।
সরেজমিন সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের কোকিলমুনি, বগী, কটকা, কচিখালী, চান্দেরশ্বর টহল ফাঁড়ি এবং চাঁদপাই রেঞ্জের ঝাঁপসি, শুয়ারমারা, জোংড়া টহল ফাঁড়ি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সাগর-সংলগ্ন বন অফিসের অনেক এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঝাপসি টহল ফাঁড়ির বনকর্মী জানান, আমাদের অফিসের মাত্র কয়েক হাত দূরেই নদী চলে এসেছে। গত কয়েক দিনের তীব্র ভাঙনে অফিস সংলগ্ন বেশকিছু এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। আমরা অত্যন্ত ঝুঁকির মধ্যে আছি।
শরণখোলা বন অফিসের স্টেশন কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন, সাগর-সংলগ্ন নদীর পাড়ে এমন ভাঙন আগে কখনো দেখা যায়নি। আমরা আতঙ্কিত অবস্থায় দিনযাপন করছি। প্রতিদিন অফিস সংলগ্ন বনের এলাকা পানির তোড়ে নদীগর্ভে চলে যাচ্ছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিসের সহকারী বনসংরক্ষক (এসিএফ) শেখ মাহাবুব হাসান জানান, ভাঙনে শরণখোলা রেঞ্জের ৯টি বন অফিস ও টহল ফাঁড়ি শিগগিরই পানিতে বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মোহাম্মদ নূরুল করিম জানান, সাগর ও নদী ভাঙনের স্থানে ভাঙা নৌকা ডুবিয়ে রেখে ভাঙন প্রতিরোধের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। দ্রুত ভাঙন প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে ইতোমধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।