টানা দুই দফায় বন্যা কবলিত পাহাড়ের মানুষ। দফায় দফায় ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি ক্ষতিগ্রস্তরা। ডুবেছে বসতঘর, ফসলি জমি, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান। তছনছ আয়-উপার্জন। সব হারিয়ে দিশাহারা বানভাসিরা। যদিও সরকারিভাবে মিলেছে প্রণোদনা। কিন্তু ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে রয়েছে নানা শঙ্কা।
ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন, বসতঘর কোনো রকম মেরামত করে থাকার উপযোগী করা গেলেও কৃষিখাতে ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব। বিধ্বস্ত স্বপ্নে বেঁচে থাকার লড়াই চলছে বানভাসিদের।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রায় প্রতিদিন প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয় পাহাড়বাসীকে। কখনো খরা, কখনো বন্যা। আবার কখনো অতিবৃষ্টিতে পাহাড় ধস। তাই সব মৌসুমে থাকে বেঁচে থাকার চ্যালেঞ্জ। এমন চ্যালেঞ্জ সাথে নিয়ে চলে পাহাড়বাসীর জীবন ও জীবিকা।
সম্প্রতি অতিবৃষ্টি আর সীমান্তের পাহাড়ি ঢলে ডুবে যায় রাঙামাটির ৬টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল। বানের পানিতে ভেসে যায় বসতঘর, ভিটেমাটি, দোকান-পাঠ, ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আর স্বপ্নের ফসল ও জমি। পাহাড়ের চূড়ায় কোনো রকম আশ্রয় নিয়ে বানভাসিরা বেঁচে থাকলেও চোখের সামনে রাঙামাটি কাপ্তাই হ্রদের গর্ভে বিলীন হয়েছে দীর্ঘ বছরের উপার্জিত সম্বল। সব হারিয়ে নিঃস্ব বানভাসিরা। সরকারিভাবে ত্রাণ পেলেও সহায়তায় এগিয়ে আসেনি কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।
রাঙামাটি জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. রোকনুজ্জামান বলেন, প্রথম দফায় বন্যা কবলিত রাঙামাটি জেলার ৬টি উপজেলা লংগদু, বরকল, বিলাইছড়ি, নানিয়ারচর, জুরাছড়ি ও বাঘাইছড়ির ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। এসব পরিবারকে সরকারিভাবে ৯২ মেট্রিক টন খাদ্য শষ্য ও ১৫ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দফা কিংবা নতুন করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের কোনো চাহিদা উপজেলা কর্মকর্তাদের কাছ থেকে আসেনি। তাই সহায়তাও দেওয়া হয়নি। তবে আমরা নতুন ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রণয়নের কাজ করছি।
অন্যদিকে, এ বন্যায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষিখাতে। ফসল ভরা জমি বিলীন হয়েছে হ্রদের গর্ভে। কৃষকের ফসল নষ্ট হয়েছে ঘাতক বন্যায়। এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে কৃষকদের বলছেন সংশ্লিষ্টরা।
রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের আঞ্চলিক কৃষি কর্মকর্তা তপন কুমার পাল বলেন, রাঙামাটিতে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত জমির সংখ্যা ৩ হাজার ২১০ হেক্টর জমি। ক্ষতিগ্রস্ত ফসলের মূল্য প্রায় ৬৬ কোটি টাকা। এসব জমির কৃষি পরিবার প্রায় ১১ হাজার। অল্প সময়ে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না পারলেও কৃষকদের সহায়তা করছে কৃষি বিভাগ। বিশেষ করে ঘরের আঙিনায় শীতকালীন ফসল আর বোরো ও উফসী জাতের ধানের বীজ দিয়ে সহায়তা করা হচ্ছে। যাতে কৃষকরা কিছুটা শক্তি পায়।
বিডি প্রতিদিন/এমআই