শুক্রবার, ২৪ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা
ধর্মতত্ত্ব

শিশুবেলায় সিয়াম

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

শিশুবেলায় সিয়াম

আজকের শিশু চারাগুলো আগামীর ফুলবাগান। এ বাগান যেন সুগন্ধিময় হয় সেই প্রচেষ্টা চালাতে হবে প্রতিটি অভিভাবককে। সিয়ামের পবিত্র এই মাসে শিশুদের শেখাতে হবে সংযম সাধনা। এ মাসের সংযম শিক্ষা শিশুদের আত্মায় কুঁড়ি হয়ে ফুটবে। সেই কুঁড়ি থেকে একদিন অবশ্যই ফুল ফুটবে। সন্তানদের আমরা জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি। তাদের কোনো দুঃখকষ্ট আমরা মেনে নিতে পারি না। আমরা চাই তাদের সুখী-সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হোক। তাই নিজের কষ্ট হলেও আমরা সন্তানের জন্য কষ্ট স্বীকার করে নেই। খেল-তামাশার দুনিয়ার এটিই স্বাভাবিক চিত্র। আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি ক্ষণিকের দুনিয়ার সুখের জন্য সন্তানকে এত যোগ্য করে গড়ে তোলার চেষ্টা করছি কিন্তু অনন্ত জীবন আখেরাতের জন্য তাকে কতটুকু প্রস্তুত করছি? পরীক্ষা ও পড়ার অজুহাতে আমরা তার নামাজ রোজা বন্ধ রাখছি। আমরা তাকে চেনাতে পারছি না। এর পরিণতি হতে পারে খুবই ভয়াবহ। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা নিজেদের এবং নিজের পরিবার পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা কর, যার ইন্দন হবে মানুষ ও পাথর। সেখানে নিয়োজিত আছে নির্মম হৃদয় ও কঠোর স্বভাবের ফেরেশতারা, যারা আল্লাহর আদেশে অমান্য করে না। তারা তাই করেন আল্লাহ যা আদেশ করেন। (সূরা তাহরিম : ৬)। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুকাতিল (রহ.) বলেন, ‘প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর ফরজ তার পরিবারের সদস্যদের আল্লাহর বিধি নিষেধ সম্পর্কে সচেতন করা।’ (ইবনে কাসীর)।

আমি আমার সন্তানকে ভালোবাসি- এর অনিবার্য দাবি হলো, তাকে যাবতীয় ক্ষতি থেকে রক্ষা করব। কেয়ামতের কঠিন দিনে সে যেন বলতে না পারে, আমার আব্বা-আম্মা আমাকে আল্লাহর পরিচয় সম্পর্কে জানায়নি, আমাকে জাহান্নামে যেতে হবে এ কথা বলেনি। হে খোদা যে বাবা-মার কারণে আজ জাহান্নামে যেতে হচ্ছে তাদের ঘাড়ের ওপর পা রেখেই আমি জাহান্নামে যেতে চাই। কোরআনের ভাষায়, ‘সত্যকে যারা অস্বীকার করেছে তারা সেদিন বলবে, হে আমাদের প্রভু! মানুষ এবং জিনদের মধ্যে যারাই আমাকে পথভ্রষ্ট করেছিল, তাদের দেখিয়ে দাও, আমরা তাদের পদদলিত করব, যাতে করে তারা অপদস্ত হয়।’ (সূরা হামিম সাজদাহ : ২৯)। অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘সবাই যখন আল্লাহর কাছে উপস্থিত হবে তখন দাম্ভিক কর্তৃত্বশীলদের উদ্দেশ্যে দুর্বলরা বলবে, আমরা তো তোমাদের অনুসারী ছিলাম, এখন তোমরা কি আল্লাহর আজাব থেকে আমাদের কিছুটা রক্ষা করতে পারবে?’ (সূরা ইবরাহিম : ২১)। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা সবাই দায়িত্বশীল। তোমাদেরকে তোমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে। নেতা তার কর্মীদের জন্য দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। ব্যক্তি তার পরিবারের জন্য দায়িত্বশীল, তাকে তার পরিবার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। মহিলা তার স্বামীর ঘরের সার্বিক ব্যাপারে দায়িত্বশীল। তাকেও প্রশ্ন করা হবে। (বুখারি)। এ হাদিস থেকে জানা যায়, নারী-পুরুষ উভয়েই তার পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। তাদের অন্যতম একটি ফরজ দায়িত্ব হলো সন্তানদের দীনের পথে গড়ে তোলা। আর এর জন্য ছোটবেলা থেকেই প্রচেষ্টা চালাতে হবে। রসুল (সা.) বলেছেন, সাত বছর বয়স হলে সন্তানকে নামাজের নির্দেশ দাও। আর দশ বছর বয়স হলে নামাজে অবহেলা করলে তাকে প্রহার কর। (তিরমিজি ও আবু দাউদ)। ফকিহরা বলেন, নামাজের সঙ্গে সঙ্গে তাদের রোজায়ও অভ্যাস করাতে হবে। যাতে করে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই যেন সে নামাজ-রোজায় পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে যায়। (ইবনে কাসির)।

আজ যেমন আপনার সন্তান গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে আনন্দে আপনার কাছে ছুটে আসে, কেয়ামতের দিন যেন ফল প্রকাশ করার পর তাকে গোমরা মুখে বসে থাকতে না হয়। কোরআনের ভাষ্য অনুযায়ী দুনিয়ার মতোই কেয়ামতের দিনও আমলনামা প্রকাশের পর মুমিন বান্দা তার আত্মীয় স্বজনদের খুঁজতে থাকবে। বলবে, বাবা! মা! চাচা! দেখ আমার রেজাল্ট কতইনা ভালো হয়েছে। ‘কেয়ামতের দিন যার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে, তার কাছে সহজ হিসাব নেওয়া হবে। সে আনন্দিত হয়ে পরিবার পরিজনের কাছে ফিরে যাবে। আর যার আমলনামা পেছন থেকে দেওয়া হবে, সে মৃত্যুকে ডাকতে থাকবে। আর দগ্ধ হবে জ্বলন্ত আগুনে। সে তো দুনিয়ায় তার পরিবার-পরিজনদের মধ্যে আনন্দে মেতে থাকত। সে মনে করেছে তাকে কখনোই ফিরে আসতে হবে না। আসলে তার প্রভু কখনোই তাকে দৃষ্টির আড়ালে রাখেননি। (সূরা ইনশিকাক : ৭-১৪)। পরিশেষে বলতে চাই, সন্তানকে ছোটকাল থেকেই ধর্মীয় অনুশাসন, নামাজ-রোজা, ইসলামী সংস্কৃতি ও আখলাকে অভ্যস্ত করুন। সন্তানের সুন্দর আখেরাত গড়ার দায়িত্ব আপনারই। হে আল্লাহ আমাদের সন্তানদের দুনিয়া এবং আখেরাত যেন শুভ হয়, তারা যেন কামিয়াবি অর্জন করে সেই তৌফিক দান করুন।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসিসরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর