বুয়েটে চান্স পাওয়ার সূত্র হলো- কঠোর অধ্যবসায় আর পরিশ্রম। তাই শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে কলেজের পড়াশোনা শেষে অ্যাডমিশনের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে হয়। একটি কথা মনে রাখতে হবে— ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষার পরের কয়েকটি মাস। এ সময়ের সঠিক প্রস্তুতি আর দিকনির্দেশনাই বয়ে আনতে পারে কাঙ্ক্ষিত ফল। না বুঝে অযথা দিন-রাত প্রচুর পড়াশোনা হয়তো অনেকেই করে, কিন্তু দেখা যায় সঠিক দিকনির্দেশনার অভাবে আশানুরূপ ফল আসে না।
কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস :
বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষার জন্য প্রতিটি রচনামূলক প্রশ্নের জন্য গড়ে প্রায় তিন মিনিট সময় পাওয়া যায়। অতি অল্প সময়ের মধ্যে সব প্রশ্নের উত্তর করা প্রায় অসম্ভব। তাই যেসব প্রশ্নের সমাধান জানা আছে অথবা সমাধান করতে পারা যাবে বলে মনে হয় সেগুলোর আগে উত্তর করা উচিত।
বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় ১০০ ভাগ উত্তর করে আসা অনেকটা কঠিন। ৬০০ নম্বরের মধ্যে ৪০-৫০ নম্বরের উত্তর না করেও বুয়েটে চান্স পাওয়া সম্ভব। তাই সব প্রশ্নের উত্তর করে আসব- এ টার্গেট নিয়ে পরীক্ষা দিতে যাওয়া এক ধরনের বোকামি। বরং এ টার্গেট রাখা উচিত, আমি যা পারি তা সঠিকভাবে দিয়ে আসব। ভর্তি পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিত এ তিনটি বিষয়ের ওপরই প্রশ্ন করা হয়। এর মধ্যে পদার্থ আর গণিতের প্রশ্নগুলো তুলনামূলক কঠিন হয়। এ বছর পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও গণিত প্রতিটি বিষয়ে ২০০ নম্বরের প্রশ্ন থাকবে। মনে রাখতে হবে কোনো ধরনের এমসিকিউ প্রশ্ন থাকবে না।
বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতি :
পদার্থবিজ্ঞান : পদার্থবিজ্ঞানের প্রস্তুতির জন্য অন্তত দুজন লেখকের বইয়ের সব গাণিতিক সমস্যার সমাধান করা উচিত। বাজারে খোঁজ নিলে অনেক লেখকের বই পাওয়া যাবে। কোন লেখকের বই পড়বে সেটা মোটেই গুরুত্বপূর্ণ নয়। পদার্থবিজ্ঞানের প্রথম পত্রে গতিবিদ্যাসহ প্রতিটি অধ্যায় গুরুত্বপূর্ণ। আর দ্বিতীয় পত্রে চুম্বক, তড়িত্শক্তি, আলো এসব অধ্যায় থেকে প্রায় প্রতিবছরই রচনামূলক প্রশ্ন থাকে। বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের খুঁটিনাটি বিষয় মনোযোগ সহকারে এবং অবশ্যই বুঝে পড়তে হবে। থিওরিগুলো সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। তাহলে সহজেই মনে থাকবে।
গণিত : গণিতের অনেক প্রশ্নই টেক্সট বই থেকে সরাসরি তুলে দেওয়া হয়। আবার এমনও দেখা যায়, কিছু প্রশ্ন একটু ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। সুতরাং মূল বই ভালোভাবে পড়া থাকলে গণিতে খুব বেশি সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কোন লেখকের বই পড়ব এটা নিয়ে অনেকেই দ্বিধায় ভোগে। ভালোভাবে বুঝে পড়লে যে কারও বই পড়লেই চলবে। বলবিদ্যার অঙ্কগুলো বুঝে করতে হবে, পাশাপাশি ক্যালকুলাসের সূত্রগুলো মনে রাখতে হবে। গণিতে ভালো করার জন্য বেশি বেশি অনুশীলনের কোনো বিকল্প নেই।
রসায়ন : রসায়নের প্রশ্ন যদিও গণিত বা পদার্থবিজ্ঞানের মতো এতটা কঠিন হয় না। তবুও এ বিষয়টাতে অনেক সময় দিতে হবে, বিশেষ করে জৈব রসায়নে। রসায়ন যত বেশি চর্চা করবে তত ভালো করা সম্ভব। বিক্রিয়াগুলো বারবার লিখে চর্চা করতে হবে এবং ভালো করে বুঝতে চেষ্টা করতে হবে। সবচেয়ে ভালো হয় সব বিক্রিয়া, সংকেত আলাদা খাতায় লিখে নোট করে রাখলে। তাহলে পরীক্ষার দু-এক দিন আগে সেগুলো একপলক চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাবে।
বেশিরভাগ সময়ই দেখা যায় রসায়ন দ্বিতীয়পত্র থেকে রচনামূলক প্রশ্ন তেমন একটা আসে না। তবে দ্বিতীয় পত্রে প্রচুর বিক্রিয়া, পরীক্ষাগার প্রস্তুতি, শিল্পোৎপাদন, সংকেত, রূপান্তর পড়তে হবে। লক্ষ্য করে দেখা গেছে, বেশিরভাগ প্রশ্নই করা হয় প্রথম পত্রের প্রথম দিককার অধ্যায়গুলো থেকে। তাই এসব অধ্যায় গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে।
আরও যেসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে :
নিয়মিত উচ্চ মাধ্যমিকের পাঠ্যবইগুলো পড়ার পাশাপাশি বিগত বছরের বুয়েটের প্রশ্নগুলো সমাধান করবে। এতে যেমন পরীক্ষার প্রশ্ন সম্বন্ধে ধারণা তৈরি হয়, তেমনি আত্মবিশ্বাস বাড়ে। সেইসঙ্গে যারা কোচিংয়ে ভর্তি হয়েছ তারা নিয়মিত মডেল টেস্টে অংশ নেবে। তাহলে পরীক্ষার সামগ্রিক বিষয়াবলীর ওপর মোটামুটি একটা ধারণা চলে আসবে। সেইসঙ্গে নিজেদের সামর্থ্যের ব্যাপারটিও যাচাই করে নিতে পারবে। তবে এজন্য কোচিং যে করতেই হবে তা নয়। নিজেরা বাসায় বসেই এ কাজটি করতে হবে। প্রয়োজনে গ্রুপ স্টাডি করতে পার যা প্রস্তুতিতে খুবই সহায়ক ভূমিকা রাখে।
সাজেশনভিত্তিক পড়াশোনা করা যাবে না। যারা মনে করছ, শেষ মুহূর্তে সাজেশন ধরে প্রস্তুতি নেবে, তাদের বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়াটাই বৃথা হবে। অনেকেই বিভিন্ন গাইড বইয়ের ওপর নির্ভর করে প্রস্তুতি নেয়। এটা আদতে কোনো সুফলই বয়ে আনবে বলে মনে হয় না। মূল বইয়ের কোনো বিকল্প নেই এ কথাটি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
একটা বিষয় মাথায় রাখা জরুরি, বুয়েট ভর্তি পরীক্ষায় অনেকের খারাপ করার প্রধান কারণ বেশি দুশ্চিন্তা বা আতঙ্কে থাকা। অনেক শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন যা পড়েছে তার বেশিরভাগই পরীক্ষার হলে গিয়ে ভুলে যায় এবং কঠিন বিষয়গুলো নিয়ে খুব বেশি সময় নষ্ট করে ফেলে। ফলে সহজ প্রশ্নগুলো সমাধান করে আসতে পারে না। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।
পরীক্ষা কেন্দ্রে করণীয় :
অনেক শিক্ষার্থীর প্রস্তুতি ভালো থাকলেও দেখা যায় তারা চূড়ান্ত সাফল্য পেতে ব্যর্থ হয়। এর একটি কারণ পরীক্ষার কেন্দ্রে নিজের সামর্থ্যকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হওয়া। অনেকেই পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র পেয়েই হতাশ হয়ে যায়। তার কারণ হতে পারে প্রশ্নপত্র কঠিন হওয়া। তবে প্রশ্ন যেমনই হোক মাথা ঠাণ্ডা রেখে চিন্তাভাবনা করে প্রশ্নের উত্তর করতে হবে। কারণ মনে রাখতে হবে প্রশ্ন শুধু তোমার কাছেই নয় বরং অনেক শিক্ষার্থীর কাছেই কঠিন বোধগম্য হতে পারে। তাই প্রশ্ন যত কঠিনই হোক না কেন, কোনোমতেই ঘাবড়ানো যাবে না। নিজের ওপর আস্থা রেখে সামর্থ্য অনুযায়ী প্রশ্নের উত্তর করবে। তাহলেই তোমরা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পাবে। তোমাদের জন্য শুভ কামনা।