মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৬ ০০:০০ টা
জে এস সি পরীক্ষা প্রস্তুতি -২০১৬

বিষয়ভিত্তিক পরামর্শ

প্রিয় পরীক্ষার্থী বন্ধুরা, আগামী ১ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে তোমাদের পরীক্ষা। এতে প্রত্যাশিত ফলাফল পেতে হলে করণীয় কী এ ব্যাপারে তোমাদের জন্য বিষয়ভিত্তিক গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছেন ঢাকার উত্তরা ১৩ নম্বর সেক্টরস্থ ট্রাস্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের কয়েকজন শিক্ষক।

বাংলা প্রথমপত্র

জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরে যেন বানান ভুল না থাকে

তোমরা জান যে, বাংলা প্রথমপত্র সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনী দুটি অংশে বিভক্ত। জিপিএ-৫ নিশ্চিত করতে তাই দুটি অংশেই তোমাদের সমান গুরুত্ব দিতে হবে।

শিক্ষা বোর্ডের সর্বশেষ তথ্যানুসারে ৬টি সৃজনশীল ও ৪০টি বহুনির্বাচনী প্রশ্নেরই সঠিক ও নির্ভুল উত্তর করতে হবে। এজন্য অবশ্যই গদ্য, পদ্য, সহপাঠ তিনটি অংশেই পূর্ণ ও পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে। হাতে সময় খুবই কম তাই সময় ভাগ করে প্রতিদিন নিয়মিত মূল পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সহায়ক বইয়ের সাহায্য নিয়ে বারবার অনুশীলন করতে হবে। প্রত্যেকটি বিষয়ের মূলভাব ও বিশেষ বিশেষ দিক আয়ত্ত করবে যাতে যে কোনো ধরনের উদ্দীপকের উত্তর দিতে সমস্যা না হয়। জ্ঞানমূলক প্রশ্নের উত্তরে যেন বানান ভুল না হয়।

বহুনির্বাচনী প্রশ্নের সর্বাধিক নম্বর পেতে হলে অবশ্যই তোমাদের মূল পাঠ্যবইয়ের প্রত্যেকটি পঙিক্ত ভালোভাবে পড়তে হবে। বহুপদী সমাপ্তিসূচক ও অভিন্ন তথ্যভিত্তিক প্রশ্নের পূর্ণ নম্বরের জন্য মূল বইয়ের পাশাপাশি সহায়ক বই বা টেস্ট পেপার থেকে বেশি বেশি অনুশীলন করতে হবে। প্রয়োজনে গুরুত্বপূর্ণ পঙিক্তগুলো আন্ডারলাইন করে বারবার পড়।

সময়ের সঠিক ব্যবহার করে যথাযথভাবে প্রস্তুতি নাও। তোমাদের সফলতা নিশ্চিত।

মোস্তফা হায়দার

প্রভাষক, বাংলা

 

শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য

এইচআইভি/এইডস্ সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা রাখতে হবে

‘শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য’ বিষয়টি কীভাবে রপ্ত করে নিতে পরীক্ষার প্রস্তুতি খুব ভালো হয় এবং ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে এ বিষয়ে নিচে আলোকপাত করা হলো :

শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য বিষয়টির প্রথম অধ্যায়টি শরীরচর্চা ও সুস্থ জীবন সম্পর্কিত। তাই সুস্পষ্ট জ্ঞান রাখতে বিভিন্ন প্রকার ব্যায়াম সম্পর্কে ভালো ধারণা রাখতে হবে। কোন কোন ব্যায়ামগুলোতে সরঞ্জামের প্রয়োজন হয় আর কোন ব্যায়ামগুলোকে ফ্রি-হ্যান্ড ব্যায়াম বলা হয়, সেগুলো জানা আবশ্যক।

বইটির দ্বিতীয় অধ্যায়টি তথ্যনির্ভর তাই একটু কঠিন বলে মনে হতে পারে। এই অধ্যায়ে উল্লিখিত স্কাউটিং, গার্ল গাইডিং এর সূচনা, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট ও রেডক্রস সোসাইটির জন্ম ও ইতিহাস, বিভিন্ন সাল ও স্থানের নামগুলো বারবার পড়তে হবে। নতুবা ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।

স্বাস্থ্যবিজ্ঞান পরিচিতি ও স্বাস্থ্যসেবা অধ্যায়টি ভালো করে রপ্ত করতে হলে এইচআইভি/এইডস্ সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা রাখতে হবে। এইডস্ কী, লক্ষণসমূহ, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা এবং বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এর অবস্থান— এ কয়েকটি বিষয়বস্তু ভালো করে পড়ে নিলেই ২/৩টি প্রশ্ন পরীক্ষায় পাওয়া যাবেই।

খেলাধুলা অধ্যায়টির কয়েকটি খেলা সম্পর্কে না বললেই নয়। এর মধ্যে ব্যাডমিন্টন, হকি, অ্যাথলেটিকস্ ও সাঁতারের ওপর বেশ কিছু প্রশ্ন পরীক্ষায় আসে। তাই খেলাগুলোর উত্পত্তি কোথায়, কত সালে এসব বার বার পড়তে হবে মনে রাখার জন্য। অন্যথায় ভুলে যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। তবে সাঁতার থেকে একটি প্রশ্ন বারবারই থাকে।

এছাড়া বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ছেলে ও মেয়েদের বিবাহের সময়সীমা, অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ ও সমস্যা হতে একটি প্রশ্ন পরীক্ষায় আসবে। তাই এ অধ্যায় সম্পর্কে বার বার পড়ে আয়ত্ত করে নিতে হবে। উল্লেখ্য সদ্য সমাপ্ত রিও অলিম্পিক, ২০১৬ ; হকি অনূর্ধ্ব-১৬ বিশ্বকাপ ও ক্রিকেট সম্পর্কিত আরও কিছু তথ্য তোমরা পড়ে যেতে পার।

‘শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য’ বিষয়ে খুব ভালো ফলাফলের জন্য  বইয়ে উল্লিখিত তথ্যগুলো অনুসরণ কর। তাহলেই তোমরা কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবে। সবার প্রতি রইল শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা।

নেপাল চন্দ্র দাস

প্রভাষক, শারীরিক শিক্ষা ও স্বাস্থ্য

 

বিজ্ঞান

বিভিন্ন প্রাণীর পর্ব, বৈজ্ঞানিক নাম বারবার পড়তে হবে

বিজ্ঞান বিষয়ে অনেক ছোট ছোট তথ্য থাকে যেগুলো আমাদের দ্বিধার সৃষ্টি করে। এসব তথ্য নোট আকারে লিখে রেখে বারবার অনুশীলন করতে হবে। বিভিন্ন সাল, বিজ্ঞানীদের দেওয়া সূত্র, বিভিন্ন প্রতীকের  মান ইত্যাদি বিষয়গুলো নোটে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

বিজ্ঞান বিষয় মূলত পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও সমন্বিত কিছু অংশের সম্মিলিত অংশ। এক্ষেত্রে রসায়ন অংশের জন্য মৌলের নাম, পারমাণবিক সংখ্যা, বিভিন্ন যৌগের সংকেত, রাসায়নিক বিক্রিয়াসমূহ, এসিড ক্ষারের সংজ্ঞাসহ এগুলো চেনার উপায়, বিভিন্ন মৌলের যুক্ত হয়ে বন্ধন গঠন প্রক্রিয়া যথাযথ চিত্রের মাধ্যমে ভালোভাবে অনুশীলন করতে হবে।

পদার্থ বিজ্ঞানের জন্য বিজ্ঞানীদের দেওয়া সূত্র, গাণিতিক সমস্যাবলির সূত্রগুলো ভালোভাবে আয়ত্ত করার পাশাপাশি যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে অনুশীলন করতে হবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রতীকের পরিচিতি,  এদের মান এবং এককগুলো নির্ভুলভাবে লেখার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া বর্তনী অংশের চিত্রের ব্যাখ্যা এবং সে অনুসারে অঙ্ক করার অনুশীলন রাখলে ভালো হয়।

জীববিজ্ঞানের অংশের ক্ষেত্রে বিভিন্ন প্রাণীর পর্ব, বৈশিষ্ট্য, বৈজ্ঞানিক নাম বারবার পড়তে এবং লিখতে হবে। বিভিন্ন পর্বের প্রাণীদের প্রয়োজনীয়তা, কোন প্রাণী কোন পর্বের এগুলো একটু অনুশীলন করতে হবে। কোষ বিভাজনের ধাপসমূহ, আদর্শ ফুল, নিউরন, মস্তিষ্ক, চোখ ইত্যাদি অংশের চিহ্নিত চিত্র আঁকার পাশাপাশি এগুলোর বর্ণনাও কাজ ভালোভাবে রিভিশন দিতে হবে। খাদ্য, পুষ্টি ও বাস্তুসংস্থান থেকে বিভিন্ন খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানতে হবে। অভাবজনিত রোগ, প্রাণিজগতে এদের উপকারিতা সঠিকভাবে জানতে হবে। পরিশেষে তোমাদের সুস্বাস্থ্য এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ আশা করছি।

পার্থ কুমার দাস

প্রভাষক, বিজ্ঞান

 

গণিত

জ্যামিতির অংশে মাপ ঠিক রেখে চিত্র আঁকতে হবে

প্রিয় পরীক্ষার্থী বন্ধুরা, শুভেচ্ছা নিও। আশা করি তোমরা ভালো আছ। সেই সঙ্গে আসন্ন পরীক্ষার প্রস্তুতি ইতিমধ্যে শুরু করে দিয়েছ। পরীক্ষার জন্য খুব টেনশন অনুভব না করে পড়াশোনা চালিয়ে যাও। তোমরা এতদিন স্কুলে যেভাবে পরীক্ষা দিয়েছ, সেভাবেই নির্ভয়ে পরীক্ষা দিবে। এখন তোমাদের নতুন করে খুব বেশি নতুন কিছু পড়ার প্রয়োজন নেই বরং আগের পড়া প্রশ্নগুলোই বার বার রিভিশন দিবে। গণিত বিষয়ের যে টপিকগুলো তোমাদের কাছে কঠিন মনে হয় সেগুলো বেশি বেশি চর্চা কর। সৃজনশীল অংশে প্রতিটি বিভাগ হতে ১টি করে মোট ৬টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হয়। যেসব অধ্যায় ভালোভাবে বুঝ সেসব অধ্যায়ের জন্য সৃজনশীল প্রশ্ন চর্চা কর। বহুনির্বাচনী প্রশ্নের জন্য পাঠ্যবইয়ের তথ্যসমূহ নিখুঁতভাবে মনে রাখতে হবে। এ বিষয়ে ভালো করার জন্য যেসব প্রতীক বা চিহ্ন ব্যবহার করা হয় তা ঠিকঠিকভাবে দিতে হবে। জ্যামিতির অংশে মাপ ঠিক রেখে ভালোভাবে চিত্র আঁকতে হবে। পরীক্ষার সময় ব্যবস্থাপনা পরীক্ষার্থীর সফলতার অন্যতম উপায়। মনে রাখবে, পরীক্ষার খাতা যত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে পারবে তত ভালো নম্বর পাবে।

পরীক্ষার আগের দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে একটি নির্দিষ্ট স্থানে রাখবে। ঢাকা এবং অন্যান্য যেসব বিভাগীয় শহর যানজট রয়েছে সেসব শহরের পরীক্ষার্থীদের যথেষ্ট সময় নিয়ে পরীক্ষা দিতে বের হতে হবে যাতে অনন্ত ৩০ মিনিট পূর্বে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছতে পার।

সম্ভব সব প্রশ্নের উত্তর নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করে অবশ্যই রিভিশন দিতে হবে। তোমাদের উজ্জ্বল সাফল্য কামনা করছি।

মো. সুরুজ মিয়া

প্রভাষক, গণিত বিভাগ

 

সাধারণ পরামর্শ

জানা বিষয়গুলোও অজানা হয়ে যায় চর্চার অভাবে

প্রিয় পরীক্ষার্থীরা, না ঘাবড়ে ঠাণ্ডা মাথায় প্ল্যানমাফিক প্রস্তুতি নাও।

ইতিমধ্যে তোমরা হয়তো পরীক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় প্রস্তুতি শেষ করে ফেলেছ। যাদের কিছু কিছু বিষয়ে এখনো সমস্যা রয়েছে সেগুলো বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক/শিক্ষিকার সঙ্গে পরামর্শ কর এবং তাদের দেখানো গাইডলাইন অনুসরণ কর। তাহলে আশা করি আর সমস্যা থাকবে না।

এতদিন যা পড়েছ তাই এখন কেবল রিভিশন দাও কারণ চর্চা না থাকলে ভুলে যেতে পার। জানা বিষয়গুলোও অজানা হয়ে যাবে চর্চার অভাবে।

মনে রেখ, একটি রুটিন করে প্রত্যেকটি বিষয়ের জন্য সময় ভাগ করে নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যাও। তাহলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সব বিষয়ের পড়া রিভিশন দেওয়া শেষ করতে পারবে।

পরীক্ষা কেন্দ্রে যাওয়ার আগে প্রয়োজনীয় সব উপকরণ অবশ্যই পরীক্ষার আগের রাতেই গুছিয়ে রাখা ভালো। আর মনে আত্মবিশ্বাস রাখতে হবে যে— ‘আমি যা পড়েছি সব মনে আছে। আমার পরীক্ষা ভালো হবে’।

সর্বোপরি, পরীক্ষা সামনে রেখে নিয়মিত পড়াশোনার পাশাপাশি ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়াও করতে হবে। তা না হলে অসুস্থ হয়ে  পড়তে পার। তাই শুধু চোখ বন্ধ করে পড়াশোনা না করে নিজের স্বাস্থ্যের প্রতিও খেয়াল রাখ। পরীক্ষায় ভালো করতে হলে শারীরিক সুস্থতাও জরুরি। আত্নবিশ্বাস রাখ, তাহলেই তোমরা সাফল্যের দিকে এগিয়ে যাবে। সব শিক্ষার্থীর প্রতি রইল আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা আর দোয়া।

জেসমিন নাহার পলি

প্রভাষক, সমাজবিজ্ঞান

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর