‘সবাইতো সুখী হতে চায়’, হ্যাঁ ঢালিউডের বর্তমান সময়ের শীর্ষ নায়কখ্যাত শাকিব খানও এক দিন সুখী হতে চেয়েছিলেন। ছোটবেলার স্ট্রাগল লাইফকে পেছনে ফেলে এখন তিনি সত্যিই একজন সুখী মানুষ। নায়ক হিসেবে তাঁর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দর্শকদের চোখে তাক লাগিয়ে দেয়। তাইতো চলতি বছর তাঁর অভিনয়ের সফল ক্যারিয়ারের ২৫ বছরে দাঁড়িয়ে তিনি যখন পেছনে ফেরে তাকান তখন স্পষ্টই দেখতে পান ১৯৯৯ সালের সেই চিত্র। প্রখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক আফতাব খান টুলু তাঁকে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটান ‘সবাইতো সুখী হতে চায়’ ছবিটি দিয়ে। সেদিন শাকিবের মনে সুখী হওয়া নিয়ে দোলাচল থাকলেও আজ তিনি তৃপ্তির ঢেকুর তুলে বলেন, ‘আমি সত্যিই সুখী, কারণ দর্শক আমাকে ভালোবাসেন। এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কী আছে।’ ঢালিউডে এ ২৫ বছরে আপন দক্ষতায় একচ্ছত্র রাজত্ব গড়ে তুলেছেন এ জনপ্রিয় নায়ক। এ প্রসঙ্গে তাঁর তৃপ্তিমাখা কথা হলো- ‘রাজত্ব দুভাবে পাওয়া যায়, যুদ্ধ করে আবার শুধু ভালোবাসা দিয়ে জয় করা যায়। আমি ভালোবাসা দিয়েই ভক্ত-দর্শকের মন জয় করেছি।’ চলচ্চিত্রের দুই যুগ পার করা এ নায়ক এখন পার করছেন দারুণ সময়। যে সময়ের জন্য একদিন তিনি স্বপ্ন দেখতেন, যে স্বপ্ন তাঁকে ঘুমুতে দিত না।
নারায়ণগঞ্জ থেকে এফডিসি, এফডিসি থেকে কাকরাইল, পরিচালকদের দুয়ারে দুয়ারে হানা- সবই করেছেন। নানা চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আজ তিনি রাজ করছেন এ অঙ্গন। ১৯৯৯ সালে সোহানুর রহমান সোহানের ‘অনন্ত ভালোবাসা’ সিনেমার হ্যাংলা-পাতলা ছেলেটাই একদিন চলচ্চিত্রে রাজ করবেন- এমনটা কেউ ভাবেননি। সাফল্য ও দর্শকপ্রিয়তার বিচারে শাকিব খানের ধারে-কাছেও কোনো নায়ককে পাওয়া যাবে না। শাকিব খান অভিনীত প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমা সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘অনন্ত ভালোবাসা’; এটি মুক্তি পায় ১৯৯৯ সালের ২৮ মে। শাকিব খানকে বলা হয়ে থাকে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পাওয়া নায়ক। এমনকি সবচেয়ে বেশি সময় ধরে টানা শীর্ষস্থান ধরে রাখা নায়ক তিনি। শুধু তাই-ই নয়, দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেতাও তিনি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে শাকিব খান কোটি কোটি দর্শকের ভালোবাসা ছাড়াও পেয়েছেন অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা। এর মধ্যে চারটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, তিনটি বাচসাস ও চারটি সিজেএফবি পারফরম্যান্স পুরস্কার রয়েছে। কেউ তাঁকে ‘শীর্ষ নায়ক’, ‘নায়কোত্তম’ ‘সেরা নায়ক’, ‘সুপার স্টার’, কেউবা ‘কিং খান’ এমন অনেক বিশেষণেই বিশেষায়িত করে আসছেন। কিন্তু তাঁর প্রকৃত নাম মাসুদ রানা। চলচ্চিত্রে আসার পরই রানা থেকে হয়ে ওঠেন শাকিব। পরের ইতিহাস জানা সবার। সাফল্য তাঁকে এত উচ্চতায় নিয়ে গেছে যে ভক্তরা নামে নয়, বিশেষণে ডাকতেই আনন্দ পান। তাঁর অভিনীত ছবি ‘শিকারি’, ‘নবাব’, ‘প্রিয়তমা’, ‘রাজকুমার’ ‘গলুই’ কিংবা ‘তুফান’ সহ আরও অনেক ছবি দেশ মাতিয়ে বিদেশের মাটিতেও সাড়া জাগিয়েছে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে শাকিব খান বলেন, শুরুর দিকে সব রকম কাজ করা হতো। তার মধ্যে কিছু ভালো কাজও হতো। কিছু অ্যাভারেজে চলে যেত। আবার ইন্ডাস্ট্রির স্বার্থেও অনেক কাজ করেছি আমি। অনেকে অনুরোধ করতেন তার সিনেমাটি করতেই হবে। সমস্যায় পড়েছেন। আবার হল বাঁচাতেও অনেক সিনেমা করতে হয়েছে। মানুষের ভালোবাসা পেয়েছি ঢের। তবে গুণগত মানের সিনেমা বেছে নেওয়াই ভালো। শাকিব বলেন, দেশ বাড়ছে, কালেকশন বাড়ছে। সান ফ্রান্সিসকো থেকে সিঙ্গাপুর, দুবাই থেকে আমেরিকাসহ অন্য দেশগুলোতেও আমার ছবি হাউসফুল।
আমরা সত্যিই বাংলা ছবিকে অনেক দূর নিয়ে যাব। ২০০৮ সালে চিত্রনায়ক মান্নার মৃত্যুর পর চলচ্চিত্র যেখানে থমকে যাওয়ার উপক্রম সেখানেই হুট করে জ্বলে ওঠেন শাকিব। জ্বলছেন আজও। আজ ঢাকা তো কাল ভারত, মালয়েশিয়া, স্কটল্যান্ড, আমেরিকা, লন্ডন হয়ে অস্ট্রেলিয়া। অপ্রতিরোধ্যতার অগ্রযাত্রায় অপ্রতিদ্বন্দ্বী পথচলা অভিযাত্রীর নাম শাকিব খান। আপনার কাছে সাফল্যের মূলমন্ত্র কি? শাকিবের সাদাসিধে উত্তর- ‘কোনো মূলমন্ত্র নেই। তবে একজন হিরোর সাফল্যের মূলমন্ত্র কিন্তু দর্শকদের ভালোবাসা। নায়ক যদি দর্শকদের চাওয়া-পাওয়ার মূল্য দেয়, তাহলে দর্শকদের কাছে সে গ্রহণযোগ্যতা পায়। সাফল্যও আসে।’
শাকিব খান অভিনীত ছবি মানেই প্রযোজকদের নিশ্চয়তা। শাকিব খান এখন আগাগোড়াই বিপ্রফেশনাল নায়ক। অভিনয়জীবনে তাঁর যা কিছু অর্জন সবকিছুই তিনি কখনো দর্শকের জন্য উৎসর্গ করেছেন, কখনো ছেলে আব্রাম খান জয়কে ও শেহজাদ খান বীর, কখনোবা উৎসর্গ করেছেন মা-বাবাকে, সর্বোপরি দেশকে। ক্যারিয়ারের ২৫ বছর ধরে দেশীয় চলচ্চিত্রের এক অপ্রতিরোধ্য সিনেমাযোদ্ধার নাম শাকিব খান। যিনি বাংলাদেশের গর্ব।