সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার দয়ামীর ইউনিয়নে পঞ্চম ধাপের ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন আবদুল হামিদ। বালাগঞ্জ থানার (ওসমানীনগর উপজেলা আগে বালাগাঞ্জ থানার অংশ ছিল, পরে নতুন উপজেলা হয়েছে) রাজাকারের তালিকায় আবদুল হামিদের অবস্থান ১৫ নম্বরে। পাবনার সাঁথিয়ার কাশিনাথপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে চিহ্নিত রাজাকারের সন্তান মীর মঞ্জুর এলাহীকে। তার পিতা মীর মোহাম্মদ আলী ওরফে ঠাণ্টু মিয়া। এলাকায় ঠাণ্টু রাজাকার হিসেবে পরিচিত। ২৮ মে পঞ্চম ধাপে দেশের ৭৩৩টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন হবে। এ ধাপের আওয়ামী লীগ মনোনীত ৭১৬ প্রার্থীর নাম রবিবার ঘোষণা করা হয়। বাকি ১৭ প্রার্থীর নাম আজকালের মধ্যে আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। ঘোষিত নামের পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে দখলদার পাকিস্তান বাহিনীর সহযোগী রাজাকার ও শান্তিবাহিনী বা রাজাকার পরিবারের সন্তানই নয়, হত্যা মামলার আসামি, প্রবাসী, সবে বিএনপি থেকে যোগদানকারীরাও আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন। এ নিয়ে দলের তৃণমূলে ক্ষোভ বিরাজ করছে। এর আগের কয়েক ধাপেও নৌকা পেয়েছিলেন বেশ কিছু রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধীর সন্তান, জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ও বিএনপি থেকে সদ্য আসা লোকেরা। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। অভিযোগ রয়েছে, মনোনয়ন বাণিজ্যের মাধ্যমে দলের হাইকমান্ডের নির্দেশনা অমান্য করে এসব রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী ও ভিন্নমতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার শিমলবাড়ী ইউনিয়নে পঞ্চম ধাপের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মো. হামিদুল হক। তিনি ইউনিয়ন জামায়াতের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য। স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের অভিযোগ, উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ বিশেষ সুবিধা নিয়ে তার নাম নৌকার জন্য সুপারিশ করে কেন্দ্রে পাঠিয়েছিল। জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন শান্তি কমিটির সদস্য প্রয়াত আজাহারুল ইসলাম তালুকদারের ছেলে আ ন ম শওকত হাবিব লজিক এবং পুনট ইউনিয়নে মনোনয়ন পেয়েছেন আরেক শান্তি কমিটি সদস্যের ছেলে আবদুল কুদ্দুস ফকির। তার পিতা মৃত মোহাম্মদ আলী ফকির। এ দুই রাজাকার পরিবারের সন্তানকে দলীয় মনোনয়ন না দিতে দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ২৩ ফেব্রুয়ারি জয়পুরহাট প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে দাবি জানিয়েছিলেন তৃণমূল আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। মাত্রাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি এনামুল হক ফকির ওই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত অভিযোগে জানান, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় তত্কালীন ক্ষেতলাল থানা শান্তি ও প্রতিরক্ষা কমিটি গঠিত হয়। ৬৪ সদস্যের ওই কমিটির সহসম্পাদক ছিলেন শমসিরা গ্রামের আজাহারুল ইসলাম তালুকদার (মৃত) এবং সদস্য ছিলেন পুনটের মোহাম্মদ আলী ফকির (মৃত)। তাদের সন্তান আ ন ম শওকত হাবিব লজিক মাত্রাই ও আবদুল কুদ্দুস ফকির পুনট ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী। কোনো রাজাকার ও তার সন্তানদের হাতে নৌকা প্রতীক তুলে না দেওয়ার জন্য আহ্বান জানান তিনি। সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার উমরপুরে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন লন্ডনপ্রবাসী গোলাম কিবরিয়া ও বালাগঞ্জের পশ্চিম গৌরিপুর ইউনিয়নে মনোনয়ন পেয়েছেন আমিরুল ইসলাম মধু। তিনিও লন্ডনপ্রবাসী। ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার তুজারপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন কিছুদিন আগে বিএনপি থেকে আওয়ামী লীগে যোগদানকারী সোহরাব ভুইয়া। তিনি উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। নওগাঁর আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ ইউনিয়নে দলীয় প্রার্থী হয়েছেন আক্কাস আলী। তিনি একসময়ের সর্বহারা দলের সদস্য ছিলেন। তার বিরুদ্ধে বিএনপি-জামায়াতের পক্ষ নিয়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের নামে মামলা দিয়ে হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে, সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলার আটটি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মনোনয়নের জন্য ১৫ এপ্রিল তৃণমূলের ভোট অনুষ্ঠিত হয়। কিন্তু জেলার নেতারা ভোট গ্রহণের পর ফলাফল ঘোষণা না করে পরে তালিকাভুক্ত রাজাকারের নাম সুপারিশ করে কেন্দ্রে পাঠান।
সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা কামাল কনা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে বাদ দিয়ে একজন কুখ্যাত রাজাকারকে বঙ্গবন্ধুর নৌকা তুলে দেওয়ায় আমি হতাশ ও ক্ষুব্ধ। এতে দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে চরম অন্যায় করা হয়েছে। আমার বিশ্বাস দলীয় সভাপতির কাছে বিষয়টি গোপন রাখা হয়েছে। নেত্রীর কাছে আমাদের করজোরে অনুরোধ এ সিদ্ধান্ত পাল্টিয়ে দলের ত্যাগী ও মাঠকর্মীকে মনোনয়ন দিন। নীলফামারী জলঢাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আনসারুল আলম সানু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উপজেলা আওয়ামী লীগের কতিপয় নেতা টাকার বিনিময়ে শিমুলবাড়ী ইউনিয়নে জামায়াতের উপদেষ্টাকে নৌকা দিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, নৌকার প্রার্থী হামিদুল হক ও তার আত্মীয়স্বজনও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।
তবে এ অভিযোগ নাকচ করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহীদ হোসেন রুবেল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমরা তৃণমূল ভোটের মাধ্যমে প্রার্থী চূড়ান্ত করেছি। সেখানে কোনো অনিয়ম হয়নি এবং শিমুলবাড়ীর দলের চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হামিদুল হক জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত নন।