শুক্রবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৭ ০০:০০ টা

৯৬ তে অধ্যাপক মোজাফফর

নিজস্ব প্রতিবেদক

৯৬ তে অধ্যাপক মোজাফফর

ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) সভাপতি এবং উপমহাদেশে বাম রাজনীতির পুরোধাদের অন্যতম অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের ৯৬তম জন্মদিন আজ। ১৯২২ সালের ১৪ এপ্রিল কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার এলাহাবাদ গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার এলাহাবাদ গ্রামে তার নিজ বাড়িতে আত্মীয়স্বজন ও ভক্তরা এবং রাজধানীর বারিধারার বাসায় তার স্ত্রী-কন্যাসহ      ঘনিষ্ঠজনরা কেক কেটে আজ জন্মদিন পালন করবেন। এ ছাড়াও ন্যাপ নেতা-কর্মীরা ঢাকায় দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রিয় নেতার জন্মদিন পালন করবেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। প্রবীণ এই রাজনীতিক রাজধানীর বারিধারায় একমাত্র কন্যা এবং স্ত্রী আমিনা আহমদ এমপিকে নিয়ে বাস করছেন। তার পিতা আলহাজ কেয়াম উদ্দিন ভূঞা ছিলেন স্কুল শিক্ষক, মাতার নাম আফজারুন্নেছা। তার স্ত্রী আমিনা আহমদ এমপি বর্তমানে অধ্যাপক  মোজাফফর আহমদের হাতে গড়া রাজনৈতিক দল ন্যাপের হাল ধরেছেন।

অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ হোসেনতলা স্কুল, জাফরগঞ্জ রাজ ইনস্টিটিউশন, দেবিদ্বার রেয়াজউদ্দিন পাইলট উচ্চবিদ্যালয় ও ভিক্টোরিয়া কলেজে লেখাপড়া শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে অনার্সসহ এমএ ডিগ্রি পরে ইউনেস্কোর ডিপ্লোমা অর্জন করেন। বিভিন্ন সরকারি কলেজসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন তিনি। রাজনীতিতে পদার্পণ ১৯৩৭ সালে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিলেন। চাকরি ছেড়ে সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন ১৯৫৪ সালে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে দেবিদ্বার আসনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী মোজাফফর আহমদ মুসলিম লীগের শিক্ষামন্ত্রীকে হারিয়ে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিলে আওয়ামী লীগের বিরোধিতা সত্ত্বেও পূর্ববঙ্গ প্রাদেশিক পরিষদে তিনি আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ১৯৫৮ সালে আইয়ুবের সামরিক শাসন আমলে তার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করা হয় এবং ধরিয়ে দেওয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। তিনি আত্মগোপন অবস্থায় আইয়ুবী শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন সংগঠিত করেন। তিনি আট বছর আত্মগোপনে থাকার পর ১৯৬৬ সালে আবার প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফিরে আসেন। তিনি ১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি অবিভক্ত পাকিস্তান ন্যাপের যুগ্ম সম্পাদকও ছিলেন। ১৯৬৯ এ আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এবং কারাবরণ করেন। তিনি আইয়ুব খান আহৃত রাওয়ালপিণ্ডির গোলটেবিল বৈঠকে পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেন। ১৯৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামে মূল নেতৃত্বের একজন ছিলেন এবং প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি স্বাধীনতার পক্ষে আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। জাতিসংঘে বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ন্যাপ, সিপিবি ও ছাত্র ইউনিয়নের নিজস্ব ১৯ হাজার মুক্তিযোদ্ধা গঠনের ক্ষেত্রে তার ভূমিকা অবিস্মরণীয়। তিনি ১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে ন্যাপ-সিপিবি এবং প্রগতিশীল শক্তির প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের প্রাক্কালে কারারুদ্ধ হন। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ফ্রান্স, কানাডা, সোভিয়েত ইউনিয়ন, বুলগেরিয়া, অস্ট্রিয়া, ভারত, দক্ষিণ ইয়েমেন, লিবিয়া, আফগানিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যসহ পূর্ব ও পশ্চিম ইউরোপের বহু দেশ সফর করেন। অধ্যাপক মোজাফফর সমাজতন্ত্র কী এবং কেন প্রকৃত গণতন্ত্র তথা সমাজতন্ত্র সম্পর্কে জানার কথা মার্ক্সবাদী সমাজতন্ত্র ও কিছু বই ও পুস্তিকা প্রকাশ করেছেন। ঘটনাবহুল বিশ্বব্যবস্থায় তার রাজনৈতিক দর্শন ও দূরদর্শিতা বাস্তবানুগ ও সময়োপযোগী বলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। বর্তমানে তার গবেষণার বিষয় নতুন শতাব্দীতে নতুন সভ্যতা জন্ম নিচ্ছে। তিনি দেশপ্রেমিক কর্মী সৃষ্টির জন্য মদনপুরে উপমহাদেশে একমাত্র শিক্ষায়তন ‘সামাজিক বিজ্ঞান পরিষদ’ প্রতিষ্ঠা করেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর