সোমবার, ১২ মার্চ, ২০১৮ ০০:০০ টা
দুই ইস্যু নিয়ে দুই দল মাঠে

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি নিয়ে জেলায় জেলায় বিএনপি

মাহমুদ আজহার

খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি নিয়ে জেলায় জেলায় বিএনপি

এক মাসেও মুক্তি মেলেনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। তার জামিন প্রশ্নে আজ আদেশ দেবে আদালত। তাই নেতা-কর্মীদের দৃষ্টি আজ হাই কোর্টের দিকে। এরই মধ্যে বেগম জিয়ার মুক্তির দাবি নিয়ে তৃণমূলে যাচ্ছে বিএনপি। কয়েকটি বিভাগীয় শহরে জনসভার দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বৃহত্তর জেলাগুলোতেও যাবে দলটি। খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির পাশাপাশি নেতা-কর্মীদের চাঙ্গা ও একাদশ জাতীয়  সংসদ নির্বাচনে মাঠ নেতাদের বার্তাও দিতে চায় দলটির উচ্চ পর্যায়। তবে তৃণমূলের জনসভায় বিএনপি নেতারা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার দাবিও তুলে ধরছেন। একই সঙ্গে সরকারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগও তুলে ধরা হচ্ছে। আগামী নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপি এ অবস্থান অব্যাহত রাখবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে খুলনায় হাদিস পার্ক রোডে জনসভায় ১৪৪ ধারা জারি করায় শনিবার দলীয় কার্যালয়ের সামনে সেই জনসভা করে বিএনপি। এতে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী যোগ দেন। আজ সোমবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে দলটি। গতকাল রাত সাড়ে ৯টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জনসভার অনুমতি মেলেনি। ১৫ মার্চ চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে জনসভার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। গতকাল পর্যন্ত অনুমতি মেলেনি বলে জানিয়েছেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম। ৩১ মার্চ রাজশাহীতেও শোডাউন করার প্রস্তুতি চলছে। রাজশাহীর আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ, গণকপাড়াসহ তিন স্থানে জনসভা করতে চায় দলটি। সেখানে অনুমতি না পেলে শেষমেশ নগর ভুবন মোহন পার্কে বিএনপির কার্যালয়েই এ কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানা গেছে। সূত্রমতে, পর্যায়ক্রমে রংপুর, বরিশাল, সিলেট, ময়মনসিংহ, ফরিদপুর, কুমিল্লাসহ অন্তত ১৯টি বৃহত্তর জেলায় জনসভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপির উচ্চ পর্যায়। কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি নিয়ে গণজমায়েত থেকে সরকারকে কঠিন বার্তাও দিতে চায় দলটি। গণজোয়ার সৃষ্টি করে সরকারকে চাপে ফেলে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার দাবি আদায়ই বিএনপির লক্ষ্য। দলের নেতারা জানান, তারা এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে চান, যাতে সাজার রায় বাতিল হয় এবং বেগম জিয়াকে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে বাধ্য হয় সরকার।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এখন জেলে। তা-ও আমরা সর্বোচ্চ ধৈর্যের সঙ্গে পরিবর্তিত পরিস্থিতি মোকাবিলা করছি। কোনো সহিংসতা কিংবা উসকানি নয়, শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক কর্মসূচির মাধ্যমেই দেশনেত্রীকে মুক্ত করতে চাই। কিন্তু আমাদের নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দিয়ে সরকারই উসকানি দিচ্ছে। তবে সরকারের কোনো পাতা ফাঁদে পা দেব না। এই মুহূর্তে খালেদা জিয়াকে মুক্তির কথাই আমরা ভাবছি।’

দলের নীতিনির্ধারণী একাধিক সূত্র বলছে, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি চলতেই থাকবে। সহসাই মুক্তি না মিললে এটা নির্বাচনী আন্দোলনেও রূপ নেবে। সেক্ষেত্রে কর্মসূচিতেও পরিবর্তন আসতে পারে। আগস্টের পর রাজপথের কঠোর কর্মসূচি হরতাল-অবরোধ ও ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচিতে যেতে পারে দলটি। এর আগে নেতা-কর্মীদের শক্তি সঞ্চয় করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে জাতীয় নির্বাচনে তফসিলের আগমুহূর্তে সরকারকে বড় ধরনের ‘ধাক্কা’ দিতে চায় বিএনপি।

জানা যায়, আন্তর্জাতিক জনমত পক্ষে রাখারও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। বেগম জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর জাতিসংঘসহ প্রভাবশালী দেশ ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে দলটি। এরই মধ্যে ঢাকায় অবস্থান নেওয়া বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গেও কয়েক দফায় বৈঠক করে বেগম জিয়ার জেল ও মামলা সংক্রান্ত বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। বিএনপি নেতাদের দাবি, কূটনীতিকদের তারা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন, বেগম খালেদা জিয়া রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই আজ জেলে। তবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা কী হবে তা এখনো স্পষ্ট নয় বলে জানা গেছে। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এখন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। গণতন্ত্রের জন্য তিনি সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছেন। তার মুক্তির দাবি জোরালো করতেই বিভাগীয় শহরগুলোতে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে জনসভা করতে চাই। সেখানে আগামী নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি, সরকারের দুঃশাসন, অনিয়ম-দুর্নীতিও তুলে ধরা হবে। এ ছাড়া আমরা পরিবর্তিত পরিস্থিতি নিয়ে ঢাকায় অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদেরও অবহিত করছি।’ বিএনপি নেতারা জানান, এই মুহূর্তে বিএনপির প্রধান চ্যালেঞ্জ হচ্ছে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা। তাকে সঙ্গে নিয়েই একাদশ নির্বাচনে অংশ নিতে চায় বিএনপি।  কিন্তু সরকার বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে অপতৎপরতা চালাচ্ছে। কিন্তু এবার সেটা সহজ হবে না। যে কোনো পরিস্থিতিতেই বিএনপি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। সরকারকে আর ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না বলেও জানান নেতারা। ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাজাহান বলেন, একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনে বাধ্য করা হবে। একটি নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতেই হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর