সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

জিকা ভাইরাস নিয়ে সতর্কতা

জিকা ভাইরাস নিয়ে সতর্কতা

সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে জিকা ভাইরাস আক্রান্ত বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি ও ভারতীয় নাগরিক শনাক্ত হয়েছে। ফলে এশিয়ায় নতুন করে এ ভাইরাস নিয়ে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহর সঙ্গে কথা বলে এ ভাইরাসের আদি-অন্ত লিখেছেন—শামছুল হক রাসেল

 

গত বছরের শেষের দিকে ব্রাজিলে আতঙ্ক হিসেবে আবির্ভাব ঘটে জিকা ভাইরাসের। সেই সময় আমেরিকাজুড়ে অন্তত ২৫টি দেশে ভাইরাসটি স্থানীয়ভাবে সংক্রমিত হয়। দেশগুলো হচ্ছে— বার্বাডোজ, বলিভিয়া, ব্রাজিল, কেপ ভেরদে, কলম্বিয়া, ডোমিনিকান রিপাবলিক, ইকুয়েডর, এল সালভাদর, ফ্রেঞ্চ গুয়ানা, গুয়াদেলুপ, গুয়েতেমালা, গুইয়ানা, হাইতি, হন্ডুরাস, মেক্সিকো, পানামা, মারতিনিক, প্যারাগুয়ে, পুয়ের্তো রিকো, সেন্ট মার্টিন, সুরিনাম, সামোয়া, দ্য ইউএস ভার্জিন আইল্যান্ডস ও ভেনেজুয়েলা। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট সিডিসি এ তথ্য জানায়। সম্প্রতি সিঙ্গাপুরে বেশ কয়েকজন বাংলাদেশি ও ভারতীয় নাগরিকের শরীরে এ ভাইরাস শনাক্ত হয়। ফলে আমেরিকার পর এশিয়ায় এ নিয়ে অনেকটাই উৎকণ্ঠা দেখা দেয়।

জিকা ভাইরাসের ধরন : ইয়েলো ফিভার, ওয়েস্ট নাইল, চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু যে গোত্রের সদস্য, জিকা ভাইরাসও একই গোত্রের অন্তর্ভুক্ত একটি ফ্লাভিভাইরাস। তবে উপরোক্ত ভাইরাসের কয়েকটি টিকা বা চিকিৎসা থাকলেও জিকার কোনো টিকা বা চিকিৎসা নেই।  এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হয়নি। জিকা যে কারণে বিশ্বের মনোযোগ টেনেছে তা হলো মাইক্রোসেফালি (একটি নিউরোলজিক্যাল ডিসঅর্ডার]) ও ভাইরাসটির মধ্যে যোগসূত্র। মাইক্রোসেফালির কারণে সদ্যোজাত শিশুদের মস্তিষ্ক স্বাভাবিক আকারের চেয়ে ছোট হয়। এর কারণে শিশুদের মাঝে বিকাশজনিত সমস্যা দেখা দেয় এবং কখনো কখনো মৃত্যুও হতে পারে।

 

যেভাবে ভাইরাসটি ছড়ায় : এডিস মশার মাধ্যমে এটি ছড়ায়। ভাইরাসটির সংক্রমণ ঘটেছে এমন কোনো রোগীকে এডিস মশা কামড়ানোর মধ্য দিয়ে এর স্থানান্তর হয়। পরে ওই মশাটি অন্য ব্যক্তিকে কামড় দিলে তা ছড়াতে থাকে। এরপর ওই ব্যক্তির মাধ্যমেই ভাইরাসটির বিস্তার ঘটতে থাকে। এই সময়ের মধ্যে সংক্রামিত ব্যক্তিদের শরীরে ভাইরাসটির উপসর্গ দেখা যায়।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ভাইরাসটির উপসর্গ হালকা (মাইল্ড) ধরনের হয়ে থাকে যেমন— জ্বর, প্রায়ই মাথাব্যথা, দেহে বিভিন্ন র্যাশ এবং চোখ

গোলাপি রং ধারণ করার সম্ভাবনা রয়েছে।

গর্ভবতীদের আতঙ্ক : জিকায় আক্রান্ত হলে সবারই কমবেশি নানা ধরনের শারীরিক ক্ষতি হয়ে থাকে। তবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয় গর্ভবতী ও তার গর্ভের সন্তানের। কোনো গর্ভবতী জিকা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে তার শিশু মারাত্মক জটিলতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। শিশুটির মাথা থাকে স্বাভাবিকের চেয়ে ছোট। এতে শিশুটি বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী হওয়াসহ প্রাণহানিও ঘটতে পারে।  দক্ষিণ আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশে গত বছরের শেষের দিকে নারীদের গর্ভধারণ থেকে বিরত থাকতে বলে দেশগুলোর সরকার। জানা গেছে, উগান্ডার জিকা বনাঞ্চলে ১৯৪৭ সালে বানরের মধ্যে এ ভাইরাসটি প্রথম আবিষ্কৃত হয়। ১৯৫৪ সালে নাইজেরিয়ায় প্রথম মানবদেহে জিকার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এরপর ভাইরাসটির তেমন বিস্তার না থাকায় বিজ্ঞানীরা এটি নিয়ে তেমন উৎসাহ দেখাননি। ২০০৭ সালের দিকে ইয়াপ দ্বীপে বেশ কয়েকজন এ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বিজ্ঞানীরা আবার নড়েচড়ে বসেন। ২০১৫ সালের মে মাসে প্রথম ব্রাজিলে ধরা পড়ে জিকার সংক্রমণ। আর চলতি বছরের প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশের মানুষের মধ্যে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। লক্ষণীয় বিষয় হলো আক্রান্তদের সবাই দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিল ও এর আশপাশের দেশগুলোয় যাতায়াত করেছিলেন।  জিকা ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত হলে তার কোনো চিকিৎসা নেই, এখন পর্যন্ত এর কোনো প্রতিষেধকও তৈরি হয়নি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন গর্ভবতী মহিলারা। কারণ এ ভাইরাসের কারণে গর্ভের শিশু বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীসহ বিভিন্ন জটিলতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করতে পারে। এমনকি গর্ভের শিশুর প্রাণহানিও ঘটতে পারে। যেহেতু এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিষেধক নেই তাই এ রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রতিকার নয়, প্রতিরোধ সর্বদা উত্তম। কারণ প্রাথমিক অবস্থায় এসব বিষয়ে সতর্ক হলে ভবিষ্যতে কোনো জটিলতা হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। তাই বাড়াতে হবে সতর্কতা ও সচেতনতা।

সর্বশেষ খবর