২১ নভেম্বর, ২০১৫ ১০:৫২

রসুল (সা.)-এর শৈশব ও যৌবনকাল

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

রসুল (সা.)-এর শৈশব ও যৌবনকাল

মানুষের কল্যাণকামী ব্যক্তিদের বিভিন্ন শ্রেণি রয়েছে। তন্মধ্যে সর্বোত্তম ও সর্বাধিক উন্নতমানের কল্যাণকামী লোক হচ্ছেন আল্লাহর প্রেরিত নবী রসুলরা। মানবতার মুক্তির দূত, নবীকুল শিরোমণি, রাহমাতুল্লিল আলামিন হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের মধ্যে সর্বোচ্চ আসনে সমাসীন। মহানবী (সা.)-এর জীবনাদর্শ কালোত্তীর্ণ শাশ্বত এবং সর্বোত্তম। সমাজ, বাস্তবতা, পারিবারিক জীবনযাপন পদ্ধতি, সামাজিক সম্পর্ক, অর্থনৈতিক লেনদেন, রাষ্ট্রীয় কর্মকাণ্ড সব ক্ষেত্রেই নবী (সা.)-এর পদচারণা ছিল অনুকরণীয়। তাই মহানবী (সা.) হচ্ছেন বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারী। তার জীবনের প্রতিটি পর্যায় মানবতার জন্য আলোকবর্তিকা। জন্ম থেকে শিশুকাল, বালক থেকে যুবক জীবনের যে কোনো মঞ্জিলে তিনি ছিলেন আদর্শের ধারক। শুধু নবুয়তি জীবনই নয়, নবুয়তপূর্ব জীবনে রসুল (সা.)-এর আদর্শের যে নমুনা স্থাপন করেছেন তা পৃথিবীর অনাদিকালের মানুষের জন্য, সত্যাশ্রয়ী হৃদয়ের জন্য অদ্বিতীয় আলোর উৎস হয়ে থাকবে চিরকাল। রসুল (সা.)-এর জন্মের আগে এমন কিছু ঘটনা প্রকাশ পেয়েছিল যা দ্বারা বিশ্ববাসী বুঝতে পেল যে, পৃথিবীতে এমন এক মহামানব আবিভর্‚ত হতে যাচ্ছেন, যিনি হবেন অনুপম চরিত্র মাধুর্যের অধিকারী ও আলোর দিশারী। যেমন মা আমিনা (রা.) বলেছেন, যখন তিনি জন্মগ্রহণ করেন তখন দেহ থেকে একটি নূর বের হলো। সেই নূর দ্বারা শাম দেশের মহল উজ্জ্বল হয়ে গেল। আর রাহিকুল মাখতুম (বাংলা) পৃষ্ঠা ৭১-এ এসেছে কেসরার রাজপ্রাসাদের চৌদ্দটি পিলার ধসে পড়েছিল। অগ্নি উপাসকদের অগ্নিকুণ্ড নিভে গিয়েছিল। বহিরার গির্জা ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। মা হালিমা (রা.) বলেন, আমি শিশু মুহাম্মদ (সা.)-কে আমার ঘরে আনার পর সব অভাব মোচন হয়ে যায়। তাকে আনার পর আমার উভয় স্তন দুধে পূর্ণ হয়ে গেল। উটনীর স্তনগুলো দুধে ভরে গেল। আমাদের গাধা (বাহন)টি দ্রুতগতিসম্পন্ন হয়ে গেল।

বকরিগুলো চারণভূমি থেকে ভরা পেটে ও ভরা স্তনে ফিরে আসত। এভাবেই শিশু মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহিমা এক এক করে প্রকাশ হতে থাকল। (ইবনে হিশাম, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৬২) শিশু নবী (সা.) যখন হালিমার স্তন্য পান করতেন, তখন মাত্র একটি স্তন্যই পান করতেন। অপর স্তনটি তার দুধভাই হালিমার আপন শিশুপুত্রের জন্য রেখে দিতেন। অবুঝ শিশুর অধিকার প্রদানের এমন কাহিনী পৃথিবীতে বিরল। শিশু মুহাম্মদ প্রথম কথা শুরু করেছিল এ বাক্যটি দিয়ে, আল্লাহু আকবার কাবিরা ওয়া ছুবহানাল্লাহু কাছিরা। অর্থাৎ আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ বড়, আর সর্বাধিক পবিত্রতা আল্লাহর জন্য। রসুল (সা.) শৈশব থেকেই অত্যন্ত লাজুক ছিলেন। তার লজ্জাশীলতা সম্পর্কে একটি ঘটনা, হজরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, কাবাঘর নির্মাণের সময় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং হযরত আব্বাস (রা.) পাথর ভাঙছিলেন। আব্বাস (রা.) রসুল (সা.)-কে বললেন, তহবন্দ খুলে কাঁধে বাঁধো, ধুুলাবালি থেকে রক্ষা পাবে। তহবন্দ খোলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন এবং আকাশের দিকে তাকালেন ও হুঁশ হারিয়ে ফেললেন। খানিক পরেই হুঁশ ফিরে এলে বললেন, আমার তহবন্দ। এরপর তাকে তহবন্দ পরিয়ে দেওয়া হয়। সাদ বংশের লোকেরা সে যুগে বিশুদ্ধ প্রাঞ্জল আরবি ভাষায় কথাবার্তা বলার জন্য বিখ্যাত ছিল। সদৃশ্য অদৃশ্য শক্তির ইঙ্গিতে শিশু মুহাম্মদের লালন-পালনের ভার গিয়ে পড়ল এ মার্জিত রুচি ও উন্নতমনা সাদ বংশের ওপরে। যার কারণে হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শিশুকাল থেকেই কথাবার্তায় মিষ্ট ও লালিত্যপূর্ণ ভাষা ব্যবহার করতেন। শিশুকালেই আরবের লোকেরা তার মাধ্যমে কল্যাণ লাভ করত। আরবে দুর্ভিক্ষ চলছিল অনাবৃষ্টির কারণে। কোরায়েশরা বৃষ্টির জন্য দোয়া করতে আবু তালিবের কাছে আবেদন জানাল। আবু তালিব একটি বালক সঙ্গে নিয়ে বের হলেন এবং কাবার ঘরের সামনে গিয়ে দোয়া দিলেন। বালক তার হাতে আঙ্গুল রাখলে সঙ্গে সঙ্গে আকাশে মেঘ এলো ও মুষলধারে বৃষ্টি হলো। সজীব উর্বর হয়ে গেল জমিন। আর সেই শিশুই ছিল শিশু মুহাম্মদ (সা.)। শৈশব থেকেই রসুলুল্লাহ ছিলেন পরম সত্যবাদী।  তিনি কখনো সত্য থেকে বিচ্যুত হননি।  তিনি ছিলেন সবার চেয়ে অধিক ব্যক্তিত্বসম্পন্ন উন্নত চরিত্রের অধিকারী।  সম্মানিত প্রতিবেশী, অধিক সত্যবাদী, সর্বাধিক পবিত্র পরিচ্ছন্ন মনের অধিকারী।

লেখক : বিশিষ্ট মোফাচ্ছেরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব।

[email protected]

সর্বশেষ খবর