নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলায় বেশ কয়েকটি ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে। এর মধ্যে ভিমের পান্টি অন্যতম। এ ছাড়াও রয়েছে জগদল বিহার, আলতাদীঘি, মাহিসন্তোষ, শালবন বিহার। জানা যায়, নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার একেবারে পূর্বপ্রান্তে জয়পুরহাট জেলার সীমানাঘেঁষে জাহানপুর ইউনিয়নের মুকুন্দপুর-হরগৌরী এলাকায় একটি মাঝারি (বেড় ১৭০ মিটার এবং উচ্চতা ১০ মিটার) আকারের ঢিবি ও ১৪টি বিভিন্ন আকারের পুকুর রয়েছে। এর মধ্যে একটি পুকুর অমৃতকুণ্ড ও অপরটি কোদাল ধোয়া নামে পরিচিত। এগুলোর মধ্যে পুকুরের পশ্চিমপাড়ে অবস্থিত একটি ঢিবিতে কী রয়েছে তা আজও জানা সম্ভব হয়নি। তবে এর সর্বত্র ইটপাটকেল ও খোলামকুচির ছড়াছড়িসহ কোথাও কোথাও কাদায় গাঁথা ইটের গাঁথুনির পলেস্তরাবিহীন চিহ্ন দেখা যায়। জানা যায়, প্রায় দেড়শ থেকে ২০০ বছর আগে বীরেশ্বর-ব্রহ্মচারী নামে এক সাধক এ ঢিবিতে একটি কালো পাথর উত্কীর্ণ মাঝারি আকারের মূর্তি পেয়েছিলেন। তাই তিনি ওই ঢিবির ওপর ছোট আকারের চারটি মন্দির নির্মাণ করে ওই মূর্তিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ওই সময় ঢিবির ওপর উত্তর-পশ্চিম কোণে ২.৩৯ মিটার ও ৯১ সেন্টিমিটার পরিসরের এক কোঠাবিশিষ্ট একটি পূর্বমুখী স্থাপনা ছিল। ১৯৭৮ সালে ওই ঢিবি থেকে একটি চোকলাতলা কালো পাথরের উমা মহেশ্বর মূর্তি উদ্ধার করে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার জাদুঘরে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। ওই ঢিবির দক্ষিণে ৫৮ সেন্টিমিটার দূরত্বে উত্তর-দক্ষিণে লম্বা অনুরূপ আরও একটি ভাঙা দেয়াল ছিল। সেই দেয়ালের উচ্চতা ১.২২ মিটার। এগুলোকেই বীরেশ্বর ব্রহ্মচারী স্মৃতি বিজড়িত নিদর্শন হিসেবে গণ্য করা যায়। বর্তমানে এগুলোর নিদর্শন নিশ্চিহ্ন করে সেখানে নতুন মন্দির নির্মাণ করা হয়েছে। ঢিবির পাদদেশ থেকে দক্ষিণ দিকে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি শুরু। দূরে একটি উঁচু পাড়ওয়ালা পুকুরও রয়েছে। তবে এ প্রত্নস্থলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন হলো একটি একক খণ্ড কালো পাথরের থাম। যার নাম বিমের পান্টি। যা ঢিবিটি থেকে মাত্র ৮১ মিটার দক্ষিণে ফসলি জমির মাঝে সামান্য হেলে সম্পূর্ণ অরক্ষিতভাবে দাঁড়িয়ে আছে। স্থানীয়দের কাছে এটি বিমের পান্টি আবার কেউ কেউ কৈবর্ত রাজা বিমের লাঠি বলে থাকে। দেখতে অনেকটা প্রলম্বিত মোচার মতো। এ থামের গা অত্যন্ত মসৃণ। পাদমূলে এর বেড় ১.৮০ মিটার বর্তমান উচ্চতা ৩.৭৯ মিটার। অতিতে এর ওপর একটি বিষ্ণুর বাহন অর্ধনর ও অর্ধপাখির মূর্তি বসানো ছিল।
কিন্তু বজ পাতের আঘাতে সেটি নিশ্চিহ্ন হওয়াসহ থামের মূল অংশের একটি ফালি ধসে গেছে। তবে অক্ষত থাকা অংশের ৫৬.৭ সেন্টিমিটার ও ৪৯.৩ সেন্টিমিটার পরিমাপের একটি চতুষ্কোণাকার উপরের অংশে আজও ২৮ পঙিক্তর একটি সংস্কৃত ভাষ্য উত্কীর্ণ রয়েছে। এ থামটি বরেন্দ্র-মগধের পাল রাজা নারায়ণ পালের মন্ত্রী ভটুগুরুভ (৮৯৬-৯৫০) সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এতে ওই রাজবংশসহ মিশ্র বংশপঞ্জি বর্ণিত রয়েছে। এটি দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসে।