সোমবার, ২৮ নভেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

সবুজ পোশাক শিল্পে শীর্ষে বাংলাদেশ

পিছিয়ে দাপুটে দেশগুলো

রুহুল আমিন রাসেল

সবুজ পোশাক শিল্পে শীর্ষে বাংলাদেশ

সবুজ পোশাক কারখানার তালিকায় নারায়ণগঞ্জের প্লামি ফ্যাশন এখন বিশ্বে দ্বিতীয় —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সবুজ পোশাক শিল্পে দাপুটে অর্থনীতির দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি, আয়ারল্যান্ড ও ভিয়েতনামকে পেছনে ফেলে শীর্ষে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। এ শিল্পে বাংলাদেশ বিশ্বে এখন নাম্বার ওয়ান। এমনকি বিশ্বের শীর্ষ ১০টি পরিবেশবান্ধব তৈরি পোশাক পণ্য উৎপাদনকারী কারখানাসমূহের মধ্যে ৫টিই বাংলাদেশে স্থাপিত।

এখানেই শেষ নয়, যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলে (ইউএসজিবিসি) নিবন্ধিত ১৯৫টি বাংলাদেশি সবুজ পোশাক কারখানার মধ্যে ৩৬টি লিড সনদ পেয়েছে। প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ইউএসজিবিসিতে নিবন্ধিত আরও ১৫৯টি বাংলাদেশি সবুজ পোশাক কারখানা লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ড ডিজাইন (লিড) সনদ পাওয়ার অপেক্ষায় আছে। আর যে ৩৬টি কারখানা এই সনদ পেয়েছে, তার মধ্যে ৯৭ পয়েন্ট পেয়ে বিশ্বের নাম্বার ওয়ান পোশাক কারখানার স্বীকৃতি অর্জন করেছে রেমি হোল্ডিংস লিমিটেড। ৯২ পয়েন্ট পেয়ে প্লামি ফ্যাশন লিমিটেড দ্বিতীয়, ৯০ পয়েন্ট পেয়ে ভিনট্যাগ ডেনিম স্টুডিও লিমিটেড চতুর্থ, ৮৫ পয়েন্ট পেলে এসকিউ সেলসিস-২ সপ্তম এবং ৮১ পয়েন্ট পেয়ে জেনেসিস ফ্যাশনস লিমিটেড দশম স্থানে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি ও প্লামি ফ্যাশন লিমিটেডের কর্ণধার ফজলুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশ সবুজ পোশাক কারখানা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিশ্বে চ্যাম্পিয়ন। শুধু তাই নয়, আমাদের দেশে যে পরিমাণে সবুজ কারখানা আছে, বিশ্বের আর কোনো দেশে তা নেই। আর দেশের উদ্যোক্তারা যে হারে সবুজ কারখানা স্থাপনের দিকে ঝুঁকছেন, তাতে আগামী কয়েক বছরে বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে অনন্য নজির স্থাপন করবে। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ঊর্ধ্বতন সহসভাপতি ফারুক হাসান বলেন, আমরা সবুজ কারখানা স্থাপনে এগিয়ে যাচ্ছি। কারখানার বর্জ্য ও কেমিক্যাল ব্যবস্থাপনায় আমরা নজর দিয়েছি। তবে ভালো কারখানার জন্য নিরাপত্তার পাশাপাশি ক্রেতাদের কাছ থেকে ভালো দামও প্রয়োজন। এটা পাওয়া গেলে শ্রমিকরাও ভালো বেতন পাবেন। তাতে শ্রমিক-মালিক সবাই খুশি হবেন। তার মতে, আর্থিক প্রযুক্তি ও কারিগরি দক্ষতা ও অভিজ্ঞতার সমন্বয় ঘটলে সবুজ শিল্পের নীরব বিপ্লব ঘটাবে বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলোর মতে, নানা প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবিলা করেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশের প্রধান রফতানিখাত পোশাকশিল্প। তবে প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে এ অবস্থান মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়। কারণ বাংলাদেশের মূল প্রতিযোগী দেশগুলো উচ্চ প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে। এই অবস্থায় অবস্থান ধরে রাখতে বাংলাদেশকে বর্তমানের চেয়ে বেশি হারে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হবে। এ জন্য পোশাক খাতের উৎপাদনশীলতা বাড়িয়ে বাজার ও পণ্যে বহুমুখীকরণের ওপর নজর দেওয়ার পরামর্শ রয়েছে ব্যবসায়ীদের। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সম্প্রতি প্রকাশিত ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পরিসংখ্যান-২০১৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পোশাক রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পরই বাংলাদেশ। চীন এখনো বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। বিশ্ববাজারে চীনের শেয়ার ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ। অন্যদিকে ২৮টি দেশের প্রতিনিধিত্বকারী ইইউ দ্বিতীয় শীর্ষ রপ্তানিকারক দেশ। যার বিশ্ববাজারে হিস্যা ২৬ দশমিক ২ শতাংশ। তবে ইইউর ২৮টি দেশকে আলাদা করলে অবশ্য এই তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান চীনের পরই বা দ্বিতীয় স্থানে। অন্য দেশগুলোর মধ্যে ভিয়েতনামের পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ শতাংশ, আর বিশ্ববাজারে দেশটির হিস্যা ৪ শতাংশ। ভারতের বিশ্ববাজারে অবস্থান গত বছরের চেয়ে বেড়েছে একেবারেই কম। শীর্ষ ১০ রপ্তানিকারক দেশগুলোর মধ্যে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ভিয়েতনাম, পঞ্চম ভারত, ষষ্ঠ তুরস্ক, অষ্টম ইন্দোনেশিয়া, নবম যুক্তরাষ্ট্র এবং দশম স্থানে রয়েছে কম্বোডিয়া ও পাকিস্তান। প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে বিশ্ব রপ্তানি বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের হিস্যা ছিল ৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। ২০১০ সালে তা ২৫ শতাংশ বেড়ে হয় সাড়ে ৪ শতাংশ। এর ফলে ২০০৯ সালের পঞ্চম অবস্থান থেকে ২০১০ সালে বাংলাদেশ উঠে আসে তৃতীয় স্থানে। আর ২০১৪ সালে বাংলাদেশের পোশাক খাতের বার্ষিক রপ্তানি আয় হয়েছে দুই হাজার ৫০০ কোটি ডলার। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের বার্ষিক রপ্তানি হয়েছে দুই হাজার ৩৫০ কোটি ডলার, ২০১২ সালে ছিল এক হাজার ৯৯৪ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর