নতুন করে সারা দেশে আরও ১৭৭ থানার সেবা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর বলছে, গতকাল বেলা ৩টা পর্যন্ত ৫৩৮টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন মেট্রোপলিটনের ১১০টি থানার মধ্যে ৮৪টি এবং জেলার ৫২৯টি থানার মধ্যে ৪৫৪টি থানার কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
এর আগে গত শুক্রবার পর্যন্ত ৩৬১টি থানায় পুলিশের কার্যক্রম শুরু হয়। এই থানাগুলোর নিরাপত্তায় সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) জানিয়েছে, রাজধানী ঢাকার ২৯টি থানাসহ দেশজুড়ে ৪১৭টি থানায় ইতোমধ্যে সেনা মোতায়েন করা হয়েছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ ও প্রাণহানি হয়। শেষ তিন দিন (শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে-পরে) থানা, ফাঁড়িসহ পুলিশের বেশ কিছু স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার দেশত্যাগের পর সারা দেশে পুলিশি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ সদস্যরা থানায় আসতে সাহস পাননি। স্থাপনা পাহারা দেওয়ার জন্য আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়।
পুলিশের নতুন মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম গত বুধবার সব পুলিশ সদস্যকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেন। পরদিন তিনি পুলিশ সদস্যদের কর্মস্থলে যোগদানের ক্ষেত্রে আপামর জনসাধারণকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।
প্রতিটি থানায় নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি : থানার কার্যক্রম পুনরুদ্ধার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রতিটি থানা এলাকায় নাগরিক নিরাপত্তা কমিটি গঠনের জন্য নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর। সব জেলা পুলিশ সুপার ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) এ নতুন নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা কমিটির আকার নির্ধারণ করবেন। গতকাল পুলিশ সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
এতে বলা হয়, কমিটির প্রধান লক্ষ্য হবে আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারে জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো। এ লক্ষ্যে কমিটি একটি অ্যাকশন প্ল্যান প্রস্তুতপূর্বক মনিটরিং ও মূল্যায়নের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করবে। কমিটির আওতাধীন এলাকার আইনশৃঙ্খলা পুনঃস্থাপনের লক্ষ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও কমিটির সদস্যদের সমন্বয়ে যৌথ টহল প্রদানের মাধ্যমে হানাহানি, চুরি, ডাকাতি ও ছিনতাই প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এলাকায় বিদ্যমান সামাজিক সংঘাত যথা বাড়িঘর ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি নিরসনে নিবিড় ব্যক্তিগত যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা নেবে। স্থানীয় জনসাধারণের জীবন, সম্পদ, স্থাপনা, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উপাসনালয়সহ এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা নিয়মিত তদারকি করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এলাকার মাদক, ইভ টিজিং ইত্যাদি সমস্যা নিরসনে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া, স্থানীয় বিভিন্ন ধর্মীয় রাজনৈতিক দলসমূহ ও দল-উপদলের মধ্যে বিরাজমান উত্তেজনা নিরসন ও সম্প্রীতি স্থাপনের লক্ষ্যে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।
স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা কমিটির আকার নির্ধারণ করবেন। গ্রহণযোগ্য আইনজীবী/বিচারক, অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা, সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা, সিনিয়র সিটিজেন, সর্বজন সমাদৃত স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা, স্থানীয় জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনের সভাপতি/সেক্রেটারি, স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি, মানবাধিকারকর্মী, নারী অধিকারকর্মী এবং এনজিও প্রতিনিধি কমিটির সদস্য হবেন।
কমিটি পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তা বিঘ্নকারীদের বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলা : কেউ যেন কোনো প্রকারের উসকানি দিয়ে পরিবেশ ঘোলাটে করতে না পারে সেজন্য জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং পুলিশ সদস্যদের আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের ক্ষেত্রে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানসহ অন্যান্য কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিজিবির নিরাপত্তা : বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবির নিরাপত্তায় সীমান্তবর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ ভোলাহাট থানার কার্যক্রম চালু হয়েছে। গতকাল সকালে রহনপুর ব্যাটালিয়ন ৫৯ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল গোলাম কিবরিয়া উপস্থিত হয়ে থানার কার্যক্রম চালু করেন। ভোলাহাট থানা সীমান্ত থেকে মাত্র ১৫০ গজ দূরে হওয়ায় বিজিবির তত্ত্বাবধানেই পরিচালিত হবে এর কার্যক্রম।
নৌবাহিনী নিরাপত্তায় কুতুবদিয়া থানা : নৌবাহিনী নিরাপত্তায় কুতুবদিয়া থানার কার্যক্রম শুরু করেছে পুলিশ। গতকাল থেকে থানার স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। কুতুবদিয়া থানায় নৌবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন, কুতুবদিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম কবির। তিনি বলেন, নৌবাহিনীর সহযোগিতায় তারা স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করেছেন। বর্তমানে পুলিশের ২০ জন কর্মকর্তা যোগদান করেছে। বাকিরাও চলে আসতেছে বলে জানান তিনি।
মাদারীপুরে থানায় ডিউটিতে ফিরেছে পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। শুক্রবার বিকালের পর জেলার ৫টি থানায় তাদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। এর আগে বুধবার থেকে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির ঘোষণা দেন সদস্যরা।
বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় সীমিত আকারে চালু হলো ঝিনাইদহের মহেশপুর থানার কার্যক্রম। গতকাল সকালে খালিশপুর ৫৮ বিজিবির পক্ষ থেকে থানায় গিয়ে সব পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তাসহ কার্যক্রমে সহযোগিতার আশ্বাস দেওয়া হয়। সে সময় ৫৮ বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল শাহ মো. আজিমুস শহীদ, উপপরিচালক মেজর মোল্লা ওবায়েদুর রহমান, সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম খান, মহেশপুর থানার ওসি মাহাব্বুর রহমানসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সেনা ও নৌবাহিনীর সহায়তায় খুলনা নগরীর খুলনা সদর, সোনাডাঙ্গা ও দৌলতপুর থানায় দৈনন্দিন কার্যক্রম শুরু করেছে পুলিশ। থানার আইনগত সহায়তা নিতে কেউ আসলে সমাধান করা হচ্ছে। থানাগুলোতে পুলিশ সদস্যদের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে মোটিভেশনে কাজ করছে সেনা ও নৌবাহিনী কর্মকর্তারা। পর্যায়ক্রমে নগরীর খালিশপুর, খানজাহান আলী, লবণচরা, হরিণটানা ও আড়ংঘাটা থানায় পুলিশের নিয়মিত কাজ শুরু হবে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেন। গত শুক্রবার বিকাল থেকে বগুড়া জেলার ১২টি থানায় স্বল্প পরিসরে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। প্রতিটি থানায় নিরাপত্তা জোরদার করতে সেনাবাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। এখনো থানা পুলিশ সড়কে টহল দেওয়া থেকে বিরত রয়েছেন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের ১৬ থানার মধ্যে ১৫টি থানা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জায়গা সংকটের কারণে শুধু চালু করা যাচ্ছে না পতেঙ্গা থানা। সিএমপির বাকলিয়া থানার ওসি আফতাব হোসেন বলেন, আমরা থানা কার্যক্রম শুরু করেছি। পুলিশের মাঝে এখন আর কোনো আতঙ্ক নেই। আমরা মানুষকে সেবা দেওয়ায় প্রস্তুত আছি। থানা পুলিশের সব ফোর্স আসছে, সবাই হাজির। তবে এখন পর্যন্ত কেউ কোনো অভিযোগ মামলার জন্য আসেনি।
সিলেটের বিশ্বনাথ থানা এখনো পুলিশশূন্য। ফেরেননি আত্মগোপনে চলে যাওয়া পুলিশ সদস্যরা। ৫ দিন বন্ধ রয়েছে থানা পুলিশের সব কার্যক্রম। ফলে এখনো স্বাভাবিক হয়নি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। স্বস্তি ফিরছে না জনমনে। এ অবস্থায় ‘অরক্ষিত’ থানা কমপ্লেক্সের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছেন সেনাবাহিনী ও আনসার সদস্যরা।