জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন জানিয়েছে, বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং পরবর্তী সময়ে সরকার পতনের পর সহিংসতায় সারা দেশে ৩২ শিশুসহ ৬৫০ জন নিহত হয়েছেন। গতকাল সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় মানবাধিকার কমিশনের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
এ সময় মানবাধিকার কমিশনার ভলকার তুর্ক বলেন, বাংলাদেশের পালাবদল মানবাধিকার ও আইনের শাসনের ওপর ভিত্তি করে অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে এক ঐতিহাসিক সুযোগ এনে দিয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য জবাবদিহিতা এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করাই এখন মূল কাজ। পরিস্থিতি উত্তরণে জাতীয় পর্যায়ে উদ্যোগ নিতে হবে। এ প্রক্রিয়ার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও বিস্তৃত পরিসরে তদন্তের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৬ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত ৪০০ জন এবং ৫ থেকে ৬ আগস্টের মধ্যে আরও ২৫০ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে বিক্ষোভকারী, শিশু, পথচারী, সাংবাদিক এবং নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও রয়েছেন। এ তথ্য সংগ্রহে বাংলাদেশের গণমাধ্যম এবং আন্দোলনকারীদের মুভমেন্টকে উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে গত জুনের মাঝামাঝি সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। জুলাইয়ে বিক্ষোভ দমনে সহিংসতা ও নিরাপত্তা বাহিনী গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে। আন্দোলনে সহিংসতায় অন্তত ৩২ শিশুসহ কয়েক শ মানুষ নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হাজারো মানুষ আহত হয়েছে। প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, নিরাপত্তা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত শক্তি ব্যবহার করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও আটক, গুম, নির্যাতন ও অসদাচরণ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশে কঠোর বিধিনিষেধের মতো গুরুতর অভিযোগ। এতে আরও বলা হয়, বিগত সরকার শক্তি প্রয়োগ করে আন্দোলনকারীদের দমন করার চেষ্টা করে গেছে।
জাতিসংঘ বলছে, আওয়ামী লীগ সরকার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নির্বিচারে বল প্রয়োগে রাবার বুলেট, সাউন্ড গ্রেনেড এবং প্রাণঘাতী গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সার্বিক শান্তিপূর্ণ পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বেশ কিছু পরামর্শও দিয়েছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার তুর্ক। যেখানে মোট ২১টি পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ও ফৌজদারি ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক অভিযোগের সমাধানের জন্য উন্মুক্ত সংলাপের ব্যবস্থা করা। যার অন্যতম লক্ষ্য হবে বাংলাদেশের সব মানুষের স্বার্থে কাজ করা।
