একের পর এক রদবদল হচ্ছে প্রসাশনের গুরুত্বপূর্ণ পদে। সচিব থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পরিবর্তন নিয়ে আসছে অন্তর্বর্তী সরকার। ছুটির মধ্যেও কাজ থেমে নেই। গতকাল নিয়োগ ও পদায়ন সংক্রান্ত একাধিক প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
প্রজ্ঞাপনে জানা গেছে, অবসরে যাওয়া পাঁচজন অতিরিক্ত সচিবকে সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। তারা বিসিএস ৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা। এ ছাড়া কয়েকজন সচিবের দপ্তর বদল এবং সচিবসহ ঊর্র্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চুক্তি নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে অবসরে যাওয়া অতিরিক্ত সচিবদের চুক্তিতে ড. শেখ আবদুর রশিদকে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব, মো. এহছানুল হককে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব, ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনকে জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, ড. নাসিমুল গণিকে রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের জনবিভাগের সচিব এবং এম এ আকমল হোসেন আজাদকে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অতিরিক্ত সচিব থেকে তারা অবসরে যান। তাদের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে যোগদানের তারিখ থেকে দুই বছরের জন্য চুক্তিতে এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর প্রশাসনে কয়েকদিনে ব্যাপক রদবদল আনা হয়েছে। সূত্র মতে, আওয়ামী লীগপন্থি হিসেবে পরিচিতি কর্মকর্তাদের সরিয়ে সেখানে তুলনামূলক নিরপেক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হচ্ছে। গত ১৪ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে ১১ জন সচিবের নিয়োগ বাতিল করা হয়। ওই দিন বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলমকে।
তিন দিন পরই সড়ানো হলো স্বরাষ্ট্রের জননিরাপত্তা সচিবকে : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব নিয়োগ দেওয়ার তিন দিন পরই মো. মোকাব্বির হোসেনকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষা সচিবকেও সরানো হয়। এর মধ্যে জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোকাব্বির হোসেনকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হিসেবে বদলি করা হয়েছে। গত ১৪ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব নিয়োগ পান বাংলাদেশ জ্বালানি ও বিদ্যুৎ গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) মো. মোকাব্বির হোসেন। অন্যদিকে, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব সোলেমান খানকে পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) করা হয়েছে। তবে শিক্ষা বিভাগে কোনো নতুন সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এদিকে, প্রধান উপদেষ্টার প্রটোকল অফিসার-২ হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে শেখ শফিকুল ইসলামকে।
সচিবসহ শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমির ডিজির চুক্তি বাতিল : রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের জনবিভাগের সচিব মো. ওয়াহিদুল ইসলাম খানের অবশিষ্ট চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। এ ছাড়া স্মার্ট বাংলাদেশের টাস্কফোর্সের নির্বাহী কমিটির প্রধান পরামর্শক মো. মুস্তাফিজুর রহমানের চুক্তির বাকি মেয়াদ বাতিল করা হয়। মুস্তাফিজুর রহমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ছিলেন। এ ছাড়া বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক পদের চুক্তি বাতিল করা হয়েছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. মো. হারুন-উর-রশিদ আসকারী, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক মিনার মনসুর, কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার এবং ভারতের কলকাতার বাংলাদেশ উপহাইকমিশন প্রেস উইংয়ের প্রথম সচিব (প্রেস) রঞ্জন সেনের অবশিষ্ট চুক্তির মেয়াদ বাতিল করা হয়েছে। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের চুক্তি বাতিল করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে মাহবুব মোর্শেদকে। এ ছাড়া বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল নিউইউর্কের দ্বিতীয় সচিব আসিব উদ্দিন আহমেদের চুক্তিও বাতিল করা হয়েছে।