দিন-রাতে সমানতালে চলছে ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) ৫ শতাধিক ছাত্রছাত্রী ও বিভিন্ন পেশাজীবী নিরলসভাবে কাজ করছেন ত্রাণ সংগ্রহ আর প্যাকেজিংয়ে। রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসছেন মানুষ। বন্যাদুর্গত মানুষের জন্য বাড়িয়ে দিচ্ছেন সহযোগিতার হাত। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট, স্যালাইন, ওষুধ থেকে শুরু করে চিড়া-মুড়ি, শুকনা খাবার, কাপড়, পানি- যে যা পারছেন তা দিয়েই করছেন সহযোগিতা। বিতরণের সুবিধার্থে শিশু, পুরুষ ও নারীদের জন্য আলাদা আলাদা করে কাপড়-চোপড় স্তূপ করে রাখা হচ্ছে। টিএসসির সামনে একটি বুথে সংগ্রহ করা হচ্ছে নগদ অর্থ। কিছুক্ষণ পরপরই ত্রাণ নিয়ে বন্যাদুর্গত এলাকায় ছুটছে ট্রাক-পিকআপ ভ্যান। গতকাল বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে গিয়ে দেখা যায় সেখানে চলছে ত্রাণের মহাযজ্ঞ। স্বেচ্ছাসেবীরা জানিয়েছেন গত বৃহস্পতিবার থেকে ত্রাণ সংগ্রহের যে কার্যক্রম শুরু হয়েছে তা চলবে বন্যা শেষ না হওয়া পর্যন্ত। দেখা গেছে, টিএসসির প্রধান গেটে কয়েকটি টেবিল বসিয়ে অস্থায়ী বুথ তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ১০-১২ জনের স্বেচ্ছাসেবক ব্যস্ত হাতে ত্রাণগুলোর তালিকা এবং প্রতিষ্ঠানের নাম লিপিবদ্ধ করছেন। ত্রাণ বুথে লিপিবদ্ধ হওয়ার পর সেটি স্বেচ্ছাসেবকদের হাত ঘুরে টিএসসির ভিতরে যাচ্ছে। সেখানে চলছে প্যাকেজিং কার্যক্রম। টিএসসির ক্যাফেটেরিয়া ভরে ত্রাণগুলো রাখা হচ্ছে টিএসসির বারান্দায়। টিএসসির ভিতরে ক্যাফেটেরিয়াতেও প্যাকেজিং চলছে। ব্যস্ত কার্যক্রম দেখা গেছে ইনডোর গেমস রুমেও। বন্যার্ত মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য গতকাল টানা তৃতীয় দিনের মতো টিএসসিতে গণত্রাণ সংগ্রহ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গতকাল সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় এ ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রম। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। কেউ ব্যক্তিগত গাড়িতে, কেউ ভ্যানে করে, কেউ ছোট ট্রাকে করে ত্রাণ নিয়ে আসতে থাকেন। বুথে থাকা শিক্ষার্থীরা দাতার নাম ও পণ্যের বিবরণ লিখে রাখছিলেন খাতায়। বেলা গড়াতে টিএসসিতে ত্রাণ দিতে আসা মানুষের ঢল নামে। জানা গেছে, নগদ অর্থের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শুক্রবার যে পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী টিএসসিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কাছে তুলে দিয়েছেন, তা বহন করতে প্রায় ৫০টি ট্রাক লেগেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও সহ-সমন্বয়করা পুরো ত্রাণ সংগ্রহ কার্যক্রম তদারকি করছেন। গতকাল গণত্রাণ কর্মসূচির তৃতীয় দিনে শুধু বুথ থেকেই মোট ১ কোটি ৮৬ লাখ ৪৮ হাজার টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্রছাত্রী ও পেশাজীবীরা অংশ নেন ত্রাণ সংগ্রহ সহায়তা কার্যক্রমে। হাজারীবাগ গার্লস কলেজের ছাত্রী সুমাইয়া আকতার জানান, ত্রাণ সংগ্রহের বড় কার্যক্রমের খবর পেয়ে সহযোগিতা করতে কয়েক বান্ধবী মিলে এখানে এসেছি। বন্যাদুর্গতদের জন্য কিছুটা হলেও নিজেকে নিয়োজিত করতে পারছি।
হাতিরঝিল থেকে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করতে এসেছেন শরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, গত দুই দিন ধরে ত্রাণ প্যাকেজিংয়ের কাজ করছি। সকাল থেকে রাত অবধি এ কার্যক্রম চলছে বলে জানান তিনি।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ গতকাল ফেসবুক লাইভে জানান, দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম চলছে। এর পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণত্রাণ সংগ্রহ চলবে। এতে মানুষ অভূতপূর্ব সাড়া দিচ্ছেন। এ কার্যক্রমকে জাতীয় ঐক্যের প্রতীক উল্লেখ করে তিনি বলেন, দল-মত নির্বিশেষে সবাই অংশগ্রহণ করছেন। এ টাকা খরচের পর সংগৃহীত টাকার হিসাব দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।