শেখ হাসিনাসহ সাবেক স্পিকার, মন্ত্রী-এমপি এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে রংপুরে স্বর্ণশ্রমিক মুসলিম উদ্দিন মিলন নিহতে সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতদের নামে হত্যা মামলা হয়। এ ছাড়া রাজশাহীতে শেখ হাসিনা ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের নামে দুটি, সিলেটে তিন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর নামে দুটি, রাজবাড়ীতে মন্ত্রীর ছেলেসহ ৭৪ জনের বিরুদ্ধে দুটি ও সিরাজগঞ্জে ১৫ পুলিশ হত্যায় আওয়ামী লীগ নেতাসহ ৬ হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এদিকে, নড়াইলে সাবেক এমপি বি এম কবিরুল হক মুক্তিসহ ৯৮ জনের বিরুদ্ধে একটি, টাঙ্গাইলের সখীপুরে সাবেক এমপি অনুপম শাহজাহান জয়সহ ১৬৭ জনের বিরুদ্ধে একটি, গাজীপুরে সাবেক মন্ত্রী মোজাম্মেল হকসহ ৫৭ জনের বিরুদ্ধে একটি এবং চট্টগ্রামে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, সাবেক এমপি নদভীসহ ২০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য-
রংপুর : ছাত্র আন্দোলন চলাকালে স্বর্ণশ্রমিক মুসলিম উদ্দিন মিলন নিহতের ঘটনায় সাবেক স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, বিভাগীয় কমিশনার, ডিসি, এসপি, আওয়ামী লীগ নেতাসহ ১৭ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত কয়েক০জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। গতকাল দুপুরে মিলনের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার বাদী হয়ে রংপুর কোতোয়ালি মেট্রো থানার কগনিজেন্স ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন। মামলার অন্য উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- রংপুর বিভাগীয় কমিশনার জাকির হোসেন, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আবদুল বাতেন, মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান, সাবেক জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবাশ্বের হাসান, পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান।
রাজশাহী : রাজশাহীর বাঘা থানায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বিরুদ্ধে দুটি মামলা হয়েছে। মামলায় ৩৪৫ জনকে আসামি করা হয়। সোমবার রাতে জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক বাঘা উপজেলার গড়গড়ি ইউনিয়ের বামনডাঙ্গা গ্রামের সালাউদ্দিন আহম্মেদ শামীম সরকার এবং ছাত্রদলকর্মী ও পাকুড়িয়া ইউনিয়নের কিশোরপুর গ্রামের জাহিদ হাসান বাদী হয়ে মামলা দুটি করেন।
সিলেট : সিলেটের আদালতে আরও দুটি মামলা হয়েছে। একটি হত্যা ও অপরটি দ্রুত বিচার আইনের মামলায় দুই মন্ত্রী ও এক প্রতিমন্ত্রী আসামি হয়েছেন। মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ, জেলা পুলিশের স্পেশাল ব্র্যাঞ্চের প্রধান ইমাম উদ্দিন সাদেক ও গোয়াইনঘাট থানার সাবেক ওসি রফিকুল ইসলাম। এ ছাড়া মামলায় কয়েকজন বিজিবি সদস্যকে আসামি করা হয়েছে।
অপরদিকে, আরেক মামলায় সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী, সিলেট সিটির সাবেক মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক এমপি হাবিবুর রহমান হাবিবসহ ৪১ জনের নাম রয়েছে। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ২৫০-৩০০ জনকে।
রাজবাড়ী : সাবেক রেলপথমন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. জিল্লুল হাকিমের ছেলে মিতুল হাকিমসহ ৭৪ জনকে আসামি করে রাজবাড়ীতে দুটি মামলা হয়েছে। মামলার অন্য উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- পাংশা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. জালাল উদ্দীন বিশ্বাস, জেলা পরিষদের সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান গোবিন্দ কুন্ডু প্রমুখ। অন্যদিকে পাংশা পৌরসভার সাবেক মেয়র আবদুল্লাহ আল মাসুদ বিশ্বাস, হাবাসপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ন কবির শাকিল, সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জালাল বিশ্বাসসহ ১৭ জনকে আসামি করে আরেকটি মামলা হয়েছে।
সিরাজগঞ্জ : জেলার এনায়েতপুর থানায় ১৫ পুলিশ সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা ও থানায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলায় এনায়েতপুর থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি আহমদ মোস্তফা খান বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী, শাহজাদপুর উপজেলার খুকনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুল্লুক চাঁন, বেলকুচি উপজেলার ভাঙ্গবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জহুরুল ইসলাম ভূঁইয়ার নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত পাঁচ থেকে ৬ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে।
নড়াইল : সাবেক এমপি বি এম কবিরুল হক মুক্তি, কালিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান খান শামীম রহমান ওরফে ওসি খানসহ ৯৮ জনের নামে নড়াগাতি থানায় মামলা হয়েছে।
সখীপুর (টাঙ্গাইল) : সখীপুর-বাসাইল আসনের এমপি অনুপম শাহজাহান জয়, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ সাঈদ আজাদ, সাবেক পৌর মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু হানিফ আজাদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত শিকদারসহ ১৬৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ১৫০ জনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেছে পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক মোর্শেদুল ইসলাম অন্তর।
গাজীপুর : সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকসহ ৫৭ জনের নামে মামলা হয়েছে। মামলায় উল্লেখযোগ্য অন্য আসামিরা হলেন- গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ খান, গাজীপুর সিটির সাবেক মেয়র মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম, কোনাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান মাস্টার ও সাধারণ সম্পাদক খলিলুর রহমান।
চট্টগ্রাম : সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামসহ ২০২ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- সাবেক এমপি আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভী, তার স্ত্রী রিজিয়া রেজা চৌধুরী, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান, সাতকানিয়ার মেয়র মোহাম্মদ জোবায়ের, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়ার ভাই ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া, সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরীসহ অজ্ঞাতনামা ৩০০-৫০০ জন।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে আরও চার হত্যা মামলা : আদালত প্রতিবেদক জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় সংঘটিত হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে আরও চারটি হত্যা মামলা হয়েছে। রাজধানীর ডেমরার সানারপাড়ে মিরাজ হোসেন, মোহাম্মদপুরের বসিলায় বুড়িগঙ্গা ফিলিং স্টেশনের মেশিন অপারেটর মনসুর মিয়া এবং মিরপুরে নাহিদুল ও যাত্রাবাড়ীতে দুলালকে গুলি চালিয়ে হত্যার অভিযোগে এসব মামলা হয়। মামলাগুলো এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এসব মামলায় শেখ হাসিনাসহ আসামি ২০৪ জন।
ছাত্র আন্দোলন চলাকালে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় দুলাল ওরফে সেলিম নামে এক যুবককে গুলিতে হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক এমপি শামীম ওসমানসহ ৪৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গতকাল ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাদ্দাম হোসেনের আদালতে এ মামলার আবেদন করেন নিহতের বড় ভাই মোস্তফা কামাল।
মামলার অন্য উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক এমপি রমেশ চন্দ্র সেন ও মশিউর রহমান মোল্লা সজল, ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান।
এদিকে ডেমরার সানারপাড়ে মিরাজ হোসেন নামে একজনকে হত্যার ঘটনায় আদালতে শেখ হাসিনাসহ ৯২ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বেলাল হোসেনের আদালতে এ মামলাটি করেন খোরশেদ আলম মিয়া নামে এক ব্যক্তি।
এ মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া উল্লেখ্যযোগ্য আসামিরা হলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ ও ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার প্রমুখ।
একই দিনে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালতে ২২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন মোহাম্মদপুরের বসিলায় নিহত মনসুর মিয়ার ভাই আয়নাল। মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া উল্লেখ্যযোগ্য আসামিরা হলেন- সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদ, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক এমপি সাদেক খান, সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমান, সাবেক ডিবিপ্রধান হারুন অর রশীদ, ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার প্রমুখ।
এ ছাড়া ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসানের আদালতে শেখ হাসিনাসহ ৪১ জনকে আসামি করে আরও একটি মামলা হয়েছে। রাজধানীর মিরপুরে নাহিদুল ইসলাম নিহতের ঘটনায় তার ভাই সবুজ এ হত্যা মামলাটি করেন।
মামলায় শেখ হাসিনা ছাড়া উল্লেখ্যযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ডিএসসিসির সাবেক মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ প্রমুখ।