ইসরায়েলের অব্যাহত হামলায় মধ্যপ্রাচ্যের দেশ লেবাননে বাংলাদেশি নারী কর্মীরা বড় বিপদে আছেন। যুদ্ধাবস্থার কারণে লেবানন থেকে বিশ্বের যে কোনো গন্তব্যে বিমান চলাচল বন্ধ রয়েছে। ইরান সমর্থিত হিজবুল্লাহ অধ্যুষিত লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলে প্রতি মুহূর্তে হামলা চলছে। রাজধানী বৈরুতেও অনেক এলাকা একাধিকবার আক্রান্ত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে সামর্থ্যবান লেবানিজরা ঘরবাড়ি ফেলে অন্যত্র চলে যাচ্ছেন। তাদের বাংলাদেশি গৃহকর্মীরা বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছেন।
করোনা সংক্রমণের পরই লেবাননে চরম অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়। তখন প্রায় দেড় লাখ বাংলাদেশি কর্মী ছিলেন সেখানে। আর্থিক দুরবস্থার কারণে অনেকেই দেশে ফিরে আসেন। বর্তমানে লেবাননে অবস্থানরত প্রায় ৮০ হাজার বাংলাদেশির অধিকাংশই নারী কর্মী। তাদের বড় অংশের বৈধ কাগজপত্র নেই। অন্যদিকে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের নিয়োগকর্তারা অনেকেই বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে গেছেন। তাদের গৃহকর্মীরা পড়েছেন বিপদে। শত শত প্রবাসী যেসব এলাকা নিরাপদ রয়েছে সেখানকার বাংলাদেশি কমিউনিটির আশ্রয়ে আছেন। অনেকের কাজকর্ম নেই। টাকা নেই। তারা দ্রুত দেশে ফিরে যেতে চান। স্থানীয় সূত্রগুলো জানান, তিন সপ্তাহ ধরে ইসরায়েলি হামলার কারণে বৈরুতের বাংলাদেশি দূতাবাসের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তারা অন্য কোনো স্থান থেকে অনলাইন কার্যক্রম চালু রেখেছেন। বৈরুতে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রবাসীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করছি। কার কী প্রয়োজন জানার চেষ্টা করছি এবং তা সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছি।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের ২ হাজারের বেশি প্রবাসী সরকারি বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন। যারা খাবারের সমস্যায় আছেন, তাদের সহযোগিতা করছি। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে আমরা অনলাইন সেবা চালু রেখেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রবাসীদের মধ্যে প্রায় ১ হাজার দেশে ফিরতে চেয়ে দূতাবাসে যোগাযোগ করেছেন। তবে যাদের কাগজপত্র নেই, তাদের বিষয়টি বেশ জটিল এবং সময়সাপেক্ষ।’ লেবাননের সিনিয়র সাংবাদিক বাবু সাহা গত রাতে মুঠোফোনে বলেন, ‘রাজধানী বৈরুতে আমরা এখনো নিরাপদে আছি। তবে ভবিষ্যতের কথা বলতে পারব না।’ তিনি বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলের প্রবাসীদের অনেকের কাজ নেই, টাকা নেই। তারা বড় বিপদে আছে। তারা অমানবিক জীবনযাপন করছে। তাদের সহায়তা দরকার। বাংলাদেশ সরকার যদি কার্গো বিমানে করে প্রবাসীদের জন্য খাবার পাঠাতে পারে সেটা অনেক বড় সহায়তা হবে এ মুহূর্তে। যুদ্ধ যদি দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে এখন যেসব বাংলাদেশি অন্যদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে তারাও সহায়তার জন্য হাত পাততে বাধ্য হবে।’
এদিকে বিপদগ্রস্ত বাংলাদেশিদের বিকল্প পথে দেশে ফেরাতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। লেবাননজুড়ে ইসরায়েলি হামলা দিনদিন বাড়ছে। বৈরুতের দক্ষিণাঞ্চলে গতকালও তীব্র বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এমন নাজুক পরিস্থিতিতে দেশটিতে অবস্থানরত বাংলাদেশি কর্মীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। গত রবিবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিনের সভাপতিত্বে লেবাননে থাকা বাংলাদেশি কর্মীদের ফেরাতে করণীয় নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন লেবানন, তুরস্ক ও ওমানের রাষ্ট্রদূত এবং সৌদি আরবের জেদ্দার কনসাল জেনারেল।
বৈঠকে লেবাননে থাকা বাংলাদেশিদের জাহাজে করে সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়া যায় কি না তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তুরস্কের রাষ্ট্রদূত বৈঠকে জানান, লেবানন থেকে ইস্তাম্বুলে জাহাজ যায়। আন্তর্জাতিক অভিবাসী সংস্থা-আইওএমের সহযোগিতা পেলে লেবানন থেকে বাংলাদেশিদের সরাসরি জাহাজে করে ইস্তাম্বুলে নেওয়া যেতে পারে। সেখান থেকে বিমানে ঢাকায়। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই লেবাননের সঙ্গে বিমান ছাড়া অন্যান্য যোগাযোগ বেশ জটিল। বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাসসূত্রে জানা গেছে, হাজারখানেক বাংলাদেশি দেশে ফিরে আসতে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। দূতাবাসের হটলাইন, হেল্পলাইন ছাড়াও লেবাননে থাকা বাংলাদেশি কমিউনিটির মাধ্যমে এসব বাংলাদেশি দেশে ফেরার আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। লেবাননের পরিস্থিতি যত খারাপ হতে থাকবে, দেশে আসতে চাওয়া বাংলাদেশির সংখ্যা তত বাড়তে থাকবে বলে ধারণা করছেন দূতাবাসসংশ্লিষ্টরা। লেবানন থেকে বাংলাদেশিদের দেশে ফেরানো নিয়ে আইওএমের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ। খুব শিগগিরই তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের বৈঠক হতে পারে।