ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক দিয়ে রাজধানীর প্রবেশ মুখে জনসাধারণকে তীব্র যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। প্রতিদিনই ঢাকায় ঢুকতে সাইন বোর্ড, শনিরআখড়া, যাত্রাবাড়ী, পোস্তগোলা ও দোলাইপাড়ে যানজটে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, ভাঙাচোরা সড়কের পাশাপাশি ট্রাফিক পুলিশের অবহেলা, বাসে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানোসহ যানজটের কয়েকটি কারণ। সরেজমিন দেখা গেছে, প্রতিদিনই মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার থেকে গুলিস্থানে নামার পথের যানজট দুই থেকে ছয় কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। এই যানজটের কারণ হিসেবে জানা যায়, ফ্লাইওভার ব্যবহারকারী যাত্রীবাহী বাসগুলো গুলিস্থানে নেমে ইউটার্ন নেয়। অথচ আগে সেখান দিয়ে ইউটার্ন নিতে দিতেন না ট্রাফিক পুলিশের সদস্যরা। এই গাড়িগুলো গুলিস্থান জিরো পয়েন্ট হয়ে বঙ্গভবনের সামনে দিয়ে যাতায়ত করত। এ ছাড়া গুলিস্থান কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল মসজিদের সামনে অনেকগুলো পরিবহনের কাউন্টার রয়েছে। প্রতিটি কাউন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে বাসগুলো। ফলে ফ্লাইওভার থেকে ইউটার্ন নেওয়া বাসগুলো সামনে যেতে পারে না। এতে তৈরি হয় যানজট। এ ছাড়া ফ্লাইওভারের নিচের সড়ক ও ফুটপাথগুলো দখল করে হকাররা দোকান বসিয়ে রাখে। এতে বাসগুলো ঘোরাতে কিংবা গাড়ি যাতায়াতে খুবই সমস্যা হয়। ফলে ওপরে অর্থাৎ ফ্লাইওভারের ওপরে তীব্র যানজট তৈরি হয়।
হানিফ ফ্লাইওভারে সায়েদাবাদ এক্সিট পয়েন্টে থাকে তীব্র যানজট : চট্টগ্রাম-কুমিল্লা থেকে আসা অনেক যাত্রীবাহী বাস হানিফ ফ্লাইওভার ব্যবহার করে সায়েদাবাদ টার্মিনালে নামেন। এখানেই যানজটে পড়েন। এর মধ্যে টার্মিনালে ভিতরে বাস ঢুকতে সমস্যা হয়। হযবরল অবস্থায় থাকে টার্মিনালের ভিতরে থাকা বাসগুলো। একই সঙ্গে কমলাপুরগামী সড়ক ভাঙাচোরা থাকায় সব সময় যানজট থাকে। এর প্রভাব পড়ে ফ্লাইওভারে। ফ্লাইওভার থেকে সায়েদাবাদমুখী ইউটার্নে অনেক গাড়ি যত্রতত্র দাঁড়িয়ে থাকে। এতে গুলিস্থানমুখী লেন বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাবে যানজট তৈরি হয় ফ্লাইওভারে।
চানখাঁরপুল মুখে যানজট : হানিফ ফ্লাইওভার থেকে আনন্দবাজার ও চানখাঁরপুলে তীব্র যানজটের মুখে পড়েন যাত্রীরা। ফ্লাইওভার থেকে নেমে পরিবহনগুলো চানখাঁরপুল হয়ে পলাশী-নিউমার্কেট দিকে যায়। কিন্তু অনেক পরিবহন আনন্দবাজারে ইউটার্ন নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যায়। এখানে সিগন্যাল পড়লে অনেকগুলো পরিবহন দাঁড়িয়ে থাকায় যানজট তৈরি হয়। একই সঙ্গে চানখাঁরপুলে নাজিমদ্দিন রোড ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দোয়েল চত্বর সড়কে ইউটার্ন নিতে যানজট তৈরি হয়। ওই স্থানে গাড়িগুলো যারা ডানে যাবে তারা ইন্ডিকেটর দিয়ে গাড়ি থামিয়ে রাখে যতক্ষণ না ইন্টার সেকশনটি চালু হচ্ছে। ফলে পেছনের গাড়ি যারা সোজা যাবে এরা যানজটে বসে থাকে।
কাজলা বাস স্টপে যানজট : এই বাস স্টপে আন্তজেলা বাস ও গণপরিবহনগুলোয় যাত্রী ওঠানামা করে। বিশেষ করে ঢাকায় চলাচল করা লোকাল বাসগুলো অনেক সময় ধরে দাঁড়িয়ে যাত্রী তোলে। এতে পেছনে বাস, ট্রাকসহ অন্যান্য পরিবহন আটকে থাকে। ফলে যানজট তৈরি হয়। এ ছাড়া ফ্লাইওভারের নিচের সড়কটি ভাঙাচোরার কারণে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মোটরসাইকেল, ব্যাটারি ও প্যাডেলচালিত রিকশা, লেগুনাসহ গণপরিবহনগুলো ধীরগতিতে চলাচল করে। এই যানজটে কাজলা হয়ে মূল সড়কে এর প্রভাব পড়ে। ফলে শনির আখড়া হয়ে সাইন বোর্ড পর্যন্ত যানজট বিস্তৃত হয়। আর ভোগান্তিতে পড়েন ঢাকামুখী যাত্রীরা।
চানখাঁরপুলে কথা হয় সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শরিফুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, রায়েরবাগে আমার বাসা। প্রতিদিনই রায়েরবাগ থেকে সুপ্রিম কোর্টে আসা-যাওয়া করে থাকি। কিন্তু সড়কের তীব্র যানজটের কারণে আমার অনেক কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। আমাকে নির্দিষ্ট সময় কোর্টে আসতে হলে কমপক্ষে তিন ঘণ্টা সময় হাতে নিয়ে বের হতে হয়। অথচ ৮ কিলোমিটার যেতে সর্বোচ্চ ২০ মিনিট লাগার কথা। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, চানখাঁরপুল, আনন্দবাজার, গুলিস্থান, সায়েদাবাদ ও কাজলা এলাকায় সিগন্যাল না মানা, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা, ডানে যাওয়ার গাড়ি বামে দাঁড়িয়ে থাকে। এসব কারণে সড়কটিতে সব সময় যানজট লেগেই থাকে।