মুগদা, কমলাপুর থেকে যাত্রাবাড়ী মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে পৌঁছাতে পড়তে হচ্ছে ভয়াবহ যানজটে। এ দুর্ভোগ এখন নিত্যসঙ্গী। ১০ থেকে ২০ মিনিট লাগার কথা থাকলেও ২ থেকে আড়াই ঘণ্টা লাগছে। অন্যদিকে ফ্লাইওভারের ওপর বিভিন্ন স্পটে বাস থামিয়ে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো-নামানো তীব্র করছে পরিস্থিতি। আবার ফ্লাইওভার কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও পুলিশের অবহেলায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ পথে চলাচলকারী যাত্রীদের। এ ফ্লাইওভারে ওঠানামার রাস্তা, টোল প্লাজা ঘুরে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
ভুক্তভোগী যাত্রীরা জানান, টোল প্লাজায় ধীরগতিতে টোল আদায়ের কারণে যানবাহনের লম্বা লাইন সৃষ্টি হচ্ছে। একদিকে যানবাহনের এ লাইন কমলাপুর পেরিয়ে চলে যাচ্ছে। আবার টোল দেওয়ার পরও সামনে এগোতেই গুলিস্তান পয়েন্টে যানজটে আটকে যাচ্ছে। সব মিলে মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান পার হতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যয় হচ্ছে।
পুলিশের স্বল্পতাকেও দায়ী করছেন অনেকে। আবার মেট্রোরেল এবং আন্ডারপাস নির্মাণের কারণেও যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
ব্যাংক এশিয়ায় কর্মরত জেনিত তুহিন প্রতিদিন যাতায়াত করেন এ রাস্তা দিয়ে। তিনি বলেন, ‘আসলে এখন কমপক্ষে ২০টি এলাকার জন্য একটি রাস্তা ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষ করে গোপীবাগের রাস্তাটা। স্কুলগামী ও অফিসগামী যাত্রীরা রয়েছে। আর যানজটের সবচেয়ে বড় কারণ ট্রাফিক পুলিশের স্বল্পতা। কেমন একটা গা ছাড়াভাবে দায়িত্ব পালন করছে পুলিশ।’ তিনি আরও বলেন, ‘কিছুদিন আগেও যখন ছাত্ররা ছিল সে সময় এত খারাপ পরিস্থিতি ছিল না। নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে ২০ জন ছাত্র দায়িত্ব পালন করেছেন আন্তরিকভাবে।’ হানিফ ফ্লাইওভার নির্মাণ ও ফ্লাইওভারটি পরিচালনা করছে ওরিয়ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার কোম্পানি। সরেজমিনে দেখা গেছে, ফ্লাইওভারটির ওপরেই যত্রতত্র ও বেপরোয়াভাবে বাস থামিয়ে চালকরা যাত্রী ওঠানো-নামানোর কাজ করছেন। এ ফ্লাইওভার দিয়ে এক প্রকার ফ্রিস্টাইলে চলাচল করে বাসগুলো। সন্ধ্যার পর থেকে সায়েদাবাদ অংশে এক প্রকার স্টপেজ বানিয়ে যাত্রী ওঠানোর কাজ করে দূরপাল্লার বাসগুলো। আর সারা দিন লোকাল বাসগুলো যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো-নামানোর কাজ করে ফ্লাইওভারের রাজধানী মার্কেট, সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী পয়েন্টে। ফ্লাইওভারটির দায়িত্বে থাকা শ্রমিকরাও যাত্রী ওঠানো-নামানোয় চালকদের সহযোগিতা করেন। এজন্য তারা বাস চালক-হেলপারদের কাছ থেকে ১০-২০ টাকা করে নেন। ফ্লাইওভারের গুলিস্তান টোল প্লাজার বহির্গমন অংশের মুখেই লোকাল বাসের স্টপেজ। ফ্লাইওভার থেকে নেমে বাসগুলো ইউটার্ন নেয় টোল প্লাজার সামনে থেকেই। ফলে এ অংশে ফ্লাইওভার থেকে নামতে যাত্রীদের দীর্ঘ যানজটে পড়তে হয়। অধিকাংশ সময়ই গুলিস্তান-মতিঝিলের যাত্রীরা বাস থেকে নেমে হাঁটা শুরু করেন ফ্লাইওভারের জয়কালী মন্দিরবরাবর আসার পরই। ফলে দুর্ভোগে পড়তে হয় তাদের। এ ছাড়া এ ফ্লাইওভারের শনিরআখড়া অংশের প্রবেশপথেও যাত্রীদের যানজটে পড়তে হয়। বিশেষ করে সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এবং বিকাল ৫টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত এ যানজট ছাড়িয়ে যায় ৩ থেকে ৪ কিলোমিটার পর্যন্ত (রায়েরবাগ, মাতুয়াইল মেডিকেল পর্যন্ত)। এদিকে পদ্মা সেতুতে যানবাহন চলাচল শুরু হওয়ার পর থেকে রাতে চাপ বেড়েছে ফ্লাইওভারের ধোলাইপাড় অংশেও। প্রায় প্রতিদিনই সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত টোল প্লাজায় তীব্র যানজট দেখা যায় এ অংশে। ২০১৩ সালের অক্টোবরে চালু হয় ফ্লাইওভারটি সংশ্লিষ্ট এলাকায় যানজট নিরসনের জন্য। তবে যানজট নিরসনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না এ প্রকল্পটি। ফ্লাইওভারের ঢাকা মেডিকেল প্রান্তের অবস্থা আরও করুণ। দীর্ঘ যানজট এখানে লেগেই থাকে। পথচারীরা বলেন, ঢাকা মেডিকেলের সামনে ফ্লাইওভারের গাড়িগুলো আটকে রেখে পুলিশ পুরান ঢাকার গাড়িগুলোকে বেশি গুরুত্ব দেয়। অধিক সময় আটকে রাখে ফ্লাইওভারের গাড়িগুলো। এতে ফ্লাইওভারের ওপর ভয়াবহ যানজট সৃষ্টি হয়। যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তানে আসা আইনজীবী ইফতি মাহমুদ বলেন, ‘লোকাল বাসগুলো এলোপাতাড়িভাবে ঘুরতে গিয়ে যানজটের সৃষ্টি করে। ফলে ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে পড়তে হয় বিপদে। বসে থাকতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। আমি মনে করি, কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। অনেক বছর থেকেই এ সমস্যা চলমান, আর কত? আর কত দুর্ভোগ পোহালে কর্তৃপক্ষ সঠিক ব্যবস্থাপনায় মন দেবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রায়ই এ ফ্লাইওভারে দুর্ঘটনা ঘটে। মানুষ মারা যাচ্ছে নির্মাণত্রুটির কারণে। যদি তাই হয় এর জন্য কারা দায়ী? তাদের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? পৃথিবীর কোথাও ফ্লাইওভারের মাঝপথে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানো-নামানো করতে দেখিনি। অথচ এখানে স্বেচ্ছাচারিতায় চলছে বাসগুলো।’